নারায়ণগঞ্জ  সোমবার | ২০শে মে, ২০২৪ | ৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ গ্রীষ্মকাল | ১১ই জিলকদ, ১৪৪৫

শিরোনাম
  |   রূপগঞ্জে  নির্বাচনী এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন  চেয়ারম্যান প্রার্থী হাবিব   |   মিথ্যা সংবাদের প্রতিবাদে নাসিক প্যানেল মেয়র বাবুর সংবাদ সম্মেলন   |   রূপগঞ্জে হত্যাসহ ১৮ মামলার আসামির তান্ডবে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী   |   বন্দরে জাপা নেতা সুমন প্রধানের বিরোদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ   |   জমিদারতন্ত্র কায়েম করতে আ’লীগ আমি-ডামির নির্বাচন করেছে – জোনায়েদ সাকি   |   বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন নারায়ণগঞ্জ জেলার ৮ম কমিটি গঠন   |   ফিলিস্তিনের মুক্তির লড়াইয়ে সংহতি জানিয়ে ছাত্র ফেডারেশন উদ্বোধন   |   বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন নারায়ণগঞ্জ জেলার ৮ম সম্মেলন ১৭ মে   |   ১৭ মে এন পি সি’র যুগপূর্তিতে আলোকচিত্রের ক্রমবিকাশ নিয়ে আলোচনা   |   উপজেলা পরিষদ নির্বাচনআদালতকে হয়রানী করায় সেলিম প্রধানকে জরিমানা   |   বাবুরাইল খেলার মাঠ দখলে তদন্ত করে ব্যাবস্থাগ্রহনের নির্দেশ দিলেন পুলিশ সুপার   |   ১৭ মে গুলশান সিনেপ্লেক্সে মুক্তি পাবে পটু সিনেমা | সারা ফেলার প্রত্যাশা   |   প্রতারকদের কাছ থেকে বাবুরাইল খেলার মাঠের জমি যারা কিনছেন, ভুল করেছেন   |   পাগলায় ট্রেনে কাটা পড়ে বন্দরের টেলু’র মৃত্যু   |   বন্দরে ৪টি স্কুলের শিক্ষার মান নিয়ে নানা প্রশ্ন   |   রূপগঞ্জে নকল মশার কয়েলে সয়লাব | স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে জনজীবন   |   গিয়াস উদ্দিনের জামিন না-মঞ্জুরে ফতুল্লা থানা বিএনপির তীব্র নিন্দা   |   করোনার রিপোর্ট করায় চীনা সাংবাদিক ৪ বছর জেল খেটে মুক্তি পাচ্ছেন   |   নারী কাউন্সিলরকে মারধরের অবিযোগে  কাউন্সিলর সামসুজ্জোহা বরখাস্ত    |   ভেজালবিরোধী অভিযানে চার প্রতিষ্ঠানকে ৩২ হাজার ৫শ টাকা জরিমানা
 প্রচ্ছদ   মন্তব্য প্রতিবেদন   সর্বরোগের মহৌষধ’ নামে কী খাচ্ছে মানুষ?
 25
সর্বরোগের মহৌষধ’ নামে কী খাচ্ছে মানুষ?
  মন্তব্য প্রতিবেদন || নারায়ণগঞ্জেরখবর.কম
প্রকাশিত: সোমবার, ৩ অক্টোবর, ২০২২

কুড়িগ্রাম সদরের যাত্রাপুর হাটে সাপ্তাহিক বাজার করতে এসে অসুস্থ স্ত্রী মরিয়মের জন্য ওষুধ খুঁজছেন ষাটোর্ধ্ব মোজাম আলী। হাটের ঠিক পূর্বপাশে মাইকে চলছে ‘সর্বরোগ নিরাময়কারী ওষুধ’ বিক্রির প্রচারণা। থমকে দাঁড়ান মোজাম আলী। মাইকে চলা প্রচারণা এক মিনিট শুনে দুই ফাইল কিনে ব্যাগে ভরলেন। কিন্তু ওই ফাইলে ভরা ‘ওষুধ’ নামক তরল পদার্থ আদৌ স্বাস্থ্যসম্মত কিনা, এতে স্ত্রীর রোগ নিরাময় হবে নাকি উল্টো শরীরে নতুন রোগ বাসা বাঁধবে তা জানেন না মোজাম।‘বাড়িওয়ালির (স্ত্রীর) অসুখ। একবার এই ওষুধ নিয়া খাওয়াইছি। আইজ ফির নিবার কইছে। এজন্য নিছি। বিশ্বাসের ওপর খাওয়াই’ বললেন মোজাম।যাত্রাপুর হাটে সাপ্তাহিক বাজার করতে আসেন নাগেশ্বরী ও উলিপুর উপজেলার বিভিন্ন চরের মানুষজন। এই বাজারে একাধিক হকার ‘সর্বরোগের মহৌষধ’ বিক্রি করেন। সামুদ্রিক কড মাছের কাঁটা বলে হাটের গলিতে দাঁড়িয়ে তা বিক্রি করছেন সজিব নামের এক হকার। তার দাবি, শরীরের যেকোনো ব্যথা ‘উপশমকারী’ কড মাছের কাঁটা। তার কাছ থেকে এই কাঁটা কিনেছেন একই জেলার বাসিন্দা শাহাবুদ্দিনসহ (৬২) অনেকে। চিকিৎসক না দেখিয়ে মাছের কাঁটা শরীরে বেঁধে রাখলে ব্যথা ভালো হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে শাহাবুদ্দিন বলেন, ‘ট্যাহা তো নাই। চিকিৎসক দেখামু কেমন করি। এইডা নিয়া দেখি, যদি ভালা হয়।’মোজাম আলী ও শাহাবুদ্দিনদের মতো মানুষের অভাব আর সরল বিশ্বাসকে পুঁজি করে ওষুধের নামে অননুমোদিত বিভিন্ন দ্রব্য বিক্রি করছেন এক শ্রেণির হকার। কুড়িগ্রামের বিভিন্ন হাটবাজারে তাদের অবাধ বিচরণ। সর্বরোগের ‘মহৌষধ’ নামে স্বল্প আয়ের মানুষের পকেট কাটছেন তারা। এসব ব্যক্তির কারণে ভয়ঙ্কর স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষজন।জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওষুধের নামে এসব অননুমোদিত দ্রব্য সেবনের ফলে মানুষের পাকস্থলী, ফুসফুস, লিভার ও কিডনি ক্ষতিগ্রস্তসহ ক্যানসার সৃষ্টি হচ্ছে। সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি এসব পণ্য বিক্রিতে আইনের কঠোর প্রয়োগের দাবি জানান তারা।মোজাম আলীর কেনা ‘ওষুধের’ ফাইলে কার্যকারিতা অংশে লেখা আছে, ‘অরুচি, শুল, শ্বাস-কাস, ভগন্দর, বাতব্যাধি, ক্ষয়রোগ, বমি, কুষ্ঠ, মেহ, উদর রোগ, এলার্জি ও ভিটামিন এবি, এবং সি-এর অভাবজনিত রোগে কার্যকরী।’‘এক ওষুধের বহুমুখী রোগ নিরাময় ক্ষমতা’ মাইকে একই ধরনের বর্ণনা দিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন হকার আমিন আলী। তার পাশেই আরেক হকার বাদ্যযন্ত্রের তালে নাচে গানে মানুষ জড়ো করে ‘ক্যালসিয়াম’ ট্যাবলেট বিক্রি করছেন। প্রতি পাতা (১০টি ট্যাবলেট) ২০ টাকা। স্বল্পমূল্যে বহু গুণের প্রচারণা শুনে পরিণতি না ভেবেই সেই ট্যাবলেট কিনছেন মানুষজন।বাজারের কিছুটা দক্ষিণে সজিব কবিরাজ ‘কুড়িগ্রাম ধরলা আয়ুর্বেদ ঔষধালয়’ নামে পশরা সাজিয়ে বিক্রি করছেন যৌনশক্তি বর্ধকসহ নানা রোগের ওষুধ। ভয়ঙ্কর বিষয় হলো তিনি প্রকাশ্যে পারদ মিশিয়ে ‘মহৌষধ’ বানাচ্ছেন। আকর্ষণীয় প্রচারণায় কার্যকর ভেবে সেসব কিনছে মানুষ।‘পারদ দিয়ে আমি ওষুধ তৈরি করি। ১১০টা গাছ-গাছড়া লাগে। ১৬ দিনের একটা কোর্স দেবো। ১০০ ভাগ গ্যারান্টি সহকারে ওষুধ তৈরি করে দেবো।’ সজিব কবিরাজের এমন প্রচারণার পরই চর ভাগবতীপুরের বাসিন্দা গোলজার হোসেনসহ একাধিক ব্যক্তি তার কাছ থেকে ‘ওষুধ’ নিলেন। তারাও জানেন না এর পরিণতি আসলে কী!আসলেই কী এসব পণ্যে মানুষের রোগ ভালো হয়? মানুষ কেন এসব কিনছে? এসব প্রশ্নের উত্তর মেলে ক্রেতা-বিক্রেতাদের কাছেই।গোলজার হোসেন বলেন, ‘আগে একবার নিয়া গেছি। উপকার হইছে। সেজন্য আবার নিতাছি। তবে কী ধরনের উপকার হয়েছে তার জবাব পাওয়া যায়নি।স্ত্রীর জন্য দুই ফাইল কিনে নেওয়া মাঝের চরের বাসিন্দা দিনমজুর মোজাম আলী বলেন, ‘ডাক্তার দেখাবার পাই না। সে পয়সা নাই। এগো কাছে অল্প টাকায় ওষুধ পাই। এজন্য কিনি। বিশ্বাসের ওপর খাওয়াই।’উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের মুসারচরের গৃহবধূ ফারজানা বলেন, ‘চরে কোনও স্বাস্থ্যসেবা নাই। পুরুষরা হাট থাইকা যে ওষুধ নিয়া আইসা দেয় আমরা তাই খাই।’এসব দ্রব্য বিক্রেতারাও জানেন এতে মানুষের রোগ নিরাময় হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। তারপরও ‘জীবিকার’ প্রয়োজনে মানুষের কাছে এসব দ্রব্য বিক্রি করছেন তারা। এমনটাই জানালেন বিক্রেতা আমিন। যদিও এই বিক্রেতাকেই দেখতে রোগাক্রান্ত মনে হচ্ছিল।আমিন বলেন, ‘আমরা যতটা বলি ততটা কাজ করে না। তবে মানুষের ছোট ছোট কিছু উপকার হয়। পেটের দায়ে এই ব্যবসা করি। কিছু করে তো খাইতে হবে।’রংপুর মেডিক্যাল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ও বক্ষব্যাধি মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. তাপস বোস বলেন, ‘এগুলো ওষুধ নয়, বিষ। মানুষের শরীরে এসব বিষের মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে। এগুলো সেবনের ফলে আমাদের শরীরের প্রধান অঙ্গগুলোর ওপর চাপ তৈরি হয়। বিশেষত বুক ধড়ফড় করা, হাত-পা ও শরীরে পানি জমে যাওয়া, কর্মক্ষমতা কমে যাওয়া, সামান্য আঘাতে হাড় ভেঙে যাওয়ার মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।’এই চিকিৎসক আরও বলেন, ‘ওষুধ নামের এসব বিষ সেবনে আমাদের শরীরের হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস, লিভার, কিডনি এমনকি হাড়ের ওপর মারাত্মক চাপ তৈরি হয়। ধীরে ধীরে এসব অঙ্গ বিকল হয়ে যায়। ফলে হৃদরোগ, ফুসফুসের রোগ ও কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে শেষ পর্যন্ত ক্যানসার হতে পারে।’এসব দ্রব্য সেবনে একই ধরনের ক্ষতিকর প্রভাবের কথা জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘ওষুধ এমন একটি দ্রব্য যেটি সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে অনুমোদন নিয়ে প্রস্তুত করতে হয়। অধিকাংশ ওষুধ প্রেসক্রিপশন ছাড়া ক্রয়-বিক্রয় করা যায় না। যারা হাটবাজারে দোকান সাজিয়ে ওষুধের নামে এসব বিক্রি করছেন, এটি শতভাগ বেআইনি। এভাবে মানুষের হাতে এসব বিষ তুলে দিয়ে জনস্বাস্থ্যের ওপর হুমকি তৈরি করা হচ্ছে।’‘এসবের মধ্যে উত্তেজক কিছু দ্রব্য মানুষের স্নায়ুতন্ত্রে উত্তেজনা তৈরির জন্য দেওয়া হয়। এগুলো সঠিকভাবে পরীক্ষিত ও অনুমোদিত নয়। এগুলো গ্রহণ করলে প্রথমত খাদ্যনালী ও পাকস্থলী ক্ষতিগ্রস্ত হয়। লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং এগুলো কিডনির কার্যকারিতা নষ্ট করে দেয়। ফলে প্রতি বছর প্রচুর মানুষ এসব অঙ্গ সংশ্লিষ্ট রোগে আক্রান্ত হচ্ছে’ বলেছেন ডা. লেলিন।কুড়িগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মনজুর-এ-মুর্শেদ বলেন, ‘বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এসব পণ্য আয়ুর্বেদিক বলে বিক্রি হয়। এগুলো ওষুধ প্রশাসনের দেখার কথা।’ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর কুড়িগ্রাম জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক বিএম জাহিদ হায়দার বলেন, ‘এসব পণ্য বিক্রি নিয়ন্ত্রণে আমরা বিভিন্ন দোকানে অভিযান চালাই। কারও কাছে পাওয়া গেলে মামলা দিচ্ছি। হাটবাজারে যাতে এসব দোকান বসতে না পারে সেজন্য হাট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করছি আমরা। এসব পণ্য বিক্রি নিয়ন্ত্রণে আমরা সক্রিয়।’

নার্সারীতে সফলতা পেয়ে নার্সারী নুরুল ইসলাম সাত বার অর্জন করেছেন জেলা প্রশাসনের সম্মাননা পদক

ফেইসবুকে আমরা

এ সম্পর্কিত আরো খবর...