শিরোনাম
নারায়ণগঞ্জে শেখ হাসিনা, সাবেক মন্ত্রী এমপি সহ ২৯৩ নাম উল্লেখ করে ৪টি হত্যা মামলা
নারায়ণগঞ্জের খবর প্রতিবেদকঃ নারাণয়গঞ্জের সোনারগাঁ, সিদ্ধিরগঞ্জ ও ফতুল্লা থানায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামলীগের সভাপতি শেখ হাসিনা, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সাংসদ গাজী গোলাম দস্তগীর এবং নারায়ণগঞ্জ- আসনের সাবেক সাংসদ শামীম ওসমান, শামীম ওসমানের ছেলে অয়ন ওসমান এবং তার ভাতিজা আজমেরী ওসমানসহ ২৪৮ জনের নাম উল্লেখ করে তিনটি পৃথক হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। মঙ্গলবার গভীর রাত থেকে বুধবার বিকেল পর্যন্ত এই পৃথক তিন বাদী এই তিনটি মামলা দায়ের করেন।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানা ১২৩ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা:
নারায়ণগঞ্জে কেয়ার টেকার মনির হোসেন হত্যার অভিযোগে শামীম ওসমানকে প্রধান আসামী করে ১২৩ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) দিবাগত গভীর রাতে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় নিহত মনিরের ছোট ভাই মোঃ সাখাওয়াত হোসেন বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সিদ্ধিরগঞ্জে শিমরাইল এলাকায় গুলিতে নিহত কেয়ারটেকার মনিরের ছোট ভাই সাখাওয়াত বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুজিবুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক ইয়াসিন মিয়া, শামীম ওসমানের ছেলে অয়ন ওসমান, ভাতিজা আজমীর ওসমান, শাহ নিজামসহ ১২৩ জনের নাম উল্লেখ্য করে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় এই হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ নিয়ে নারায়ণগঞ্জে তাদের বিরুদ্ধে ৪টি হত্যা মামলা দায়ের হলো।
মামলার এজাহারে বাদী সাখাওয়াত উল্লেখ করেন, আমার বড় ভাই মৃত মোঃ মনির হোসেন পাইনাদি নতুন মহল্লার পি.এম মোড় এলাকার পি.এম টাওয়ারের (সমিতির বিল্ডিং) একজন কেয়ার টেকার ছিলেন। গত ২০ জুলাই (শনিবার) বিকালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে পণ্ড করতে আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠনের সমর্থিত নেতা–কর্মীরা একজোট হয়ে আগ্নেয়াস্ত্র, পিস্তল, শটগান, ককটেল, লাঠিসোঁটাসহ নিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করে এবং জনমনে আতঙ্ক তৈরি করেন। এসময় নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সাংসদ শামীম ওসমান, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগ সভাপতি মজিবুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক এজাহারভুক্ত অন্যান্য আসামীদের ছাত্র-জনতার উদ্দেশ্যে এলোপাতাড়ি গুলি ও আক্রমণ করার নির্দেশ দেন। আসামিরা রাস্তায় অবস্থানরত ছাত্র-জনতার ওপর ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ভীতির সৃষ্টি করে তাঁদের হাতে থাকা দেশীয় অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি ও মারধর করেন। তখন ডাচ বাংলা ইব্রাহিম খলিল শপিং কমপ্লেক্স এর পিছনে হিরাঝিল রোডে সাবেক কমিশনার ওমর ফারুক এর চুনা ফ্যাক্টরীর সামনের রাস্তায় মনির হোসেন (৫৬) গুলিবিদ্ধ হলে নারায়ণগঞ্জের খানপুর সরকারী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরবর্তীতে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে ২১জুলাই রাতে ডাক্তারের পরামর্শ ক্রমে পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তী করা হয়। পরে সেখানে চিকিৎসাধিন অবস্থায় ২২ জুলাই (সোমবার) বিকালে সে মারা যায়।
মামলার এজাহারে বাদী সাখাওয়াত আরো উল্লেখ করেন, নিহত মনিরের মৃতদেহ তার নির্ধারিত বাসা পাইনাদি নতুন মহল্লাস্থ পি.এম মোড়ে নিয়ে আসা হলে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগ সভাপতি আলহাজ্ব মোঃ মজিবর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক হাজী মোঃ ইয়াসিনসহ অন্যান্য আসামীরা আমার ভাইয়ের জানাযা না করে মৃত দেহ গ্রামের বাড়ী কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ তালতলায় নিয়ে যাওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন। তখন আমি নিরুপায় ও ভয়ে আতংকিত হয়ে আমার ভাইয়ের মৃত দেহ আমাদের গ্রামের বাড়ী নিয়ে যাই এবং জানাযা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করি।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ আবু বকর সিদ্দিক, মামলার সত্যতা ও তথ্য নিশ্চিত করে।#
রুপগঞ্জ থানায় ৪৫ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা:
বৈষম্যবিরেধী ছাত্র আন্দোলনের শেখ হাসিনার পতনের পর নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের চনপাড়ায় আনন্দ মিছিলে গুলিবিদ্ধ হয়ে শিক্ষার্থী রোমান মিয়ার মৃত্যুর ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজীসহ ৪৫ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা হয়েছে। বুধবার দুপুরে রূপগঞ্জ থানায় মামলাটি দায়ের করেন নিহতের মা রিনা বেগম। মামলায়- অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে ৬০ জনকে।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রূপগঞ্জ থানার পুলিশ পরির্দশক জুবায়ের হোসেন। তিনি জানান, মামলা পরবর্তী আইনী কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
মামলায় উল্লেখ করা হয়,গত ৫ আগষ্ট বৈষম্যবিরেধী ছাত্র আন্দোলনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতন ঘটলে সেসময় নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের চনপাড়ায় আনন্দ মিছিল বের হয়। তখন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী ও তার ছেলের নির্দেশে মামলার অন্য আসামিরা চনপাড়ায় ছাত্র-জনতার উপর গুলিছুড়ে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে শিক্ষার্থী রোমান মিয়া। পরে তাকে উদ্ধার করে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষনা করেন। নিহত রোমান মিয়া চনপাড়ার নব কিশালয় উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেনীর ছাত্র ছিলেন।
এর আগে এ জেলায় আরও তিনটি হত্যা মামলা হয়েছে। এসব মামলায় সাবেক প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বেশ কয়েকজন সাবেক মন্ত্রী-এমপিসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় আওয়মী লীগের নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়েছে।#
ফতুল্লায় ৮০ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা:
নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে আবুল হোসেন মিজি নিহতের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, শামীম ওসমান সহ ৮০ জনের নাম উল্লেখ করে ফতুল্লা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
বুধবার (২১ আগস্ট) নিহত আবুল হোসেন মিজির মা বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় ১৫০/২০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরে আজম মামলার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
আড়াইহাজারে শেখ হাসিনা সহ ৪৫ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আড়াইহাজারে শফিকুল ইসলাম শফিক হত্যা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা , সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের , সাবেক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল , সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান , গোলাম দস্তগীর গাজী , নজরুল ইসলাম বাবু , কায়সার হাসনাতসহ ৪৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ১৫০ জনকে আসামি করে আড়াইহাজার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে । গতকাল বুধবার ( ২১ আগস্ট ) রাতে নিহত শফিকুলের স্ত্রী তাছলিমা আক্তার বাদী হয়ে এ মামলাটি দায়ের করেন । আড়াইহাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ( ওসি ) আহসান উল্লাহ এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন । মামলার অন্যতম আসামিরা হলেন- সন্ত্রাসী আজমেরী ওসমান , অয়ন ওসমান , আওয়ামী লীগের শাসনামলের অর্থ জোগানদাতা ফকির আক্তারুজ্জামান , ফকির কামরুজ্জামান , ফকির মাশরিকুজ্জামান , ভাইস চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম , ফেনী পৌরসভার সাবেক মেয়র মো . আলা উদ্দিন , নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাকিরুল আলম হেলাল , জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সুফিয়ান , মহানগর যুবলীগের
সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন ভূঁইয়া সাজনু , আড়াইহাজার পৌরসভার সাবেক মেয়র সুন্দর আলী , বাকীর , আব্দুল হাই , শব্দর আলী , শামীম , জুলহাস , সেলিম , বাহাউদ্দিন , আনসার আলী , রিফাত , বিল্লাল , সাদু , সোহাগ , ইয়াসিন , তফজিরুল রানু , কুতুব উদ্দিন , ইদ্রিস আলী , মো . রফিক , জসিম মেম্বার , হাতেম , মনচুর আলী , লিয়াকত আলী , সাদত আলী , রুস্তম আলী , ফারুক ও মাহবুব । মামলায় উল্লেখ করা হয় , গত ৫ আগস্ট তার স্বামী , দেবর জাহাঙ্গির , ইয়াসিন , ভাসুর কবির হোসেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগদান করেন । এরই জের ধরে পরে ওইদিন সন্ধ্যায় বালুয়াকান্দী গ্রামে ২৭ নং আসামি আনসার আলীর বাড়ির সামনে ঘটনাস্থলে পৌঁছামাত্র ২০ নং থেকে ৪৫ নং আসামিরা তার স্বামী , ভাসুর দেবরদের দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করিতে থাকে । তার স্বামী তখন গালমন্দ করতে নিষেধ করায় আনসার আলীর হুকুমে ২৮ নং বিবাদী রিফাতের হাতে থাকা চাইনিজ কুড়াল দিয়ে কোপ দিয়ে রক্তাক্ত জখম করে । পরে ৩২ নং আসামি ইয়াসিন তার স্বামীর মুখে গামছা দ্বারা মুখ বেঁধে আওয়াজ বন্ধ করে সাধু এবং জমির মেম্বার ধারালো দা ও রামদা দ্বারা শরীরের বিভিন্ন স্থানে কুপিয়ে গুরুত্বর রক্তাক্ত জখম করলে ঘটনাস্থলেই তার স্বামীর মৃত্যু হয় । #