শিরোনাম
না’গঞ্জকে ঘুষ-দুর্নীতি মুক্ত করতে দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন গড়ার আহবান – গিয়াস উদ্দিন
নারায়ণগঞ্জের খবর প্রতিবেদকঃ বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষ্যে নারায়ণগঞ্জে গণসমাবেশ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা- জাসাস জেলা ও মহানগর শাখার উদ্যোগে বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) বিকেলে চাষাড়ায় জিয়া হল প্রাঙ্গণে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর জাসাস এর সভাপতি মোঃ স্বপন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই গণসমাবেশে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির সভাপতি আলহাজ্ব মুহম্মদ গিয়াস উদ্দিন।
প্রধান অথিথির বক্তব্যে গিয়াস উদ্দিন বলেন, সম্মানজক একটা পেশার সংগঠন হলো প্রেসক্লাব। প্রেসক্লাব নিয়ে আমি অনেক কথা বলেছি, আজকে বলতে চাই ভুল না বুঝার জন্য। কারণ নারায়ণগঞ্জকে সুন্দর করতে হলে সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে সুন্দর এবং ভালো করতে হবে। একটি আদর্শিক পেশার জায়গা হলো প্রেসক্লাব। প্রেসক্লাবে ভালো সাংবাদিকও আছে, খারাপ সাংবাদিকও আছে। আমি সমালোচনা করি খারাপ সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে। আমি কথা বলি, খারাপ-হলুদ সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এবং তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার জন্য ভালো সাংবাদিকদেরও আহবান জানাই। ভালো সাংবাদিকদের নিজেদের মান সম্মান রক্ষা করার জন্য তাদের নিজেদেরই কথা বলা উচিত হলুদ সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে। আমি কয়েকদিন আগে, ফতুল্লার একটি সমাবেশে খারাপ সাংবাদিকদের ভালো হয়ে যাওয়ার আহবান জানিয়ে আমি একটি বক্তব্য রেখেছিলাম, আমার সাংবাদিক বন্ধুরা বুঝতেই পারেন নাই আমি সেখানে কি বলার চেষ্টা করেছি। মূলত আমি সবসময়ই খারাপ মানুষদের ভালো হওয়ার আহবান জানিয়ে আসছি। এরই ধারাবাহিকতায় খারাপ সাংবাদিকদের ভালো হতে বলেছিলাম। প্রেসক্লাবের মতো সম্মানজক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে যারা সদস্য হয়, তারা ভালোও হয় আবার খারাপও হয়। যেমন ফতুল্লাতে, তেল চোর, জায়গা দখলকারী, লুটেরা, মাস্তান, ছিনতাই কারী ঐ ক্লাবের সদস্য। যখন আমি দেখি, আমি বিস্মিত হয়ে যাই, এমন একটা আদর্শিক পেশায় এই ধরনের খারাপ মানুষগুলো কিভাবে ঠাই পায়। এই খারাপ মানুষগুলো প্রেসক্লাবের কাধে ভর করে থানার দালালি করে, বিভিন্ন জায়গায় ব্যবসা-বাণিজ্য লুণ্ঠন করার কাছে ঐ সাংবাদিকদেরকে ব্যবহার করে। এজন্য আমি স্পষ্টভাবে বলেছি, খারাপ সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এবং যারা সাংবাদিক না, যারা লুটেরা, তারা কেন সেই সংগঠনে থাকবে। আর যারা ভালো সাংবাদিক, তাদের প্রশংসা আমি সব জায়গায় করি। থানায় গিয়ে যদি দালালী করে আর পরিচয় দেয় প্রেসক্লাবের, তখন ভালো সাংবাদিকরা ছোট হয়। মনে রাখবেন, আমি সাংবাদিক ভাই-বন্ধুদের ভালোর জন্য কথা বলেছি। সাংবাদিক তারা হতে পারেন, যাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা আছে, ভালো, একটু ভদ্র। কিন্তু এখনকার সাংবাদিক কি পড়ালেখা করেছে, কি যোগ্যতা তাদের আছে। ঠিক কোনো কাজকর্ম পায় না, উপার্জন করার ক্ষমতা নাই। এইবার একটা সাংবাদিকের টিকেট নিয়ে, সেটা বিক্রি করে খায়। আমি প্রেসক্লাব নিয়ে বললে, আপনারা কি ভাবেন আমি আপনাদের সকলকে বলি, না, আমি শুধু খারাপ সাংবাদিকদের সমালোচনা করি। ভালো হয়ে যান, আমরা সকল প্রতিষ্ঠানকে ভালো করতে চাই।
তিনি বলেন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা দেখতে চায়, ৫ই আগস্টের পরে নারায়ণগঞ্জের ৭টি থানার মধ্যে এতো মামলা হয়েছে, এগুলো নিরর্থক মামলা। এতো মামলা পুলিশ কেন নিয়েছে তা আমার বোধগম্য নয়। মানুষ বলে, আমরা ক্ষমতায় এসেছি, তাই আমরা এই মামলাগুলো করেছি। আমাদের দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে, বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। পুলিশ বাহিনীকে বলতে চাই, আপনারা যত্নবান হবেন, বিগত সরকারের মতো আচরণ করবেন না। তারা মিথ্যা মামলা দিয়েছে আপনারা নিয়েছেন, আপনারা কেন মিথ্যা মামলা নিবেন? আপনারা সঠিক মামলা নিবেন এবং সঠিকভাবে তদন্ত করে যারা প্রকৃত দোষী তাদের শাস্তির ব্যবস্থা নিবেন। বিগত ৩ মাসে আমরা দেখতে পেয়েছি, অনেক সন্ত্রাসী, দুর্নীতিবাজের বিরুদ্ধে থানায় থানায় মামলা হয়েছে। একটি মামলারও কোনো অগ্রসর নাই, কেন এটা হচ্ছে? বিপ্লবী সরকার এখানে, প্রশাসনের মধ্যে বিপ্লবী চেতনা থাকতে হবে। আমরা চাই, যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে, অবিলম্বে তাদের বিরুদ্ধে আইনতভাবে শাস্তি যেন হয়, সেই কার্যক্রম দ্রুত চালু করার জন্য আমরা আহবান জানাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, সারা দেশের মতো নারায়ণগঞ্জবাসী তাদের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান চায়। যানজটের কারণে নারায়ণগঞ্জবাসী হাপিয়ে উঠেছে। প্রতিদিন যানজট, এই যানজট নিরসনে কার্যক্রর ব্যবস্থা নারায়ণগঞ্জবাসী দেখতে চায়। পুলিশ প্রশাসন ও ট্রাফিক বিভাগতে দ্রুত এগিয়ে আসতে হবে। আজকে তো চাঁদাবাজ-মাস্তান নাই, সিন্ডিকেট নাই, তাহলে কেন বাজার নিয়ন্ত্রিত হবে না, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রনে আসবে না। যারা প্রশাসনে আছেন, তারা দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রনে আনার ব্যবস্থা গ্রহন করেন। জনগন যেভাবে খুনী সরকারের আমলে শোষিত হয়েছে, বর্তমান সরকারের আমলে যাতে সেভাবে শোষিত না হয়। ঘুষ-দুর্নীতি থেকে মুক্তি পেতে চায়, নারায়ণগঞ্জের প্রশাসনকে সেভাবে দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন গড়ার জন্য আমরা আহবান জানাই।
বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন জাসাস কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহবায়ক আনিসুল ইসলাম সানি। আরও উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট সরকার হুমায়ুন কবীর, মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক এডভোকেট মোহাম্মদ জাকির হোসেন, মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আবদুস সবুর খান সেন্টু, নারায়ণগঞ্জ জেলা জাসাসের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম সিরাজ।
আলোচনা সভা শেষে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এসময় দেশাত্মবোধক গান ও সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়।#