শিরোনাম
অশ্রুসজল চোখে হৃদয়ে রক্তক্ষরণ নিয়ে আজও চুনকা ভাইকে স্মরন করা হয়
হাসান উল রাকিব – নারায়ণগঞ্জের খবর প্রতিবেদকঃ প্রভাতফেরী করে ফুলে ফুলে শ্রদ্ধা জানিয়ে ক্ষণজন্মা জননেতা পৌরপিতা আলী আহাম্মদ চুনকাকে স্মরন করেছেন সর্বস্তরের মানুষ। প্রয়াত ৩৯ বছর পর আজও অশ্রুসজল চোখে হৃদয়ে রক্তক্ষরণ নিয়ে পৌরপিতা চুনকাকে স্মরন করেন তার সহকর্মী পরিবার ও ভক্তবৃন্দরা। তারা বলেন চুনকা ভাইয়ের শূন্যতা পূরন হবার নয়। তিনি মানুষকে তার অন্তর থেকে ভাল বাসতেন।
আজ ২৫ ফেব্রুয়ারী মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রামের সংগঠক, ভাষাসৈনিক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর, নারায়ণগঞ্জ জেলা ও শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি, নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান পৌরপিতা জননেতা আলী আহাম্মদ চুনকার ৩৯ তম মৃত্যুবার্ষিকী। এ কর্মসূচীতে আজ সকালে নগর সিটি পাঠাগারের সামনে থেকে প্রভাতফেরী করে মাসদাইর তার মাজারে গিয়ে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জনান নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী সহ বিভিন্ন সামাজিক রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা পৌরপিতার মাজারে ফুলদিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এসময় আলী আহাম্মদ চুনকার বড় ছেলে মোহাম্মদ আলী রেজা রিপন, ছোট ছেলে আহাম্মদ আলী রেজা উজ্জল, আলহাজ্ব মনোয়ার হোসেন মনা, শফিকুল ইসলাম লিটন, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের বেশকয়েকজন কাউন্সিলর সহ আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
পরে শ্রদ্ধাজানানো শেষে মাজার জিয়ারত করে ফাতেহা পাঠ করা হয়। এসময় দোয়া করে আলী আহাম্মদ চুনকা ও তার সহধর্মিণীর রূহের আত্তার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া করা হয়।
দিনব্যাপী কর্মসূচীঃ-
আলী আহাম্মদ চুনকার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তার পরিবার ও আলী আহাম্মদ চুনকা ফাউন্ডশনের পক্ষ থেকে দিনব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে বাদ ফজর কোরআন খানি, আহাম্মদ চুনকা পাঠাগারের সামনে থেকে মাজারের উদ্দেশ্যে প্রভাত ফেরী যাত্রা করে মাজার প্রাঙ্গণে কুরআন ও ফতেহা শরিফ পাঠ, মিলাদ মাহফিল ও মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত এবং এতিমখানায় দুস্থদের মধ্যে উন্নত মানের খাবার পরিবেশন।
বেপারীপাড়া শিশুবাগ বিদ্যালয়ে এবং প্লে-পেন ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে অনুরূপ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে।
আলী আহাম্মদ চুনকা’র মৃত্যুবার্ষিকী তার জ্যেষ্ঠ কন্যা নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভী সকল মহলের কাছে তার পিতার বিদেহী আত্মার চির শান্তির জন্য দোয়া কামনা করেছেনএ
আলীআহম্মদ চুনকার জীবনের ইতিহাসঃ-
১৯৩৪ সালে ১৬ ডিসেম্বর দেওভোগের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে আলী আহাম্মদ চুনকা জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ওয়াহেদ আলী, মাতার নাম গোলেনুর বেগম। ১৯৫২ সালে তিনি মহান ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৬২ সালে তিনি বিডি মেম্বার নির্বাচিত হন। ওই বছর তিনি হামুদুর রহমান শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন।
১৯৬৬ সালে আলী আহাম্মদ চুনকা বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা আন্দোলনে জনমত গড়ে তুলতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন এবং নেতৃত্ব দেন। ১৯৬৯ সালে তিনি ঐতিহাসিক গণঅভ্যূত্থানে নেতৃত্ব দেন। ১৯৬৮ সালে তিনি নারায়ণগঞ্জ শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৭০ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচনে তিনি নারায়ণগঞ্জ মহকুমা থেকে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে জনমত সৃষ্টিতে অসামান্য অবদান রাখেন।
১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং যুদ্ধে তরুণ ও যুব সমাজকে সংগঠিত করেন আলী আহাম্মদ চুনকা। ১৯৭২ সালে তিনি বাংলাদেশ পাট শ্রমিক সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লব সফল করতে মাঠ পর্যায়ে দলীয় নেতা কর্মীদের সংগঠিত করেন। ৭৫’র ১৫ই আগষ্ট স্বপরিবারে বঙ্গবন্ধু শাহাদাৎ বরণ করলে মনোবল ভেঙ্গে যাওয়া নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত এবং সংগঠিত করেন।
১৯৭৫ সালের ১৬ ডিসেম্বর জিমখানা মাঠে বিজয় দিবসের সরকারি অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ এবং বঙ্গবন্ধু হত্যাকে কারবালা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তুলনা করেন। বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর দীর্ঘদিন তাকে গৃহবন্দি রাখা হয়। স্থানীয় সেনা ক্যাম্প ও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ ও মানসিক নির্যাতন করে।
১৯৭৮ সালে চুনকা নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭৯ সালে তিনি নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করেন। ১৯৮০ সালে পুরাতন কোর্ট ভবনে প্রকাশ্যে বঙ্গবন্ধুর প্রতি কটূক্তি করায় শেরে বাংলার জামাতা সোলায়মান রাজাকারকে চপেটাঘাত করেন। তিনি পর পর দুই বার নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এছাড়াও তিনি আমৃত্যু ৭২টি সামাজিক সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের আজীবন সদস্য ছিলেন।
১৯৮৫ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ভোরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ক্ষণজন্মা মহাপুরুষ আলী আহাম্মদ চুনকা ইন্তেকাল করেন। তার নামাজের জানাজায় গণমাধ্যমের পরিসংখ্যান মতে প্রায় দেড় লাখ মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
আলী আহাম্মদ চুনকা শুধু আওয়ামী লীগের নেতা ছিলেন না তিনি প্রতিটি রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদেরও অত্যন্ত শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন। তিনি নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার দায়িত্বে থাকাকালীন নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাব, সুধীজন পাঠাগার সহ প্রায় অর্ধশত শিক্ষা প্রতিষ্ঠার জন্য জায়গা বরাদ্দ দেন। #