নারায়ণগঞ্জ  শনিবার | ১৭ই মে, ২০২৫ | ৩রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ গ্রীষ্মকাল | ১৮ই জিলকদ, ১৪৪৬

শিরোনাম
  |   আইভীকে বিস্ফোরক আইনের দুটি মামলায় শোন এরেস্টের আদেশ   |   ইসলামী আন্দোলন কলাগাছিয়া ইউনিয়ন শাখা পরিচিতি সভা অনুষ্ঠিত   |   সোনারগাঁয়ে প্রত্ন সম্পদ সংরক্ষণ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক   |   সাংবাদিক জিসান-মিথুনের মুক্তি দাবি রফিউর রাব্বির   |   বিকেএমইএ’র কার্যনির্বাহী সভাপতি হাতেম, ৭ সহ সভাপতি নির্বাচিত   |   মাদক বিক্রির টাকা ভাগভাটোয়ারা নিয়ে জিমখানায় যুবক হত্যা   |   আইভী ইস্যুতে মামলায় রিয়াদ সহ গ্রেফতার ৪   |   বিএনপি থেকে বিহিস্কৃত রিয়াদ মাহামুদ চৌধুরী বিমানবন্দরে আটক   |   আম কুড়াতে গিয়ে বজ্রপাতে যুবক নিহত    |   গভীর রাতে অযথা রাস্তায় ঘুরাফেরার অপরাধে ৩ যুবক আটক   |   বন্দরে বজ্রপাতে ৮ম শ্রেণী শিক্ষার্থী নিরবের মৃত্যু   |   অটোরিক্সা চালক জামান মিয়া হত্যা মামলায় তিন আসামীর ফাঁসি   |   বাড়িতে ফেরার পথে পোশাকক শ্রমিককে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ   |   আজাদ রিফাত ক্রিকেট ফেস্টিভাল সিজন -১ এর ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত   |   ৭১ টিভি সাংবাদিক রিয়াজের ওপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন বিক্ষোভ   |   আইভীকে গ্রেফতারের সময় বাঁধা প্রদান, হামলা মামলায় ৩ জন গ্রেফতার   |   জমি অধিগ্রহণের চেক প্রদান করেন জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিঞা   |   লায়ন ডিস্ট্রিক্ট নির্বাচনে মনা, মহসিন, রানা নির্বাচিত    |   ইটভাটায় মাটি বিক্রি না করায় পুলিশের উপস্থিতিতে বৃদ্ধার ওপর হামলা   |   ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ শুরু, চলছে পাল্টাপাল্টি হামলায়, হতাহত | ৫ বিমান ভূপাতিত
 প্রচ্ছদ   কলাম   রাত্রির হীম শীতল ভোর……… ম.মানিক
রাত্রির হীম শীতল ভোর……… ম.মানিক
  কলাম || নারায়ণগঞ্জেরখবর.কম
প্রকাশিত: সোমবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

ম.মানিকঃ  রাত্রি শেষ প্রহর । হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে যায় । মোবাইলে সময় দেখি , রাত প্রায় সাড়ে তিনটা । ইদানিং যখন তখন ঘুমিয়ে পড়ি , তারপর শেষ রাতের দিকে প্রায়ই ঘুম ভেঙ্গে জেগে উঠি । মনে হয় বয়স হয়েছে , এটাই শরীর জানান দিচ্ছে । লেখালেখিটা সাধারণত মোবাইলে লিখতেই আমি অভ্যস্ত হয়ে গেছি । প্রায়ই মোবাইল নিয়ে , হাতে একটা বই নিয়ে পড়ার ঘরের বিছানায় গিয়ে বসি , কিছুটা সময় পড়বো বা রাত জেগে লিখবো , এমন ভাবনা নিয়ে । কিসের লেখা ! কিসের পড়া ! রাজ্যের যতো ঘুম এসে দুচোখে ভর করে । কখন ঘুমিয়ে পড়ি টের পাইনা । মাথার উপর ফ্যান ঘুরছে , খালি গা , শরীরটা কেমন ঠাণ্ডা হয়ে গেছে । খালি গায়ে ঘুমানোর অভ্যাস আমার । খুব ঠাণ্ডার মধ্যেও কখনও কখনও কম্বলের নিচ থেক বাইরে চলে আসি । হাতের সামনে একটা কম্বল ঠিকই থাকে । কিন্তু অলস আমি , শীতে যবুথবু হয়ে কুকড়ে থাকি , তবুও কম্বলটা কখনো নিজ হাতে খুলে গায়ে দেইনা । অয়ন্তর আম্মুর অপেক্ষায় থাকি , ও এসে কখন কম্বলটা গায়ে জড়িয়ে দেবে । ঘুমের ঘোরে প্রায়ই টের পাই , ঝর্ণা গায়ে লেগে থাকা রক্ত

চুষে টসটসে মশা মারছে , কম্বলটা গায়ে জড়িয়ে দিচ্ছে । আজ হয়তো ঝর্ণা খেয়াল করেনি , তাই ঠাণ্ডায় কুকড়ে আছি । ঠাণ্ডার প্রকোপ ও তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ার কারণেই এই শেষ রাতে এসে ঘুমটা ভেঙ্গে যায় । হাতমুখ ধুয়ে একটু ফ্রেস হয়ে ফ্যানটা বন্ধ করে বিছানায় চোখবুজে চুপচাপ ঘাপটি মেরে পড়ে থাকি । রাজ্যের কতশত ভাবনা মনের ভেতর উঁকি মারতে থাকে । ভাবতে থাকি , কিছু কি লিখতে বসবো , না আবার ঘুমিয়ে পড়বো । হঠাৎ ডান কানের ভেতরটা কেমন পিলপিল করতে থাকে , চুলকাতে থাকে । মনে হচ্ছে কানের ভেতর কিছু একটা নড়াচড়া করছে । কান চুলকানো একটা বাজে অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে । তাই ম্যাচের কাঠি , মাথার ছোট ক্লিপ হাতের কাছেই রাখি , যেন প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারি । কানের ভেতর নড়াচড়া , চুলকানি দ্রুত বাড়তে থাকে । বেশী চুলকালে এমনটা মনে হয় যে কানের ভেতর কিছু একটা নড়ছে । তবে কাঠি দিয়ে একটু চুলকালে বা ক্লিপ দিয়ে কানের ময়লা পরিষ্কার করলেই সব ঠিক হয়ে যায় । একটা শক্ত ম্যাচের কাঠি দিয়ে বেশ কিছুক্ষণ কানের ভেতরটা চুলকানোর পরও চুলকানি বা ভেতরের নড়াচড়া কিছুই কমছে না । আমি বেশ চিন্তায় পড়ে যাই , সত্যি সত্যি কানের ভেতর কিছু একটা নড়ছে কী ! না এটা আমার মনের ভুল । চোখবুজে এসব ভাবতে লাগলাম । খুব অসস্তি হতে লাগলো ।
হঠাৎ মনে হলো একটা কিছু কানের ভেতর থেকে বাইরে বেড়িয়ে ঠেলে বেড়িয়ে আসার জন্যে জোরে ধাক্কা দিচ্ছে এবং আমার কানের পরিধি ধীরে ধীরে বড় হয়ে যাচ্ছে । আমি ভীষণ ভয় পেতে লাগলাম । আমার শরীর শিড়শিড় করে ওঠে । কেমন এক স্নায়বিক বৈকল্যে আমি প্রায় দিশেহারা হয়ে পড়ি । আমি ভয়ে ভয়ে ডান পাশের কানের উপর হাত রাখলাম । একটা প্রাণীর অস্তিত্ব আমি টের পাই । আমার হাতের স্পর্শে প্রাণীটার নড়াচড়া বুঝতে পারি । আমি ভয়ে শিহরে উঠে ঝটকা মেরে হাত সরাতে চাই , কিন্তু হাত সরাতে পারিনা । হাতটা যেন কানের সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে লেগে থাকে । ভয়ে আমার সমস্ত শরীর থরথর কাঁপতে থাকে । আমার ইন্দ্ৰীয় অবশ হয়ে আসে । আমি যেন দেখতে পাচ্ছি , একটা চ্যালা জাতীয় প্রাণী কানের ভেতর থেকে ধীরে ধীরে আমার হাতের উপর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বেড়িয়ে আসছে । চ্যালার মাথার সামনে দুটি বড় শুঁড় , এর নড়াচড়া , তার অনেকগুলো পায়ের অস্তিত্ব আমি টের পেতে থাকি । মুহূর্তের মধ্যেই আমার শরীরের ভেতর এক অবাক করা অভিনব রূপান্তর ঘটতে থাকে । আমার হাত কান , মুখ , মাথা , শরীর , শরীরের বিভিন্ন অংশ এক মস্ত বড় চ্যালায় রূপান্তরিত হতে থাকে । একসময় আমার দেহ পুরোপুরি রূপান্তরিত হয়ে এক ধূসর কালো রঙের চ্যালায় পরিনত হয় । আমি বিছানায় কুণ্ডলী পাকিয়ে শুয়ে থাকি ।
আমার আজ বিকালের ঘটনার কথা মনে পড়ে যায় । আমি ওয়াস রুমে বেসিনের কলটা ছেড়ে হাতমুখ ভালো করে ধুয়ে টাওয়ালটা নিতে মাত্র হাত বাড়িয়েছি , অমনি ওয়াস রুমের মেঝেতে চোখ পড়ে আমি আৎকে ওঠি । একটা মস্ত বড় ধূসর কালো রঙের চ্যালা মেঝের এদিক সেদিক দৌড়াচ্ছে । চ্যালা কোনো বিপদজনক প্রাণী না । তবুও এটা দেখামাত্র আমার মধ্যে এক ধরনের ভীতি ছড়িয়ে পড়ে । আমি মুহূর্তে পায়ের স্যান্ডেল হাতে নিয়ে পিটিয়ে ওটাকে আধমরা করে ফেলি । তারপর পা দিয়ে শরীরের সর্বোশক্তি প্রয়োগ করে ওর শরীর , মাথা জোড়ে জোড়ে পিষতে থাকি । আমার পায়ের ঘষায় চ্যালাটা কোমর থেকে দুটুকরো হয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় । টুকরো দুটো সমানতালে ছটফট করতে থাকে । আমি এক বন্য আনন্দে ওর মাথাটা পায়ের তলায় পিষতে থাকি । হঠাৎ আমার মনে হতে থাকে , আমার কোমরের উপর বুটজোেতা পরিহিত দুটি শক্তপোক্ত পা পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে । একটা বড় পুলিশ ভ্যানে বোঝাই অসংখ্য মৃতপ্রায় ছাত্রদের নির্জীব ক্ষতবিক্ষত দেহ । আমি সবগুলো দেহের নিচে উপুড় হয়ে পড়ে আছি । অনেকগুলো সশস্ত্র পুলিশ দেহগুলির উপর স্বদর্পে দাঁড়িয়ে আছে । আমার কোমরের উপর একজন দুপায়ে দাঁড়িয়ে আছে । আমি মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছি । পুলিশের বুটের তলায় পিষ্ট হয়ে আমার কোমর থেকে শরীর বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় যায় । একজন আমার মাথা তার বুটের তলায় পিষতে থাকে । ভ্যানির পুলিশগুলো বুটের তলায় আমাদের
দেহগুলো পিষতে পিষতে এক বন্য আনন্দে , উল্লাসে যেতে ওঠে । এরশাদ স্বৈরাচারের বিরুদ্ধ ১৯৮৩’র ছাত্র আন্দোলনের রক্তাক্ত গৌরবময় ইতিহাস আমার মস্তিষ্ক আলোড়িত হতে থাকে । আলোড়িত হতে থাকে ছাত্রদের উপর স্বৈরাচারের পাশবিক নির্যাতনের এক কালো অধ্যায় । আমি দেখতে পাই , এই হীম শীতল ভোরে শত পা বিশিষ্ট ধূসর কালো রঙের একটা মস্ত বড় চ্যালার দেহ ছিন্নভিন্ন হয়ে আমার বিছানার উপর পড়ে আছে ।
লেখক —- ম.মানিক
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও কথা সাহিত্যিক।

গাছ লাগান পরিবেশ বাচাঁন, যোগাযোগ ভাই ভাই নার্সারী মোবাইল – ০১৭১২২৫৬৫৯১

ফেইসবুকে আমরা

এ সম্পর্কিত আরো খবর...

error: Content is protected !!
error: Content is protected !!