নারায়ণগঞ্জ  শুক্রবার | ১৬ই মে, ২০২৫ | ২রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ গ্রীষ্মকাল | ১৭ই জিলকদ, ১৪৪৬

শিরোনাম
  |   সাংবাদিক জিসান-মিথুনের মুক্তি দাবি রফিউর রাব্বির   |   বিকেএমইএ’র কার্যনির্বাহী সভাপতি হাতেম, ৭ সহ সভাপতি নির্বাচিত   |   মাদক বিক্রির টাকা ভাগভাটোয়ারা নিয়ে জিমখানায় যুবক হত্যা   |   আইভী ইস্যুতে মামলায় রিয়াদ সহ গ্রেফতার ৪   |   বিএনপি থেকে বিহিস্কৃত রিয়াদ মাহামুদ চৌধুরী বিমানবন্দরে আটক   |   আম কুড়াতে গিয়ে বজ্রপাতে যুবক নিহত    |   গভীর রাতে অযথা রাস্তায় ঘুরাফেরার অপরাধে ৩ যুবক আটক   |   বন্দরে বজ্রপাতে ৮ম শ্রেণী শিক্ষার্থী নিরবের মৃত্যু   |   অটোরিক্সা চালক জামান মিয়া হত্যা মামলায় তিন আসামীর ফাঁসি   |   বাড়িতে ফেরার পথে পোশাকক শ্রমিককে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ   |   আজাদ রিফাত ক্রিকেট ফেস্টিভাল সিজন -১ এর ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত   |   ৭১ টিভি সাংবাদিক রিয়াজের ওপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন বিক্ষোভ   |   আইভীকে গ্রেফতারের সময় বাঁধা প্রদান, হামলা মামলায় ৩ জন গ্রেফতার   |   জমি অধিগ্রহণের চেক প্রদান করেন জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিঞা   |   লায়ন ডিস্ট্রিক্ট নির্বাচনে মনা, মহসিন, রানা নির্বাচিত    |   ইটভাটায় মাটি বিক্রি না করায় পুলিশের উপস্থিতিতে বৃদ্ধার ওপর হামলা   |   ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ শুরু, চলছে পাল্টাপাল্টি হামলায়, হতাহত | ৫ বিমান ভূপাতিত   |   হকার জুবায়ের হত্যা মামলায় ৪ জনের মৃত্যুদণ্ড, ২ জনের যাবজ্জীবন   |   নাসির উদ্দিন পিন্টুর ১০তম মৃত্যু বার্ষিকীতে মহানগর বিএনপির স্মরণ সভা   |   চেকপোস্টে তল্লাশী করে গুলিভর্তি আগ্নেয়াস্ত্র সহ দুজন গ্রেফতার
 প্রচ্ছদ   শীর্ষ খবর   আল্লাহ রাসূল পাক পাঞ্জাতন, পীর-মুর্শিদের চরনে জীবন সোপর্দ করে গেছেন আলী রেজা রিপন – – – – – – – রাকিব উল হাসান
আল্লাহ রাসূল পাক পাঞ্জাতন, পীর-মুর্শিদের চরনে জীবন সোপর্দ করে গেছেন আলী রেজা রিপন – – – – – – – রাকিব উল হাসান
  শীর্ষ খবর || নারায়ণগঞ্জেরখবর.কম
প্রকাশিত: বুধবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৫

রাকিব উল হাসানঃ পৌরপিতা জননেতা আলী আহাম্মদ চুনকা’র ছেলে ও সাবেক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী’র ছোট ভাই মোহাম্মদ আলী রেজা রিপন, আল্লাহ রাসূল, পাক পাঞ্জাতন, আহলে বাইত, ওলী প্রেমী নকসেবন্দিয়া তরিকার গোলাম নিবেদিত প্রান ছিলেন। ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে একজন মুত্তাকী হওয়ার পথ অনুসরণ করতেন ।

ধর্মীয় এসব বিষয়ে আলী রেজা রিপন মনের দিক থেকে যতটা ফানা ফি আল্লাহ ছিলেন, প্রকাশ্যে তা প্রকাশ করতেন খুব কম। তবে তরিকার খেজমদে গুরুদায়িত্ব পালনে সে ছিল একনিষ্ঠ ও কর্তব্যপরায়ন। নারায়ণগঞ্জের ইতিহাসে তরিকার খেদমতে আলী আহাম্মদ চুনকা, আমিনুল ইসলাম, জামির আহমেদ জমু’র নেতৃত্ব ছিল দেশব্যাপী সমাদৃত। তাদের পরবর্তি প্রজন্মের নেতৃত্বে তরিকার সিলসিলা বা কার্যক্রম এগিয়ে নিতে আলী রেজা রিপন ছিলেন একজন সুযোগ্য উত্তরসূরি। তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে অনেক বড় বড় কার্যক্রম সম্পূর্ণ হয়েছে।  আলী রেজা রিপন জীবদ্দশায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তরিকার কার্যক্রম পরিচালনা করে সফল হয়েছেন।
ওরশ মোবারকের প্রস্তুতি, কুল, ফাতেহা পাঠ, বা তরিকার কার্যক্রম সম্পন্ন করতে একদিকে যেমন কঠোর ছিলেন, অন্যদিকে কোমল আচরন দিয়ে সহযোগিদের নিয়ে সে কাজগুলো যথা সময়ে প্রস্তুত করতেন। এসব কাজ করতে গিয়ে কখোনও কারো সাথে কঠোর হলেও পরবর্তীতে হাঁসি মুখে তাকে বুকে জড়িয়ে নিতেন।
কিছু স্মরনীয় ঘটনাঃ
বিগত সময়ে বাবুরাইল ঐতিহ্যবাহী সাত দিনব্যাপী খাজা গরিবে নেওয়াজের ওরশ মোবারকের প্রস্তুতি চলছে। এর আগেই রিপন তার অসুস্থ স্ত্রীকে চিকিৎসা করাতে ভারতের একটি হসপিটালে অবস্থান করছে। তখন আলী রেজা রিপন এক পীর ভাইকে ভারত থেকে ভিডিও কল করে বলে,  ভাই বাবুরাইলে ওরশের প্রস্তুতি হচ্ছে, আর আমি ভারতের হসপিটালে। মনটা খাজার ওরশে পরে আছে। ভাই  ভিডিও কলে খাজার ওরশের গেইট, লাইট, প্রস্তুতি আমাকে একটু দেখাও । পরে কথা মত ভিডিও কলে ১৫/২০ মিনিট ওরশের প্রস্তুতি, গেইট লাইটিং দেখে বলেন, ভাই এখন মনটা একটু হালকা লাগছে।
খাজার ওরশে আখেরী কুলের আগের রাত্র সারা রাত জেগে থেকে নেওয়াজ রান্না কার্যক্রম পরিচালনা করে টানা পরদিন দুপুর পর্যন্ত নিজে বসে থেকে নেওয়াজ বিতরন করতেন। ওরশে নজরানাদাতা ও সম্পৃক্ত পীরভাই এলাকাবাসি সবাইকে নেওয়াজ বিতরন নিশ্চিত করতেন।
পীর মুর্শিদদের বিষয়ে বলতে গেলে এক কথায় আলী রেজা রিপন ছিল পীর মুর্শিদের গোলাম। বাবুরাইল খাজার ওরশে সাতদিন পীরজাদারা অবস্থান করতেন। প্রথম দিন ওরশ উদ্বোধনের দিন পীরজাদাদের বরন করতে নানা রকম প্রস্তুতি নেওয়া হতো, এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পীরজাদাদের মর্যাদা দিয়ে বরন করা হতো।
নানা কর্মসূচী মাল্যদান আতশবাজি, ২ নং বাবুরাইল মোড় থেকে খানকা পর্যন্ত সড়কে দু’পাশে দাঁড়িয়ে তরিকার আশেকান ভক্তবৃন্দ মুরিদান ও এলাকাবাসি একত্রে ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে ধর্মীয় স্লোগান দিয়ে পীরজাদাদের বরন করা হতো। এসব কাজে যেন কোন রকম ভুলত্রুটি না হয় সে দিকে বিশেষ নজর রাখতেন রিপন। ফাতেহা শেষে সারা রাত জেগে হুজুররা বাংলা বয়াতি গান গুনে ভোরে ঢাকা নবাব বাড়ি যেতেন। এসময় রাত জেগে টানা সাতদিন হুজুরদের আপ্যায়ন দেখভাল করা সকল দিকে তার সজাগ দৃষ্টি ছিল । কোন সিদ্ধান্ত নিতে হলে পীর-মুর্শিদের অনুমতির জন্য সে বিষয়ে তাদের অবহিত করে মুচকি হাসি দিয়ে অনুমতি না দেওয়া পর্যন্ত তাদের দিকে তাকিয়ে থাকতেন।
পীরজাদের কাছে যাতক্ষন থাকতো আলী রেজা রিপনের মুখে মুচকি হাসি লেগেই থাকতো।
সর্বপরি আলী রেজা রিপন একটু চাপা স্বভাবের ছিল। পীর-মুরশিদের প্রতি সে যতটা পাগল ফানাহফিল্লাহ ছিল তা প্রকাশ করেতন তুলনামূল অনেক কম।
বেশিরভাগ সময় নিরবতায় সময় কাটাতেন।
তরিকার পীরভাইদের চোখে রিপনঃ
তরিকাপন্থি একজন পীরের মুরিদান মূলত আল্লাহ রাসূল ও পীরমুর্শিদের চরনে নিজেকে সপোর্দ করে। তখন পীরের ইচ্ছাই মুরিদানের ইচ্ছা হয়। অর্থাৎ পীরকে সন্তুষ্টি করতে তার নির্দেশমত সকল কার্যক্রম করে মুরিদ।
কামের পীরের হাত ধরেই আল্লাহ রাসূলকে পাওয়া যায়। আলী রেজা রিপনের জীবনের মূল লক্ষই ছিল এটি।
মুরিদ শব্দটি আরবি থেকে উদ্ভূত, যার অর্থ “ইচ্ছা করা” বা “আকাঙ্ক্ষা করা”। ইসলামের মারিফতি ধারায় মুরিদ হলো সেই ব্যক্তি, যিনি আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য আত্মশুদ্ধি, আধ্যাত্মিকতা এবং একটি পীর বা মুরশিদের সান্নিধ্যে পথচলা শুরু করেন। মুরিদ সাধারণত সুফি ধারায় একজন মুর্শিদের অনুসরণে নিজের জীবনের লক্ষ্য হিসেবে আধ্যাত্মিক উন্নয়ন এবং আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আত্মসমর্পণকে বেছে নেন।
আধ্যাত্মিক নির্দেশকের গুরুত্ব নির্দেশ করে। মুরিদ পীরের নির্দেশনায় আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের জন্য নিজেকে নিবেদন করেন।
মারিফতের আলোকে মুরিদের ব্যাখ্যা:
আত্মশুদ্ধি এবং ইচ্ছা:
মুরিদ শব্দের মূলই হলো ইচ্ছা। একজন মুরিদের মধ্যে আল্লাহর প্রেমে আত্মসমর্পণের ইচ্ছা থাকতে হয়। তিনি তার পীরের নির্দেশ অনুসারে নিজের নফস (আত্মা) পরিশুদ্ধ করার জন্য চেষ্টা করেন।
পীরের প্রতি আনুগত্য: মুরিদ তার মুরশিদের প্রতি পূর্ণ আনুগত্য ও ভক্তি প্রদর্শন করে। পীর তার আধ্যাত্মিক পথ প্রদর্শক, যিনি তাকে শিরক থেকে মুক্তি এবং তাওহিদের প্রকৃত জ্ঞান দান করেন।
আল্লাহর প্রতি নিবেদন: মারিফতের শিক্ষা অনুযায়ী, মুরিদ ধীরে ধীরে নিজের সকল ইচ্ছা আল্লাহর ইচ্ছার সাথে একীভূত করেন। এই অবস্থাকে ফানা ফি আল্লাহ (আল্লাহতে বিলীন হওয়া) বলা হয়।
একজন মুরিদের বৈশিষ্ট্য:
সৎ চরিত্র:তিনি সত্য কথা বলেন, অন্যায় থেকে দূরে থাকেন এবং মানব সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করেন।
তাওবা:
তিনি তার পাপের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং নফসের বিরুদ্ধে জিহাদ করেন।
আধ্যাত্মিক ধৈর্য:
মুরিদের জীবনে ধৈর্য একটি গুরুত্বপূর্ণ গুণ। তিনি পরীক্ষার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করেন।
মুরিদ মূলত সেই ব্যক্তি, যিনি আল্লাহর ভালোবাসা এবং নৈকট্য লাভের জন্য নিজের সমস্ত ইচ্ছা ত্যাগ করে একজন আধ্যাত্মিক পথপ্রদর্শকের সান্নিধ্যে পথ চলেন। এটি কেবল আল্লাহর দিকে আত্মসমর্পণেরই নাম নয়, বরং একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি নিজের নফসকে পরিশুদ্ধ করে পরিপূর্ণ ইমানদার হন।
মোহাম্মদ আলী রেজা রিপন পারিবারিক ভাবে এসব শিক্ষা অর্জন করে বেড়ে উঠেছে। তরিকার অভিজ্ঞ মুরিদান মরহুম আলহাজ্ব সাহাবুল হাজ্বী সহ এমন অনেক কাছ থেকে তরিকার শিক্ষা নিয়েছেন। তিনি তরিকার বিষয়ে জানতে খুব আগ্রহী ছিলেন। জানার আগ্রহে ছোট ছোট প্রশ্ন নিয়ে অভিজ্ঞ পীর ভাইদের সাথে দীর্ঘ সময় আলোচনা করতেন ।
রিপন দীর্ঘ সময় তরিকার খেদমতে কাটিয়েছেন। তার মধ্যে একজন মুরিদের যেসব বৈশিষ্ট্য থাকে তার সবটুকুই ছিল।
এবার নিজের বাড়িতে খানকা এ দারুল ইসক হযরত শাহ সৈয়দ খাঁজা নাজমুল হাসান (রহঃ) খানকা শরীফে তরিকার সকল কার্যক্রমে আলী রেজা রিপন একজন দায়িত্বশীল (তরিকার ভাষায় গোলাম) ছিলেন।
প্রতি সপ্তাহে পাক পাঞ্জাতনের ফাতেহা, শেরে খোদা মাওলা আলী (রাঃ আঃ) এর ২০ রমজান ওফাত দিবসে ফাতেহা ও ইফতার মাহফিল। মহরমের ১০ দিন শাহীদে কারবালার ফাতেহা। বড় পীর দস্তগীর আব্দুল কাদির জিলানী (রহঃ) এর ফাতেহায়ে ইয়াজদাম, প্রতি আরবী মাসের ২৪ তারিখ খাঁজা নাজমুল হাসান (রহঃ) নামে ফাতেহা, আলী আহাম্মদ চুনকা চিশতী (রহঃ) এর বাৎসরিক ওরশ মোবারক। এসব তরিকার কার্যক্রম পালনে নিবেদিত প্রান ছিলেন।
প্রতিটি ওরশ ফাতেহা কার্যক্রম প্রস্তুতিতে কয়েকদিন আগে থেকেই তার মধ্যে অস্থিরতা বিরাজ করতো। যতক্ষন পর্যন্ত এ কাজগুলো সম্পূর্ণ করতে না পারতো ততক্ষন এ অবস্তাতে সময় কাটতো তার।
এসব কাজ সম্পাদন করতে একঝাক নিবেদিত তরুন ছিল। আলী রেজা রিপনকে তারা অত্যন্ত শ্রদ্ধা ও সমিহ করতো। তারা সবসময় প্রস্তুত থাকতো আলী রেজা রিপনের নির্দেশের জন্য।
কোন কিছু বলা হলে তা দ্রুত সময়ে সম্পূর্ণ করা হতো।
রিপন তাদের অত্যন্ত মোহাব্বত করতেন । তাদের সকলকে ভালবাসতেন দেখা হলেই হাসি মুখে ডাক দিয়ে কাছে টানতেন। পরিবারের খোঁজ খবর নিতেন। তারা সবাই আলী রেজা রিপনকেও মহাব্বত করতেন ভালবাসতেন। যখন মোবাইল ফোনের যুগ ছিল না তখন ধর্মীয় অনুষ্ঠানের দাওয়াত দিতে প্রতিটি পীর ভাইয়ের বাড়িতে যেতেন দুইভাই রিপন ও উজ্জল। একটি কার্ড দিয়ে বিনয়ের সাথে পীর ভাইদের দাওয়াত করতেন।
দীর্ঘদিন এ ধারাবাহিকতা ছিল।
পরবর্তিতে এসব অনুষ্ঠানে সবাইকে মোবাইল ফোনে দাওয়াত করতেন।
অনুষ্ঠানে আগত অতিথিদের আদর আপ্যায়ন দেখভাল করতো অত্যন্ত যত্নে। অনুষ্ঠানে আগত নিমন্ত্রিত অতিথি, তরিকার আশেকান ভক্তবৃন্দ পীর ভাইবোনদের সাথে অত্যন্ত নম্রতায় সালাম আদাব দিয়ে কুশল বিনিময় করতেন। তার প্রয়ানের সর্বশেষ ২০ রমজান মাওলা আলীর ওফাদ দিবসে ইফতার মাহফিলে অতিথিদের আপ্যায়ন এখনও চোঁখে ভাসে। মেয়র আইভী’র আমন্ত্রিত গন্যমান্য অতিথিরা বাড়ির নিচতলায় বসে ইফতার করছে। এসময় আলী রেজা রিপন অতিথিদের জন্য গরম গরম চপ বেগুনি পিয়াজু নিজ হাতে এনে প্রতিটি অতিথির প্লেটে তুলে দিচ্ছেন এবং সবার খোজখবর নিচ্ছেন। কোন রকম অসুবিধা হচ্ছে কিনা। আলী রেজা রিপনের এমন গুনের উদাহরন লিখে শেষ হবে না।
প্রতি বছর তরিকার এত অনুষ্ঠান ওরশ সম্পন্ন করেও আলী রেজা রিপনকে কখনো ক্লান্ত হতে দেখা যায়নি বরং তার মধ্যে এক ধরনের উৎফুল্লতা বিরাজ করতে দেখা যেত।
তরিকার খেদমত করে পূর্নতৃপ্ত হতেন তিনি। সত্যিকারের আল্লাহ রসূলের আশেক,পীর-মুর্শিদের গোলাম, তাদের জীবন মরনে অনেক  ঘটনার ঘটে ।
আলী রেজা রিপন রোজা মুখে সকালে মৃত্যুবরন করেন, আর মাগরিবের আযানের সময় তার দাফন কাজ সম্পন্ন হয়। একজন প্রকৃত মুত্তাকীকে মহান আল্লাহ দুনিয়াবির কাছে এভাবেই সম্মানিত করেন। আল কোরআনে বর্নিত আছে একজন বান্দা যে অবস্থায় মৃত্যু বরন করবেন, রোজ হাসরের ময়দানে সে, সে অবস্থায়ই উদিয়মান হবেন। “সুবাহান আল্লাহ” মহান আল্লাহ রসূলের সামনে আলী রেজা রিপন রোজা মুখে দাঁড়াবেন এটা কত বড় সম্মান, কত বড় মর্যাদার। এমন ভাগ্য কজনের হয়।
এবার নকসেবন্দিয়া তরিকার আস্তানাপাক ঢাকা নবাব বাড়ি খানকা এ দারুল ইসক দরবারে আলী রেজা রিপনের কার্যক্রম নিয়ে কিছু আলোচনা।
শব ই মেরাজে মিলাদ শরীফ, শব ই বরাতের মিলাদ, প্রতি সপ্তাহে বৃহস্পতিবার পাক পাঞ্জাতনের ফাতেহা, ২০ রমজান শেরে খোদা মাওলা আলী (রঃআঃ) এর ওফাত দিবসে ফাতেহা।
মহরমের ১-১০ তারিখ মাওলা ইমাম হুসাইন (রঃআঃ) শাহীদে কারবালার স্মরনে ফাতেহা পাঠ।
মাহাবুবে সোবহানী কুতুবে রাব্বানী পীরানে পীর গোলামে দস্তগীর বড় পীর আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ) এর ফাতেহায়ে ইয়াজদাম।
আরবি মাসের ৩ – ৪ রবিউল আওয়াল
খানকায়ে দারুল ইসকের প্রতিষ্ঠাতা হযরত মাওলানা শাহ সূফী সৈয়দ খাঁজা নাজম-উদ্দিন আহাম্মেদ নকসেবন্দ আবুল উলাই (কুঃসিঃ রঃ আঃ) এর ওরশ মেবারক।
আরবী মাসের ২৪ -২৫ সফর এলাহি বাহুরমতে পীরে কামেল ময়দানে মোহাব্বাত কুতুবে আফতাব হযরত শাহ সৈয়দ খাঁজা নাজমুল হাসান নকসেবন্দ আবুল ওলাই (রহঃ) ওরশ মোবারক।
আরবি ১৫-১৬ শাবান এলাহি বাহুরমাতে তাজদারে আউলিয়া, কুতুবে ওয়াক্ত হাযরত সাইয়‍্যাদ খাঁজা দায়েম হাসান নাকসেবন্দ আবুল উলাই (রঃ)  ওরশ মোবারক। সহ সকল তরিকার কার্যক্রমে আলী রেজা রিপন নিয়মিত সামিল থাকতেন। তিনি বর্তমান গদ্দীনাশিন পীরজাদাদের অত্যন্ত সম্মান ও ভালবাসতেন। পীরজাদারাও তাকে অত্যন্ত মহাব্বত করতেন।
আলী রেজা রিপন দরবার শরীফে গিয়ে প্রথমেই মাজার শরীফ জিয়ারত করতেন। পরে অন্দর মহলে গিয়ে পীরজাদাদের কদমবুচি করে ওরশ মোবারকের কার্যক্রমের শরীক হতেন। হজুররা কোন আদেশ নির্দেশ দিলে তা গুরুদায়িত্ব হিসেবে দ্রুত তা পালন করতেন। নবাব বাড়িতে অন্দর মহলের কাজ শেষে খানকা শরীফে এসে সবার পিছনে নিরব ভূমিকায় অবস্থান করতেন।  সকল পীর ভাইদের সাথে নম্রতায় কুশল বিনিময় করতেন।
পরে ফাতেহা শুরু হলে প্রথম কাতারে চলে আসতেন। হুজুরদের কদমবুচি করে মিলতেন। অনেক সময় আল্লাহ রসূল পীর-মুরশিদের নামে (কালাম পাঠ) কাওয়ালী শুনে ফানাহফিল্লাহ হয়ে পীর ভাইদের সাথে কাফিয়াত করতেন।  মজলিশে সামা শুরু হলে একেবারে নিরব হয়ে ধ্যানমগ্ন হয়ে শুনতেন। অনেক সময় অশ্রুসজল হয়ে পড়তেন।
তিনি হযরত মাওলানা শাহ সূফী সৈয়দ খাঁজা নাজম-উদ্দিন আহাম্মেদ নকসেবন্দ আবুল উলাই (কুঃসিঃ রঃ আঃ) এর নিজের লেখা বেশ কিছু কালাম অত্যন্ত পছন্দ করতেন, এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য “কাসরে জান্নাত, না বুলান, কাসরে জান্নাত না বুলান, মুঝে ইয়ারে মুঝে ইয়ারে, বালাম”
সব দরবারে মজলিশে সামা শেষ হওয়ার আগে নাদিম কাওয়ালকে এ কালামটি গাইতে অনুরোধ করতেন। এবং নাদিম কাওয়াল গাইতে শুরু করলে ধ্যানমগ্ন হয়ে রুহানি জগতে ফানা ফি আল্লাহ হয়ে পড়তেন। এ বিষয়টি উপস্থিথ অনেক পীরভাই লক্ষ করেছেন।
আলী রেজা রিপন প্রায় সময় একাকিত্বে আল্লাহ রাসূল পীরমুর্শিদের নামে (কালাম পাঠ) কাওয়ালী শুনতেন।
তিনি জীবদ্দশায় নিজেকে সবসময় পাক পাঞ্জাতনের গোলাম মনে করতেন। বলতে খুব পছন্দ করত “আমি তো পাক পাঞ্জাতনের গোলাম এবং ইবনে গোলাম হু।  অর্থাৎ আমার বাবাও গোলাম ছিল আমিও গোলাম। মেতো পাক পাঞ্জাতন কা গোলাম হু, গুলাম ইবনে গোলাম হু।
তিনি অতি সাধারন জীবনযাপন করতেন। সামর্থ অনুযায়ী বিলাসিতা করতেন না। পাক পাঞ্জাতন, দয়াল রাসূল, মাওলা আলী, মা ফাতেমা, ইমাম হাসান, ইমাম হুসাইনের জীবন যাপনের পথ অনুস্মরন করতেন।
নিজ বাড়ি মহরমের দশ দিন ইমাম হুসাইন শহীদে কারবালার স্মরনে ফাতেহার সময়ের এই দিনগুলিতে আলী রেজা রিপনের সুরত ও তার শোকাহত চেহারার দিকে তাকালে কারবালার ময়দানের হৃদয়বিদায়ক ঘটনা উপলব্দি হতো। আলী রেজা রিপন পাক পাঞ্জতনের কতটা পাগল ছিলেন তার সেই শোকাহত সুরতই সাক্ষী হয়ে আছে।
আলী রেজা রিপন এতটা সৌভাগ্যবান, তার নাম বার ইমামের একজন ইমাম আলী রেজা’র সাথে মিলিয়ে নির্ধারন করা হয়েছে ।
মহান রাব্বুল আলামীন, রহমাতুল্লিল আলামীন,  পাক পাঞ্জাতন আহলে বাইত, পীর-মুর্শিদের গোলাম মোহাম্মদ আলী রেজা রিপন ভাইকে আল্লাহ কবুল করুন। তাকে জান্নাতের উচ্চ মর্যাদা দান করুন। আমিন।
লেখক———–
রাকিব উল হাসান
সম্পাদক
নারায়ণগঞ্জের খবর ডটকম

গাছ লাগান পরিবেশ বাচাঁন, যোগাযোগ ভাই ভাই নার্সারী মোবাইল – ০১৭১২২৫৬৫৯১

ফেইসবুকে আমরা

এ সম্পর্কিত আরো খবর...

error: Content is protected !!
error: Content is protected !!