শিরোনাম
৫ আগস্ট পরবর্তী নারায়ণগঞ্জের নেতাকর্মীরা কেমন আছে – লেখক তোফাজ্জল হোসেন
লেখক – তোফাজ্জল হোসেনঃ শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে গেলে নারায়ণগঞ্জের আতঙ্কগ্রস্থ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বাড়ির ঘর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছেড়ে পালিয়ে যায়।।
গত ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামীলীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান।তিনি দেশত্যাগের সাথে সাথে গণমাধ্যমে প্রচারিত হলে সাধারণ মানুষ এবং আওয়ামী দুঃশাসনে নির্যাতিত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের এরা গণভবনে ও জাতীয় সংসদ ভবনে নির্বিচার হামলা ও লুটপাট চালায়।
এর প্রভাবে সারাদেশে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় এবং অফিসগুলি হামলাকারীদের টার্গেটে পরিণত হয়। বিশেষ করে রাজধানীর ঢাকা এলাকায় যখন শেখ মুজিবুর রহমানের বিশাল বিশাল মুরাল ভেকু মেশিন দিয়ে ভাঙ্গা হচ্ছিল কোন বাধা ছাড়াই সারাদেশের মতো নারায়ণগঞ্জেও বাদ যায়নি। ২ নং রেল গেটস্থ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয় দ্বিতল শিতাতপ নিয়ন্ত্রিত বিশাল আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের বঙ্গবন্ধুর মুরাল ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। আগুন দেওয়া হয় আওয়ামী লীগ অফিসে। লুট করা হয় আওয়ামী অফিসের ল্যাপটপ, এসি,মাইক,চেয়ার- টেবিল, দরজা -জানালা, এবং বাথরুমের কমোড পর্যন্ত । এই তান্ডব পূর্ণ বাধাহীন হামলা ভাঙচুর লুটপাটে ভিত সন্তুষ্ট হয়ে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য সহ সকল নেতারা এক কাপড়ের প্রাণ বাঁচাতে স্ত্রী, পুত্র, কন্যাদের অনিরাপদ রেখে যে যার মত পালিয়ে যায়। প্রথমত বাসা বাড়ি থেকে পালায় দ্বিতীয়তঃ যাদের সামর্থ্য আছে তারা চেষ্টা করে বিদেশে পালিয়ে যেতে কেউ সফল হন যারা সফল হননি তারা ঢাকা বা নিরাপদ স্থানে বাসা ভাড়া নিয়ে আত্মগোপনে আছেন।ইতোমধ্যে জানা গেছে নারায়ণগঞ্জ ছেড়ে সপরিবারে পালিয়ে নারায়ণগঞ্জের ৪ আসনের শামীম ওসমান, ৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান, ৩ আসনের সংসদ সদস্য কায়সার হাসনাত, ২ আসনের নজরুল ইসলাম বাবু ও১ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী সাহেব অসুস্থতার এবং মোটা বুদ্ধির কারণে পালাতে পারেনি। তিনি এখন হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন। বড় প্রভাবশালী আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যদের যখন এই হাল তখন জেলা /ও মহানগর পর্যায়ে আওয়ামী লীগের সকল নেতারা বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছেন । পালাতে ভুল করেনি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই, যিনি নিজেকে সিনিয়র সহ-সভাপতি পরিচয় দিতে গর্ববোধ করতেন মিজানুর রহমান বাচ্চু জেলা আওয়ামীলীগের সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ বাদল পালিয়েছেন। নারায়ণগঞ্জ থেকে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজী আনোয়ার হোসেন। পালাতে ভুল করেননি কর্মীবান্ধব নেতা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আইনজীবী এড.খোকন সাহা ।
বাকিদের নাম তাদের পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তার জন্য প্রকাশ করলাম না নৈতিক বিবেচনায়। তবে নারায়ণগঞ্জ জেলার ৭ টি থানার সকল থানা কমিটির প্রতাপশালী পরিবার পরিজন ছেড়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা থেকে পালিয়ে যান। মোট কথায় নারায়ণগঞ্জ জেলার ২ হাজার বিভিন্ন পর্যায়ে কোন দল সহ অঙ্গসংগঠনের যেমন ছাত্রলীগ, যুবলীগ, শ্রমিকলীগের নেতাকর্মী ভালো মন্দ মিলিয়ে সকল শ্রেণীর নেতাকর্মীরা বাড়ি-ঘর, ব্যবসা-বাণিজ্য, স্ত্রী, কন্যা ফেলে পালিয়ে যায়। এই হলো নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগের কর্মীদের বাস্তব অবস্থা। এত গেল ৫ আগস্ট আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পরপরই ঘটনা। তারপর শুরু হল ঠিক আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের মতোই গণহারে আসামি করে হত্যা মামলা দেওয়ার হিরিক।যেমন বিগত আওয়ামী লীগ বলে বিএনপি’র মৃত নেতা ও রেহাই পায়নি মিথ্যা বিস্ফোরক দ্রব্যের আসামি হতে। ঠিক তেমনি হাল আমলে নিরপরাধ অনেক ব্যক্তি আজীবন হত্যা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আজীবন লড়াই করেছেন তাদেরও আসামি হতে হয়েছে খুনি গডফাদার হত্যাকারীদের সাথে হত্যা মামলার আসামি। এক কথায় মহ আতঙ্কে ও চরম নিরাপত্তাহীনতায় আছেন সকল পর্যায়ের আওয়ামী লীগের গঠনের নেতাকর্মীরা। নারায়ণগঞ্জ জেলার মতো অন্যান্য জেলার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর ও নাকি এমনই আতঙ্কগ্রস্ত ও নিরাপত্তা হীনতায় আছেন।এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ চায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
লেখক – তোফাজ্জল হোসেন
সম্পাদক, দৈনিক ইয়াদ
নারায়ণগঞ্জ