শিরোনাম
উন্নয়নের রূপকার মেয়র আইভী’র জন্মদিন | সর্বস্তরের মানুষের শুভেচ্ছা
নারায়ণগঞ্জের খবর প্রতিবেদকঃ নারায়ণগঞ্জের অভূতপূর্ব উন্নয়ণের রূপকার পৌর পিতা আলী আহম্মদ চুনকা’র সুযোগ্য কন্যা গণমানুষের নেতা, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী’র শুভ জন্মদিন ৫ জুন। নিউজিল্যান্ডের চিকিৎসা পেশা ছেড়ে নারায়ণগঞ্জে ছুটে এসে নগরবাসির উন্নয়নের আশীর্বাদ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন নিজেকে। নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা থেকে শুরু করে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মানুষ ভালবেসে বার বার নির্বাচিত করেছেন মেয়র আইভীকে। তিনি মানুষের ভালবাসার প্রতিদান দিয়েছে সর্বস্তরে উন্নয়নের মাধ্যমে। দেশ স্বাধীনের পর নারায়ণগঞ্জের মানুষ ব্যাপক উন্নয়ন পেয়েছেন মেয়র আইভী’র নেতৃত্বের মাধ্যমে।
১৯৬৬ সালের ৫ জুন নারায়ণগঞ্জ শহরের পশ্চিম দেওভোগ এলাকায় সম্ভান্ত্র পরিবারে পৌর পিতা আলী আহাম্মদ চুনকা’র ঘরে জন্ম নেন মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। সোমবার ৫৭ এ পা দিয়েছেন বাংলাদেশের অন্যতম ক্লিন ইমেজের জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ ও জনপ্রতিনিধি আইভী।
মা মমতাজ বেগম ও বাবা পৌর পিতা প্রয়াত আলী আহাম্মদ চুনকার পাঁচ সন্তানের মধ্যে আইভী সবার বড় ।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী আহাম্মদ চুনকা ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা ও শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনি ছিলেন নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও পৌর পিতা । রাজনীতিক বাবার সান্নিধ্যে সেই শৈশব থেকেই মানুষের প্রতি তার গভীর মমতা ও ভালবাসা তৈরি হয়। তাই উত্তরাধিকার সূত্রে বাবার মতোই অসাম্প্রদায়িক ও মানবতাবাদী হয়েছেন। সাধারণ জীবন যাপন ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ অবস্থানের কারণে নারায়ণগঞ্জবাসীর কাছে বাবা চুনকার মতোই পেয়েছেন শ্রদ্ধার আসন।দেওভোগ আখড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শিক্ষাজীবন শুরু করে তিনি নারায়ণগঞ্জ প্রিপারেটরি স্কুলে ভর্তি হন। ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত সেখানেই লেখাপড়া করেন। এরপর তিনি ঐতিহ্যবাহী মর্গ্যাণ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৭৯ সালে ট্যালেন্টপুলে জুনিয়র স্কলারশিপ পান। ১৯৮২ সালে এসএসসি ও ১৯৮৪ সালে এইচএসসি পাস করেন। তিনি ১৯৮৫ সালে রাশিয়া সরকারের স্কলারশিপ নিয়ে চিকিৎসাবিজ্ঞানে শিক্ষা গ্রহণের জন্য ওডেসা পিরাগোভ মেডিকেল ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন। ১৯৯২ সালে কৃতিত্বের সঙ্গে ডক্টর অব মেডিসিন ডিগ্রি লাভ করেন। পরে ১৯৯২-৯৩ সালে ঢাকা মিটফোর্ড হাসপাতালে ইন্টার্ন সম্পন্ন করেন। শিক্ষাজীবন শেষে ১৯৯৩-৯৪ সালে মিটফোর্ড হাসপাতালে এবং ১৯৯৪-৯৫ সালে নারায়ণগঞ্জের ১০০ শয্যা হাসপাতালে (ভিক্টোরিয়া) অনারারি চিকিৎসক হিসেবে কাজ করেন।
ডা. আইভী ১৯৯৫ সালে বিয়ের পর স্বামী কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার কাজী আহসান হায়াৎ এর সাথে পাড়ি জমান নিউজিল্যান্ডে। সেখানে তিনি মেডিকেল ল্যাবরেটরি সায়েন্সের ওপর পড়াশোনা করেন। পারিবারিক জীবনে তিনি কাজী সাদমান হায়াৎ সীমান্ত ও কাজী সাদরিল হায়াৎ অনন্ত নামের দুই ছেলে সন্তানের জননী।
ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী স্কুল ও কলেজ জীবন হতে বাবার সাথে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করতেন। ১৯৯৩ সালে তিনি নারায়ণগঞ্জ শহর আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। ২০০৩ সালের ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচনের মাত্র ১৭ দিন আগে নিউজিল্যান্ড থেকে দেশে ফিরেন তিনি। কঠিন রাজনৈতিক পরিবেশে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেয়া হয় তাঁকে। নির্বাচনে তিনি বিপুল ভোটে সরকার সমর্থিত প্রার্থীকে হারিয়ে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার প্রথম নারী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
শুরু হয় জনপ্রতিনিধি হিসেবে নতুন জীবন। ২০১১ সালের ৩০ অক্টোবর অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নিজ দল আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা শামীম ওসমানকে হারিয়ে আইভী ইতিহাস সৃষ্টি করে দেশের প্রথম নারী মেয়র হন। ২০১৭ সালের ৯ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি করা হয় তাকে। ২০১৬ সালের ২২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হওয়া সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দ্বিতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নে বিপুল ভোটে মেয়র নির্বাচিত হন আইভী। ২০২২ সালের ১৬ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের মনোনয়নে বিপুল ভোটে তৃতীয় বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হন আইভী। বর্তমানে তাঁকে প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা দেয়া হয়েছে।
দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও ছড়িয়েছে তাঁর নাম। এশিয়ার প্রভাবশালী নারী মেয়রদের তালিকায় এসেছে তার নাম। ২০১৬ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রভাবশালী সাময়িকী দ্য এশিয়ানে প্রকাশিত এশিয়ার ২০ নারী মেয়রের তালিকায় আইভী সপ্তম প্রভাবশালী নারী মেয়র হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। তিনি সমাজসেবায় বাংলা একাডেমির সম্মানসূচক ফেলোশিপ পেয়েছেন।
পৌরসভায় চেয়ারম্যান ও সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মিলিয়ে গত ২১ বছর টানা জনপ্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। তাঁর হাত ধরেই নারায়ণগঞ্জের অনেক দৃশ্যমান উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হয়েছে। এই দীর্ঘ সময়ে তাঁর বিরুদ্ধে কোনো দুর্নীতি কিংবা অনিয়মের অভিযোগ ওঠেনি। তিনি বরাবর শহরের দখলদার ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। এমনকি কখনো কখনো দলীয় পরিচয়ের বাইরে গিয়ে `ন্যায্যতার প্রশ্নে` সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। নারায়ণগঞ্জে দীর্ঘদিন ধরে সন্ত্রাস, হত্যা, চাঁদাবাজি, মাদকের ভয়াবহ বিস্তারের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। এই লড়াইয়ে সেলিনা হায়াৎ আইভী তার নিজ দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধেও সাহসের সঙ্গে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
শুভ জন্মদিনে বিভিন্ন শ্রেনী পেসার মানুষ প্রিয় গণমানুষের নেতা আইভীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। #