মিল কারখানার দূষিত বর্জের ধ্বংস হচ্ছে ব্রহ্মপুত্র নদী
নিজাম উদ্দিন আহমেদ রুপগঞ্জ প্রতিবেদেকঃ
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ আড়াইহাজার ও সোনারগাঁ উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে ব্রহ্মপুত্র শাখা নদ। এ নদের দুই তীর ঘেষে গড়ে উঠা মিল কারখানাগুলোর বর্জের পানিতে ধ্বংস হচ্ছে ব্রহ্মপুত্র নদী।
এতে করে তিন উপজেলার কৃষককূল সহ সাধারণ মানুষও চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রূপগঞ্জ উপজেলার মুড়াপাড়াসংলগ্ন শীতলক্ষ্যা নদী থেকে শুরু হয়েছে ব্রহ্মপুত্রের শাখা নদটি। এটি রূপগঞ্জ উপজেলায় প্রায় ছয় কিঃমিঃ প্রবাহিত হয়ে আড়াইহাজার ও সোনারগাঁ দিয়ে মেঘনায় গিয়ে মিশেছে। সরু এ নদ দিয়ে আড়াইহাজার ও সোনারগাঁ বিভক্ত। এটি আড়াইহাজার উপজেলার পশ্চিম পাশের প্রায় অর্ধশত গ্রামের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
গত ২৫ জানুয়ারি আড়াইহাজার উপজেলার রূপগঞ্জ ও আড়াইহাজারের উপরে বালিয়াপাড়া ব্রিজ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, উত্তর দিক থেকে আসা ব্রহ্মপুত্র নদের পানি একেবারে কালো। সমানতালে নদীতে পড়ছে মিল কারখানা ও ডাইং কারখানার বর্জের পানি। বিষাক্ত হয়ে পড়ার কারণে নদের পানি ব্যবহার করে না এলাকাবাসী। ২০-২২ বছর আগেও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি দিয়ে হাজার হাজার একর জমিতে বোরো ধানের চাষসহ গৃহস্থালির সব কাজই করতেন কৃষকেরা। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে অভিযোগ উঠেছে হরগাঁও এলাকায় সুমন, সাইফুল, রাজু ও জুয়েল সহ ১৬টি ডাইং কারখানার বর্জে নদের পানি দুষিত হচ্ছে। তারা স্থানীয় প্রভাবশালীদের ক্ষমতা বলে কারখানাগুলো চালিয়ে আসছে।
এছাড়াও সুমন সাইফুল ও কাদিরের মোবেল কারখানার পোড়া মবেলের দুর্গন্ধে এলাকার মানুষের বসোবাস অনোপযোগী হয়ে পড়ছে। বালিয়া পাড়া ব্রিজ এলাকায় প্রায় ১৬টি ডাইং কারখানার পানি ব্রহ্মপুত্র নদীতে পড়তে দেখা যায়।
আড়াইহাজার দুবতারা কালীবাড়ি ও গিরদা এলাকায় ১২/ ১৪ টি ডাইং কারখানা গড়ে তুলেছে। সোনারগাঁ উপজেলা ও নরসিংদী সদর উপজেলার ব্রহ্মপুত্রের দুই পাড়ে গড়ে উঠা ডাইং কারখানার বর্জ্যেও এই নদের পানি দূষিত হচ্ছে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর এ দূষিত পানি সোনারগাঁ উপজেলা দিয়ে মেঘনায় মিশে যাচ্ছে।
রুপগঞ্জ উপজেলার হরগাঁও এলাকার জুয়েল মিয়া বলেন এক সময় আমরা এই নদীর পানিতে গোসল করতাম, নদীতে প্রচুর মাছও ছিল এখন বর্জ্যের পানিতে সব শেষ হয়ে গেছে এখন আর মাছও নাই গোসল করার সুযোগও নাই। ব্রহ্মপুত্রের
এই অবনতির পিছনে একমাত্র ডাইং কারখানার মালিকরাই দায়ী।
আড়াইহাজারের কদমতলী গ্রামের হারেছ মিয়া বলেন, ‘কারখানার পানিতে নদীর পানি দূষিত হইয়া গেছে। ২০ বছর ধইরা পানি দূষিত হইতাছে। নদীতে একসময় দেশি অনেক রকমের মাছ পাওয়া যাইত। কিন্তু এখন পাওয়া যায় না।’ মারুয়াদী গ্রামের ইউনুছ মিয়া বলেন, ‘রূপগঞ্জের ডাইং কারখানার রঙিন পানিতে নদীর পানি নষ্ট হইয়া গেছে। এই পানি লাগলে শরীর চুলকায়। আগে পানি দিয়া দুই ধারের জমিতে বোরো ধানের ব্যাপক চাষ হইত। কিন্তু পানি দূষিত হওয়ায় ধানচাষ কল্পনাই করা যায় না।’
সোনারগাঁয়ের ইটবারদী গ্রামের বাসিন্দা স্বপন মিয়া বলেন, ‘একসময় নদীর পানি দিয়া গোসল করা, রান্নার কাজসহ সব ধরনের কাজ করত মানুষ। আর এখন পানির পচা গন্ধে কাছে যাওয়া যায় না। বর্ষা মৌসুমে অন্য জায়গা থেকে কিছু মাছ এই নদীতে আসলেও কয়েক দিন থাকার পর মইরা ভাইসা ওঠে। নদীডারে বাঁচাইতে ২০ বছরেও কোনো উদ্যোগ আমরা দেখি নাই। এই নদীডারে বাঁচাইতে পারলে এলাকার কয়েক লাখ মানুষ উপকার পাইত।’
আড়াইহাজারের ইউএনও বলেন, ‘আমাদের এলাকার যেসব কারখানা থেকে রংমিশ্রিত পানি নদে ফেলা হচ্ছে, প্রথমে ওই সব কারখানা বন্ধ করা হবে। পরে নরসিংদীর কারখানাগুলো বন্ধ করার চেষ্টা চালাতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘নদ রক্ষা বিষয়ে উপজেলা পরিষদের সভায় আমরা আলোচনা করেছি এবং তাতে জনসচেতনতা বাড়াতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।’
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে নারায়ণগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. মুজাহিদুল ইসলাম মুঠোফোনে দৈনিক আমার সংবাদকে বলেন, আড়াইহাজার ও সোনারগাঁয়ের ডাইং কারখানাগুলোতে বর্জ্য পরিশোধনাগার (ইটিপি) আছে। তবে কখনো কখনো কিছু কারখানা বর্জ্য পরিশোধন না করেই নদে ছেড়ে দেয়। তবে কোন কারখানাগুলো নদ দূষণ করছে, স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশবাদী সংগঠন তা সুনির্দিষ্টভাবে জানালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।#