শিরোনাম
রোকেয়া দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, না’গঞ্জ জেলার আলোচনা সভা
নারায়ণগঞ্জের খবর প্রতিবেদকঃ নারী শিক্ষার আলোকবর্তিকা রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন স্মরণে রোকেয়া দিবস পালন উপলক্ষে আলোচনা সভা সংগঠন কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। বুধবার ১১ ডিসেম্বর বিকাল ৩ টায় জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে সভার সূচনা করা হয়। সংগঠন কার্যালয় প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা সভাপতি ও কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ, গবেষণা, পাঠাগার সম্পাদক রীনা আহমেদ।
সভায় বক্তব্য প্রদান করেন, নারায়ণগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাসুদা আক্তার, সাংবাদিক মনিকা, সরকারি কলেজের ছাত্রী ও স্কাউট রেঞ্জার রহিমা খাতুন রিমি, গোদনাইল উচ্চ বিদ্যালয়ের স্নেহা আক্তার, আঁখি ও সুমাইয়া ইসলাম, ভূইয়াপাড়া মডেল স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মাসুদ রানা, ধনকুন্ডা পপুলার হাই স্কুলের ছাত্রী জেসমিন আক্তার রিভার, মহিলা পরিষদের পক্ষে সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি আনজুমান আরা আকসির ও প্রীতিকণা দাস, সাধারণ সম্পাদক রহিমা খাতুন, সহ-সাধারণ সম্পাদক শোভা সাহা প্রমূখ। পরিচালনা করেন সংগঠন সম্পাদক কানিজ ফাতেমা। কবিতা আবৃত্তি করেন সদস্য বিশিষ্ট আবৃত্তিকার ফাহমিদা আজাদ ও তিথি সুবর্ণা, গান পরিবেশন করেন সদস্য ও সংগীত শিল্পী শাশ্বতী পাল, দীপা রায়, মল্লিকা বিশ্বাস প্রমুখ।
বক্তারা বলেন- রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন হলেন একজন বাঙালি চিন্তাবিদ, প্রাবন্ধিক, ঔপন্যাসিক, সাহিত্যিক ও সমাজ সংস্কারক। তিনি প্রথম বাঙালি নারীবাদী। নারী মুক্তির স্বপ্নদ্রষ্টা রোকেয়া সাখাওয়াৎ হোসেন আজও নারী আন্দোলনের শক্তির আধার । রংপুরের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম নারী আন্দোলনের অগ্রদূত রোকেয়া । তাঁর পরিবারে প্রবেশ করেছিল আধুনিক ইংরেজী ও বাংলা শিক্ষার আলোক ছটা। তবে এই দ্যুতিময় রশ্মিতে অবগাহন করার অধিকার ছিল না অন্তঃপুরে বাসী রমনীকুলের। শিক্ষার আলোকবর্তিকা রোকেয়া অন্তঃপুরের বদ্ধ অর্গল ভেঙেছেন নিজের জীবনে, নারী সমাজকে আহ্বান জানিয়েছেন বিস্তৃত অঙ্গনে। তার সেই অভিযাত্রায় পাশে ছিলেন বোন করিমুন্নেসা, জেষ্ঠ্য ভ্রাতা ইব্রাহিম সাবের ও স্বামী খান বাহাদুর সৈয়দ সাখাওয়াৎ হোসেন। পরিবারের সদস্যদের ও ব্যক্তিগত সহায়তায় তিনি নিজেকে তৈরি করেছেন আর সমাজের প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করেছেন নিজের সাহস ও উদ্যম।এই পথের বাধা সমূহকে অতিক্রম করার লক্ষ্যে নারী জীবনের অবরোধকে ভেঙে শিক্ষার জগতের প্রবেশের পথ দেখিয়েছেন তিনি। নারী শিক্ষার গুরুত্ব নিয়ে রচনা করেছেন অসংখ্য প্রবন্ধ ।
প্রতিষ্ঠা করেছেন “রোকেয়া সাখাওয়াৎ মেমোরিয়াল স্কুল”। বহু প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করতে হয়েছে এই স্কুল প্রতিষ্ঠায়। নারীকে অবমূল্যায়নকর সামাজিক বিধি, কুসংস্কারের বিরুদ্ধে তাঁর রচনাসমূহ আজও আলোচিত। নারীর মানবিক বিকাশের ক্ষেত্রে সেগুলো আজও সমসাময়িক। শুধুমাত্র রচনার মাধ্যমে নয় নারী সমাজকে সংগঠিত করার লক্ষ্যে ১৯১৬ সালে গড়ে তোলেন “আঞ্জুমান খাওয়াতীনে ইসলাম “নামে মহিলা সংগঠন । এই সংগঠন নারী সমাজকে সামাজিক দায়িত্ব পালনে উদ্বুদ্ধ ও নিয়োজিত করেন । তাঁর নিরলস কর্মপ্রচেষ্টা নারীর জীবনের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে আজও আলোক বর্তিকা।
ছোটগল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, উপন্যাস, বিজ্ঞান কল্পকাহিনী ও শ্লেষাত্মক রচনায় রোকেয়ার স্টাইল ছিল স্বকীয় বৈশিষ্ট্যমন্ডিত। উদ্ভাবনা, যুক্তিবাদিতা এবং কৌতুকপ্রিয়তা তার রচনার সহজাত বৈশিষ্ট্য। বিজ্ঞান সম্পর্কেও তার অনুসন্ধিৎসার পরিচয় পাওয়া যায় বিভিন্ন রচনায়। মতিচূর (১৯০৪) প্রবন্ধগ্রন্থে রোকেয়া নারী-পুরুষের সমকক্ষতার যুক্তি দিয়ে নারীদের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক স্বাবলম্বিতা অর্জন করে সম-অধিকার প্রতিষ্ঠায় আহ্বান জানিয়েছেন এবং শিক্ষার অভাবকে নারীর পশ্চাৎপদতার কারণ বলেছেন। তার সুলতানার স্বপ্ন (১৯০৫) নারীবাদী ইউটোপিয়ান সাহিত্যের ক্লাসিক নিদর্শন বলে বিবেচিত। পদ্মরাগ (১৯২৪) তার রচিত উপন্যাস। অবরোধ-বাসিনীতে (১৯৩১) তিনি অবরোধপ্রথাকে বিদ্রূপবাণে জর্জরিত করেছেন। তাঁর রচনা নারী আন্দোলনের রুপরেখা প্রণয়নে আজও অন্যতম সহায়ক। তাঁর কর্মকান্ড শুধু নারী উন্নয়ন নয়, নারী-পুরুষ, সার্বিক সামাজিক উন্নয়নের জন্য চর্চা করা জরুরী। তবে দেশ উন্নত হবে।
স্কুল কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সংগঠনের সদস্যসহ শতাধিক লোক উপস্থিত ছিলেন।#