আলী আহাম্মদ চুনকা একজন ভাল মানুষ অবিসংবাদিত নেতা ছিলেন- এ্যাড. মাসুম


নারায়ণগঞ্জের খবর প্রতিবেদকঃ মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রামের সংগঠক, ভাষাসৈনিক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর, নারায়ণগঞ্জ জেলা ও শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি, নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান পৌরপিতা জননেতা আলী আহাম্মদ চুনকার ২৫ শে ফেব্রুয়ারী স্মরন সভা ও প্লে পেন ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের বার্ষিক মিলাদ মাহফিল ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরনী অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে প্লে পেন ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে এ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি দৈনিক খবরের পাতার সম্পাদক এ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান মাসুম বলেছেন, আলী আহাম্মদ চুনকা গণমানুষের জন্য কাজ করে মানুষের হৃদয়কে জয় করেছেন, স্বাধীনতার পর প্রথম নারায়ণগঞ্জ পৌরসভাী প্রতিদ্বন্দ্বীতামূলক নির্বাচনে গণমানুষের নেতা হিসেবে আলী আহাম্মদ চুনকা নির্বাচিত হয়েছিলেন। আলী আহাম্মদ চুনকা সাহেব অত্যন্ত ভাল মানুষ ছিলেন, এ দেশের নির্যাতিত শ্রমিক শ্রেনীর একজন অবিসংবাদিত নেতা ছিলেন। একই সাথে তিনি শিক্ষানুরাগী ছিলেন। নিজের হাতে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। অগনিত সংগঠনের সাথে থেকে সামাজিক উন্নয়ন ও মানুষের জন্য কাজ করেছেন। আলী আহম্মদ চুনকা তার কর্মে নিবেদিত প্রান ছিল আমি তাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি।
আজ তার সুযোগ্য কন্যা তার পিতার নীতির পদ অনুস্মরন করে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের বার বার নির্বাচিত মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী একজন প্রতিবাদি মানুষ। নারায়ণগঞ্জে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আপোষহীন ভাবে দায়িত্ব পালন করে উন্নয়নের কাজ করেছেন। আমি মেয়র আইভীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।
অনুষ্ঠানে সভাপতি মোহাম্মদ আলী রেজা রিপন বলেছেন, বাবা আমদের অনেক ছোট রেখে মৃত্যু বরন করেছেন। আমি তখন ছোট বাবার জানাজায় দেখলাম মন্ডলপাড়া থেকে ২ নং রেলগেই পাড় হয়ে ব্যাপক লোকসমাগম ঘটেছে। তখন বুঝিনি বাবা এত জনপ্রিয়। যতই দিন যাচ্ছে আজ ৪১ বছর পার হয়ে গেছে, তখই উপলব্ধি করতে পারছি বাবার জনপ্রিয়তা। আমরা বাবার নীতি অনুস্মরন করে মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আপনারা সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন।
এসময় অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জাহিদুল হক দিপু, প্লে পেন ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের প্রধান শিক্ষক সহ এলাকার গন্যমান্য ব্যাক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। পরে প্লে পেন ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের বার্ষিক মিলাদ মাহফিল, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরনী অনুষ্ঠিত হয়।
চুনকার কর্মময়জীবনঃ-
১৯৩৪ সালে ১৬ ডিসেম্বর দেওভোগের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে আলী আহাম্মদ চুনকা জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ওয়াহেদ আলী, মাতার নাম গোলেনুর বেগম। ১৯৫২ সালে তিনি মহান ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৬২ সালে তিনি বিডি মেম্বার নির্বাচিত হন। ওই বছর তিনি হামুদুর রহমান শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন।১৯৬৬ সালে আলী আহাম্মদ চুনকা বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা আন্দোলনে জনমত গড়ে তুলতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন এবং নেতৃত্ব দেন। ১৯৬৯ সালে তিনি ঐতিহাসিক গণঅভ্যূত্থানে নেতৃত্ব দেন। ১৯৬৮ সালে তিনি নারায়ণগঞ্জ শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৭০ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচনে তিনি নারায়ণগঞ্জ মহকুমা থেকে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে জনমত সৃষ্টিতে অসামান্য অবদান রাখেন।
১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং যুদ্ধে তরুণ ও যুব সমাজকে সংগঠিত করেন আলী আহাম্মদ চুনকা। ১৯৭২ সালে তিনি বাংলাদেশ পাট শ্রমিক সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লব সফল করতে মাঠ পর্যায়ে দলীয় নেতা কর্মীদের সংগঠিত করেন। ৭৫’র ১৫ই আগষ্ট স্বপরিবারে বঙ্গবন্ধু শাহাদাৎ বরণ করলে মনোবল ভেঙ্গে যাওয়া নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত এবং সংগঠিত করেন।
১৯৭৫ সালের ১৬ ডিসেম্বর জিমখানা মাঠে বিজয় দিবসের সরকারি অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ এবং বঙ্গবন্ধু হত্যাকে কারবালা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তুলনা করেন। বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর দীর্ঘদিন তাকে গৃহবন্দি রাখা হয়। স্থানীয় সেনা ক্যাম্প ও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ ও মানসিক নির্যাতন করে।
১৯৭৮ সালে চুনকা নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭৯ সালে তিনি নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করেন। ১৯৮০ সালে পুরাতন কোর্ট ভবনে প্রকাশ্যে বঙ্গবন্ধুর প্রতি কটূক্তি করায় শেরে বাংলার জামাতা সোলায়মান রাজাকারকে চপেটাঘাত করেন। তিনি পর পর দুই বার নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এছাড়াও তিনি আমৃত্যু ৭২টি সামাজিক সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের আজীবন সদস্য ছিলেন।
১৯৮৫ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ভোরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ক্ষণজন্মা মহাপুরুষ আলী আহাম্মদ চুনকা ইন্তেকাল করেন। তার নামাজের জানাজায় গণমাধ্যমের পরিসংখ্যান মতে প্রায় দেড় লাখ মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
আলী আহাম্মদ চুনকা শুধু আওয়ামী লীগের নেতা ছিলেন না তিনি প্রতিটি রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদেরও অত্যন্ত শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন। তিনি নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার দায়িত্বে থাকাকালীন নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাব, সুধীজন পাঠাগার সহ প্রায় অর্ধশত শিক্ষা প্রতিষ্ঠার জন্য জায়গা বরাদ্দ দেন। #