শিরোনাম
১২ বছরেও ত্বকী হত্যার বিচার হয়নি ক্ষোভ | অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দ্রুত বিচারের দাবি


নারায়ণগঞ্জের খবর প্রতিবেদকঃ আজ ৬ ই মার্চ নারায়ণগঞ্জের মেধাবী কিশোর তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার ১২ বছর । আলোচিত এ হত্যাকান্ডের এতো সময় পেরিয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করেনি তদন্তকারী সংস্থা র্যাব। ত্বকীর পিতার অভিযোগ খুনিরা প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য হওয়ায় বিচার আটকে রেখেছিলো ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার। এদিকে অন্তর্বর্তী কালিন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ত্বকী হত্যা মামলায় ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হলেও এখনো অনেকে পলাতক। এ হত্যাকান্ডের দ্রুত বিচার করার দাবি জানিয়েছে পরিবার।

২০১৩ সালের ৬ মার্চ নারায়ণগঞ্জ নগরীর শায়েস্তা খাঁন রোডের বাসা থেকে বেরিয়ে সুধীজন পাঠাগারে যাওয়ার পথে নিখোঁজ হয় মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী। দুই দিন পর ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনী শাখা খাল থেকে ত্বকীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সে সময় দেশব্যাপী এ হত্যাকান্ডের ঘটনা আলোচিত হয়ে উঠে। নারায়ণগঞ্জে পালিত হয় হরতাল-সমাবেশসহ নজিরবিহীন প্রতিবাদ কর্মসূচি। এ ঘটনায় নিহত ত্বকীর পিতা রফিউর রাব্বি নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে হাইকোর্টের নির্দেশে মামলা তদন্তের দায়িত্ব পায় র্যাব। সেই মামলায় ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ৫ জনকে গ্রেপ্তার করে করে সংস্থাটি। তাদের মধ্যে ইউসুফ হোসেন লিটন ও সুলতান শওকত ভ্রমর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। জবানবন্দিতে উঠে আসে আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে ত্বকীকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়। এর আগে আজমেরী ওসমানের টর্চার সেলে অভিযান চালায় র্যাব। হত্যাকান্ডের এক বছর পর ২০১৪ সালে ৮ মার্চ তৎকালিন র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসানও সংবাদ সম্মেলন করে উল্লেখ করে নারায়ণগঞ্জ ৫ আসনের প্রয়াত সংসদ সদস্য নাসিম ওসমানের ছেলে আজমেরীসহ ১১ জন কিশোর ত্বকী হত্যায় অংশ নেয়। জানানো হয় দ্রুত আদালতে অভিযোগ পত্র দাখিল করা হবে। কিন্তু হত্যাকান্ডের ১২ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়নি। তবে এরই মধ্যে গত ৫ আগষ্ট আওয়মী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী কালিন সরকার দায়িত্ব নিলে র্যাব ত্বকী হত্যা মামলায় নতুন করে আরও ৬ জনকে গ্রেপ্তার করে। তাদের মধ্যে আজমেরী ওসমানের গাড়ীচালক ও সহযোগীরা রয়েছে। তবে পালিয়েছে আজমেরীসহ আরও অনেকে।
নিহত ত্বকীর মা রওনক রেহেনা বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে ত্বকী হত্যার বিচার কার্যকর করা হোক এটাই আমরা চাই। এ সরকারের সময় সকল আটকে থাকা বিচার হবে বলে আমরা আশা করছি।

নিহত ত্বকীর পিতা রফিউর রাব্বি বলেন, ত্বকী হত্যার ১২ বছর শেখ হাসিনার আমলে এ হত্যাকান্ডের বিচার আটকে রাখা হয়েছিল। ৫ আগস্টের পরে এই অন্তর্বর্তী সরকারের সময় ত্বকীর মামলার কিছুটা গতিশীলতা ফিরে আসে। এখন আবার কিছুটা ধীরগতি হচ্ছে। এ হত্যার নির্দেশদাতা শামীম ওসমান সহ হত্যাকান্ডে জড়িত আজমীর ওসমান অয়ন ওসমান সহ প্রকৃত জড়িতদের নাম উল্লেখ করে একটি পূর্নাঙ্গ চার্জশীট দাখিল করার দাবি জানাচ্ছি। ত্রুটিপূর্ণ অভিযোগ পত্র যেন না হয় এবং যারা যুক্ত সবাইকে এই অভিযোগপত্রে যুক্ত করে পূর্ণাঙ্গ করা হয়। এটাই আমরা আশা করি।
ত্বকী হত্যা মামলা আইনজীবী প্রদীপ ঘোষ বলেছেন, ত্বকী হত্যা মামলার অভিযোগ পত্র জমা দেয়ার ৮১ ধার্য তারিখ গেলেও এখনও অভিযোগ পত্র দাখিল হয়নি। একজন বিচার প্রার্থীর বিচার পাওয়া সংবিধানিক অধিকার। তাই এ সরকারের কাছে আশা করছি দ্রুত ত্বকী হত্যার বিচার সম্পন্ন করা হোক।
র্যাব ১১ অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন, ৫ ই আগস্টের পর এ মামলায় ৬ জনকে গ্রেফতার করেছি।মামলাটি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখছি। আমরা এ বিষয়ে মামলার বাদি ত্বকীর পিতার সাথে যোগাযোগ রাখছি। র্যাবের তদন্ত শেষ হলেই আমরা দ্রুত মামলার চার্জশীট দাখিল করবো।
ত্বকী হত্যা মামলায় আসামীদের গ্রেপ্তারসহ দ্রুত অভিযোগপত্র প্রদান ও বিচারের দাবিতে প্রতি মাসে মোমশিখা প্রজ্বালন কর্মসূচি পালন করে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট। শিশু ত্বকী হত্যার ১২ বছর উপলক্ষে তিনদিন ব্যাপী কর্মসূচী ঘোষণা করেছে সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চ। #
