এ জনপদের মানুষ বহুকাল ক্ষণজন্মা মানবদরদী জননেতা চুনকাকে স্মরন রাখবে
নারায়ণগঞ্জের খবর প্রতিবেদকঃ মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রামের সংগঠক, ভাষাসৈনিক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর, নারায়ণগঞ্জ জেলা ও শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি, নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান পৌরপিতা জননেতা আলী আহাম্মদ চুনকার ২৫ শে ফেব্রুয়ারী স্মরনে বঙ্গসাথী ক্লাবের আলোচনা সভা ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে ।আলোচনা সভায় আলোচকবৃন্দরা বলেন, প্রয়াত পৌরপিতা জননেতা আলী আহাম্মদ চুনকা সবসময় মানুষের সহযোগিতায় কাজ করেছেন। তিনি মানুষকে ভালবাসতেন সহজে তাদের আপন করে নিতেন। তাই সবার প্রিয় চুনকা ভাই সকল মহলে জনপ্রিয় হয়ে উঠেন। এ জনপদের মানুষ ক্ষনজন্মা মানবদরদী জননেতা চুনকা ভাইকে বহু কাল স্মরন রাখবেন।আজ সোমবার বাদ মাগরিব শহরের পশ্চিম দেওভোগ এলাকায় বঙ্গসাথী ক্লাব কার্যালয়ে এ মিলাদ মাহফিল ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। অলোচনা সভায় অংশ গ্রহন করেন পৌরপিতার বড় ছেলে ও বঙ্গসাথী ক্লাবের উপদেষ্টা মোহাম্মদ আলী রেজা রিপন, বঙ্গসাথী ক্লাবের উপদেষ্টা আফছার উদ্দিন আফসু, আজিজুল ইসলাম তপন, বঙ্গসাথী ক্লাবের সহ সভাপতি আঃ বর বনি, ফাইজুল ইসলাম রুবেল, সাধারণ সম্পাদক গোলাম সারোয়ার শুভ সহ বঙ্গসাথী ক্লাবের কার্যকরি ও সাধারন সদস্যরা এসময় উপস্থিথ ছিলেন। আলোচনা সভা শেষে মিলাদ মাহফিল ও দোয়া পরিচালনা করেন, মাওলানা সাজ্জাদ হেসেন নূরী।১৯৩৪ সালে ১৬ ডিসেম্বর দেওভোগের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে আলী আহাম্মদ চুনকা জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ওয়াহেদ আলী, মাতার নাম গোলেনুর বেগম। ১৯৫২ সালে তিনি মহান ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৬২ সালে তিনি বিডি মেম্বার নির্বাচিত হন। ওই বছর তিনি হামুদুর রহমান শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন।১৯৬৬ সালে আলী আহাম্মদ চুনকা বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা আন্দোলনে জনমত গড়ে তুলতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন এবং নেতৃত্ব দেন। ১৯৬৯ সালে তিনি ঐতিহাসিক গণঅভ্যূত্থানে নেতৃত্ব দেন। ১৯৬৮ সালে তিনি নারায়ণগঞ্জ শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৭০ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচনে তিনি নারায়ণগঞ্জ মহকুমা থেকে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে জনমত সৃষ্টিতে অসামান্য অবদান রাখেন।
১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং যুদ্ধে তরুণ ও যুব সমাজকে সংগঠিত করেন আলী আহাম্মদ চুনকা। ১৯৭২ সালে তিনি বাংলাদেশ পাট শ্রমিক সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লব সফল করতে মাঠ পর্যায়ে দলীয় নেতা কর্মীদের সংগঠিত করেন। ৭৫’র ১৫ই আগষ্ট স্বপরিবারে বঙ্গবন্ধু শাহাদাৎ বরণ করলে মনোবল ভেঙ্গে যাওয়া নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত এবং সংগঠিত করেন।
১৯৭৫ সালের ১৬ ডিসেম্বর জিমখানা মাঠে বিজয় দিবসের সরকারি অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ এবং বঙ্গবন্ধু হত্যাকে কারবালা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তুলনা করেন। বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর দীর্ঘদিন তাকে গৃহবন্দি রাখা হয়। স্থানীয় সেনা ক্যাম্প ও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ ও মানসিক নির্যাতন করে।
১৯৭৮ সালে চুনকা নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭৯ সালে তিনি নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করেন। ১৯৮০ সালে পুরাতন কোর্ট ভবনে প্রকাশ্যে বঙ্গবন্ধুর প্রতি কটূক্তি করায় শেরে বাংলার জামাতা সোলায়মান রাজাকারকে চপেটাঘাত করেন। তিনি পর পর দুই বার নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এছাড়াও তিনি আমৃত্যু ৭২টি সামাজিক সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের আজীবন সদস্য ছিলেন।
১৯৮৫ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ভোরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ক্ষণজন্মা মহাপুরুষ আলী আহাম্মদ চুনকা ইন্তেকাল করেন। তার নামাজের জানাজায় গণমাধ্যমের পরিসংখ্যান মতে প্রায় দেড় লাখ মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
আলী আহাম্মদ চুনকা শুধু আওয়ামী লীগের নেতা ছিলেন না তিনি প্রতিটি রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদেরও অত্যন্ত শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন। তিনি নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার দায়িত্বে থাকাকালীন নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাব, সুধীজন পাঠাগার সহ প্রায় অর্ধশত শিক্ষা প্রতিষ্ঠার জন্য জায়গা বরাদ্দ দেন। #