শিরোনাম
শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের মতবিনিময় সভা
নারায়ণগঞ্জের খবর ডেস্কঃ সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার উদ্যোগে জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০২০ সর্বজনীন, বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষার দাবি কি আদৌ বাস্তবায়িত হবে ?’ শীর্ষক মতবিনিময়সভা অনুষ্ঠিত হয়। এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মঙ্গলবার ১৪ মার্চ সকাল ১১ টায় ২নং রেল গেইটস্থ সংগঠনের জেলা কার্যালয়ে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি মুন্নী সরদারের সভাপতিত্বে ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহম্মেদ রাতুলের সঞ্চালনায় মতবিনিময়সভায় বক্তব্য রাখেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি, বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য ও নারায়ণগঞ্জ জেলার আহবায়ক কমরেড নিখিল দাস,
চেঞ্জেজ স্কুলের সাবেক অধ্যক্ষ মাকসুদ ইবনে রহমান, নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক শরীফ উদ্দিন সবুজ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ছাত্র নেতা মুক্তা বাড়ৈ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক সুলতানা আক্তার, নারায়ণগঞ্জ আইডিয়াল স্কুলের শিক্ষক আবিদা রুনা মতবিনিময়সভার লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট জেলার অর্থ সম্পাদক নাছিমা সরদার।
নেতৃবৃন্দ বলেন, এ বছর সরকার জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০২০ বাস্তবায়ন শুরু করেছে। ২০২১ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০২০ রূপরেখা অনুমোদন দেন। সমাজের বিভিন্ন অংশের শিক্ষক, শিক্ষাবিদ, ছাত্র সংগঠনসমূহ এদের কারো সাথেই এটা প্রণয়নের আগে কোন আলোচনা করেনি। সরকার তার নিজস্ব বুদ্ধিজীবী এবং আমলাদের উপর নির্ভর করেই এই শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করেছে। ২০২৩ সাল থেকে ধাপে ধাপে এই শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন হচ্ছে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, একমুখী শিক্ষা বলতে আমরা বুঝি একই ধারার বা একই পদ্ধতির শিক্ষা। কেউ শুধুমাত্র বিজ্ঞানই পড়বে, ইতিহাস সম্পর্কে তার ন্যূনতম ধারণা থাকবে না, কেউ শুধু গণিতই পড়বে, সমাজবিজ্ঞান সম্পর্কে তার কোন ধারণাই থাকবে না, এটা একমুখী শিক্ষা না। অপর দিকে কেউ ইংরেজি মিডিয়ামে এক ধরণের পড়া পড়বে, কেউ বাংলা মিডিয়ামে আরেক ধরনের পড়া পড়বে, কেউ মাদ্রাসায় এক জিনিস পড়বে, আবার কেউ কারিগরি বিভাগে পরে পাবে আরেক দৃষ্টিভঙ্গি। এটা জাতিকে দ্বিধাবিভক্ত করে ও সামগ্রিক কোন শিক্ষা মানুষ পায় না। কিন্তু এই কারিকুলামে এই বিভিন্ন ধারার শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে কোন কথা বলা হয়নি। যেখানে আগে নবম-দশম শ্রেণীতে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও জীববিজ্ঞান মিলিয়ে মোট ৩০০ নম্বরের বিজ্ঞান পড়ানো হতো , এর পাশাপাশি ২৫ নম্বর করে ল্যাবও হত। এখন মাধ্যমিক স্তরে বিজ্ঞানের পরিসর নেমে আসবে মাত্র ১০০ নম্বরে। মানে গুরুত্ব ও পরিসরের দিক থেকে বিজ্ঞান শিক্ষা কমে যাচ্ছে এক-তৃতীয়াংশ। উচ্চ মাধ্যমিকে বিজ্ঞান বিভাগে বর্তমানে গণিত, পদার্থ, রসায়ন ও জীববিজ্ঞান প্রতিটি বিষয়ে আলাদা ২০০ নম্বরের বণ্টন থাকে। নতুন শিক্ষাক্রমে এটাও থাকবে না। তখন ঐচ্ছিক বিশেষায়িত বিষয় থেকে যেকোনো তিনটি বিষয়ে পড়ার সুযোগ থাকবে। এছাড়াও মাধ্যমিক স্তরে বাদ দেওয়া হয়েছে উচ্চতর গণিত এবং উচ্চমাধ্যমিক স্তরে বাদ দেয়া হয়েছে স্থিতি ও গতি বিদ্যা। রূপরেখায় বারবার বিজ্ঞান শিক্ষার বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করা হলেও এই সিদ্ধান্ত কোনভাবেই বিজ্ঞান শিক্ষাকে উৎসাহ দেয়ার মত কোন সিদ্ধান্ত হতে পারে না। পর্যাপ্ত দক্ষ শিক্ষক, পরীক্ষাগার, শিক্ষা উপকরণের অভাবের কারণে এবং বিজ্ঞান শিক্ষা সম্পর্কিত উদাসীনতার কারণে শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান শিক্ষার প্রতি অনীহা দিনদিন বেড়েই যাচ্ছে। এরপর যদি বিজ্ঞান ও গণিত শিক্ষার ভিতটাকে আরও দুর্বল করে দেওয়া হয়, তাহলে উচ্চমাধ্যমিকে এসে শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান বিভাগে পড়ার আগ্রহ উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাবে। একমুখী শিক্ষা মানে সব বিষয় থেকে এক চিমটি নিয়ে ‘গড়পড়তা’ একটা শিক্ষা দেওয়া নয়। বিজ্ঞান শিক্ষার গুরুত্ব কমিয়ে এনে জীবন ও জীবিকা, ভাল থাকা, তথ্য প্রযুক্তি, ধর্ম ও নৈতিকতা শিক্ষাসহ এমন কিছু বিষয় এখানে এত গুরুত্বের সাথে যুক্ত করা হয়েছে তাতে শিক্ষার্থীদের ওপর কোন ধরণের প্রভাব পড়বে তা প্রশ্ন সাপেক্ষ।
নেতৃবৃন্দ বলেন, প্রাথমিক ও প্রাক-প্রাথমিকে জীবন-জীবিকা পড়ানো হবে বলে পাঠ্যক্রমে উল্লেখ করা হয়েছে। শিশুদের মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষা স্তরেই কথিত জীবনমুখী চিন্তার প্রবেশ ঘটানো খুবই অবৈজ্ঞানিক ও অযৌক্তিক। জীবন ও জীবিকার বিবরণে দশম শ্রেণীর মধ্যে পরিবারের আয়ে অবদান রাখতে পারার যোগ্যতা তৈরির কথা বলা হয়েছে। এটা কোন শিক্ষাক্রমের উদ্দেশ্য হতে পারে কি? এর মধ্য দিয়ে স্বল্প শিক্ষিত সস্তা শ্রম দেয়ার উপযোগী মিস্ত্রি-কারিগর তৈরি হতে পারে, কিন্তু সুশিক্ষিত মানুষ তৈরি হতে পারে না। কারিগরি বা ব্যবহারিক জ্ঞান অবশ্যই প্রয়োজন বিষয়কে ভালভাবে জানার জন্য। একদল শিক্ষার্থীকে ঝরে পড়ার জন্য প্রস্তুত করা শিক্ষাক্রমের উদ্দেশ্য হতে পারে না। একটি শিক্ষাক্রমে সবকিছুকে আলাদা আলাদা বিষয় হিসেবে পড়ানোর প্রয়োজন নেই। সমন্বিত শিক্ষার দাবি আমরাসহ অনেকেই করেছি কিন্তু সমন্বিত শিক্ষা আর খন্ডিত শিক্ষা কখনো একই বিষয় নয়। সদিচ্ছা ও পরিকল্পনা থাকলে অনেক বিষয় থাকে যা সরাসরি পাঠ্যপুস্তকে না থাকলেও নানা সহশিক্ষা কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে শেখানো যায়। বই পড়ে শিক্ষার্থীরা নৈতিকতা অর্জন করে ফেলবে, এটা ভাবা বোধহয় আকাশ-কুসুম কল্পনা ছাড়া আর কিছুই নয়। এতে শুধু পাঠ্যবইয়ের বোঝাই বাড়বে, কাজের কাজ কিছুই হবে না। সামগ্রিক আলোচনায় মনে হয় শিক্ষার্থীদের কারিগরি দক্ষতা বাড়ানোই শিক্ষা ব্যবস্থার উদ্দেশ্য এবং শিক্ষাক্রমে সেই পরিকল্পনাই বিন্যস্ত করা হয়েছে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, নতুন বছরে সময়মত সকল শিক্ষার্থী বই পায়নি। অথচ সরকার প্রতি বছর বই উৎসব ঘোষণা করলেও নানা অবহেলা এবং অমনোযোগী ভূমিকা দেশবাসীকে হতবাক করেছে। এই বছরও ভুলে ভরা নিম্নমানের বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয়া হল। পাশাপাশি বইয়ের বিষয়বস্তু নির্ধারণ ও উপস্থাপনের ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়েছে, যা আমাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মনের উপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। অপরদিকে হু হু করে বাড়ছে বই, খাতা, কলমসহ সকল শিক্ষা উপকরণের দাম। এ পরিস্থিতিতে এই মতবিনিময়সভা সমাজের সচেতন মহলে বর্তমান শিক্ষাক্রমের অসাড়তার বিষয়ে ধারণা গড়ে তুলবে এবং সর্বজনীন, বিজ্ঞানভিত্তিক, সেক্যুলার, গণতান্ত্রিক, একই পদ্ধতির শিক্ষা ব্যবস্থার দাবিতে ঐক্যবদ্ধ ছাত্র আন্দোলন গড়ে তোলায় সহায়তা করবে। #