ইলিশের দাম বাড়াটা অযৌক্তিক নয়: প্রাণিসম্পদমন্ত্রী
সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ইলিশের দাম বাড়াটা অযৌক্তিক নয় বলে মন্তব্য করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।‘মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান ২০২২’ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সচিবালয়ের মৎস ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনের তিনি এ কথা করেন।মন্ত্রী বলেন, সারা বিশ্বে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি চলছে। যার প্রভাব ইলিশের উপরেও পড়েছে। ছেলেদের শ্রমিকের মজুরি, নৌকা ভাড়া জালের দামসহ বিভিন্ন উপকরণের দাম বেড়েছে। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ইলিশের দাম বাড়াটাও অযৌক্তিক নয়। তবে দাম ঠিক করার জন্য ভোক্তা অধিকার রয়েছে।ইলিশ মাছ দেশের মানুষের খানা ও নিরাপদ আমিষের যোগানের পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও রপ্তানি আয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে জানিয়ে শ ম রেজাউল করিম বলেন, দেশে মোট উৎপাদিত মাছের প্রায় ১২ দশমিক ২২ শতাংশ আসে শুধু ইলিশ থেকে যা একক প্রজাতি হিসেবে সর্বোচ্চ। জিডিপিতে এর অবদান শতকরা ১ ভাগের বেশি। বাংলাদেশের ইলিশ ইতোমধ্যে ভৌগলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার সর্বশেষ ২০১২ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী বিশ্বে ইলিশ আহরণে বাংলাদেশ শীর্ষে।বিশ্বের মোট উৎপাদিত ইলিশের ৮০ শতাংশের বেশি আহরিত হয় এদেশের নদ-নদী, মোহনা ও সাগর থেকে। প্রায় ৬ লাখ মানুষ ইলিশ আহরণে সরাসরি এবং ২০ থেকে ২৫ লাখ মানুষ ইলিশ পরিবহন, বিক্রয়, জাল ও নৌকা তৈরি, বরফ উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, রপ্তানি প্রভৃতি কাজে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত বলেও জানান তিনি।তিনি বলেন, ইলিশ সম্পদ সংরক্ষণ ও উন্নয়নে সময়োপযোগী এবং বাস্তবমুখী কার্যক্রম বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। দেশের মানুষের কাছে ইলিশ সহজলভ্য করার লক্ষ্যে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। ইলিশের টেকসই ও স্থায়িত্বশীল উৎপাদন নিশ্চিত করতে সমন্বিতভাবে কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।মা ইলিশ রক্ষায় ইলিশের বিজ্ঞানভিত্তিক প্রজনন সময় বিবেচনায় নিয়ে মৎস্য সংরক্ষণ আইন সংশোধন করে ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধের সময় ২২ দিন করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, প্রধান প্রজনন মৌসুমে ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধ সময়ে ইলিশ সমৃদ্ধ এলাকার জেলেদের জীবনধারণের জন্য ভিজিএফ খাদ্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নাহিদ রশীদ, মহাপরিচালক মাহবুবুল হক প্রমুখ।সংবাদ সম্মেলন জানানো হয়, চলতি বছর জাটকা ধরা নিষিদ্ধকালে দেশের ২০ জেলার ৯৭টি উপজেলায় জাটকা আহরণে বিরত ৩ লাখ ৯০ হাজার ৭০০ জেলে পরিবারকে ৪০ কেজি হারে ফেব্রুয়ারি-মে পর্যন্ত ৪ মাসের জন্য ৫৯ হাজার ১৪১ মেট্রিক টন ভিজিএফ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ২০২২ সালে সামুদ্রিক জলসীমায় ৬৫ দিন মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধকালে সমুদ্র উপকূলীয় ৩ লাখ ১১ হাজার ৬২টি জেলে পরিবারকে ২৬ হাজার ৮৩ মেট্রিক টন খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে।বর্তমান সরকার সমন্বিতভাবে নানা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করায় ইলিশের উৎপাদন আশাতীতভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০৮-৯ অর্থবছরে ইলিশের আহরণ ছিল ২ দশমিক ৯৮ লাখ মেট্রিক টন। বর্তমান সরকারের গৃহীত ব্যবস্থাপনায় তা ক্রমান্নয়ে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫ দশমিক ৬৫ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। অর্থাৎ গত ১২ বছরে দেশে ইলিশ আহরণ বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। এ সময়ে দেশে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির হার প্রায় ৯০ শতাংশ।