ঘুষ গ্রহণে ওসি’র সংবাদ সম্মেলন নিয়ে আলোচনা সমালোচনা


নারায়ণগঞ্জের খবর প্রতিবেদকঃ আড়াইহাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এনায়েত হোসেনের সংবাদ সম্মেলনের ভিডিও ফুটেজ সোল্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ার পর উপজেলাব্যাপী নিন্দা ও সমলোচনার ঝড় বইছে। সম্প্রতি, তার ঘুষ গ্রহণের একটি ভিডিও ফুটেজ সামাজি যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ বিভিন্ন সোল্যাস মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে পড়লে শনিবার বিকালে তিনি নিজ অফিস কক্ষে সংবাদ সম্মেলন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে ওসি’র পাশে স্থানীয় দুই বিএনপি বিতর্কিত নেতার অবস্থানকে উপজেলার মানুষ ভালোভাবে নেয়নি। অনেকের প্রশ্ন ওসি’র পাশে বিএনপির দুইনেতাকে কেন রাখা হলো। তারা পুলিশের কোন দায়িত্বে আছেন কিনা। তারা পুলিশের পাশে বসা ছিল কেন। ওসি কেন বিএনপির এই দুইনেতাকে তার পাশে বসিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। এর কারণ জানতে চাই আড়াইহাজারবাসী। সংবাদ সম্মেলনে তার এমন কর্মকান্ড নিয়ে রাতেই ফেসবুকে আলোচনা-সমলোচনার ঝড় বইছে।
এনিয়ে ফেসবুকে ভুক্তভোগীসহ সাধারণ মানুষ ওসিকে উদ্দেশ্য করে বিভিন্ন ট্যাস্টাস দিচ্ছেন। আড়াইহাজার থানায় ওসি এনায়েত হোসেন যোগদানের পর কার কাছ থেকে কত টাকা ঘুষ নিয়েছেন তা ভুক্তভোগীরা ফেসবুক আইডিতে লিখছেন। অনেকেই অভিযোগ করেছেন, ৫ আগস্টের পর স্থানীয় বিএনপির একটি অংশের সাথে মিলে সাধারণ মানুষসহ নিরীহ স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা ঘুষ বাণিজ্য করা হয়েছে। অপরদিকে ঘুষ খেয়ে আওয়ামী লীগের দাগী ও তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীদের পুলিশ গ্রেপ্তার থেকে বিরত রয়েছে। সন্ত্রাসীদের মধ্যে অনেকেই এলাকায় বীরদর্পে ঘুরছেন। খোদ বিএনপির অনেক বলছেন, ঈদুল ফিতরে আওয়ামী লীগের লোকজনের কাছ থেকে ওসি মোটা অংকের অর্থ বকশিস নিয়েছেন। যা ফলে তিনি (ওসি) স্বৈচারের দোসরদের গ্রেপ্তার করছেনা। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ এলাকায় সুসংগঠিত হয়ে পড়েছে।
এদিকে আড়াইহাজার উপজেলা গণঅধিকার পরিষদের নেতারা বলেন, আমাদের নেতাকর্মীরা একাধিকবার হামলার শিকার হয়েছেন। পুলিশের কাছে কোন সহযোগিতা আমরা পাইনি। তারা আরও বলেন, ওসি এনায়েত আড়াইহাজারে বিএনপির একটি অংশের সাথে মিলে ৫ আগস্টের পর থেকে চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মে সহযোগিতা করে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। উপজেলার অধিকাংশ মানুষের দাবী ওসি এনায়েত হোসেনকে দ্রæত আড়াইহাজার থানা থেকে প্রত্যাহার করা হোক। তা না হলে খুব দ্রæতই তার বিরুদ্ধে উপজেলায় বিক্ষোভ হওয়ার সম্ভনা রয়েছে। এতে পুলিশের ভামূর্তি নষ্ট হবে।
স্থানীয় ছাত্র সমাজের একাংশ বলেন, আড়াইহাজার থানার ওসি থানায় যোগাদানের পর থেকেই নানা বির্তক কর্মকান্ডে জড়িত রয়েছেন। তার কাছে আইনী সহযোগিতা পেতে গেলে তিনি বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী এক নেতার কাছে ফোন করে তার কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে তিনি কাজ করছেন। বিএনপির ওই নেতা আড়াইহাজারে প্রবেশ করা মাত্র তিনি (ওসি) তাকে প্রটোকল অফিসারের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি পুলিশের ভাবমূর্তি পুরোপুরি নষ্ট করে ফেলেছেন। অন্যদিকে বিএনপির ওই নেতা এরই মধ্যে পুরো দলের ভাবমূর্তি জনগণের কাছে নষ্ট করে ফেলেছেন। প্রতিদিন আড়াইহাজার থানায় স্থানীয় বিএনপির একাংশের হাট বসে। প্রতিদিন ওসি’র সহযোগিতায় লাখ লাখ টাকা লেনদেন হচ্ছে। এতে তার প্রতি আড়াইহাজারের মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস নষ্ট হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় সচেতন মহলের অভিযোগ, আড়াইহাজারে আইনশৃঙ্খলা ব্যাপকভাবে অবনতি হয়েছে। উপজেলাব্যাপী চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইয়ের মতো ঘটনায় অতীতের যেকোন সময়ের রেকর্ড ভেঙেছে। ওসি এনায়েত হোসেন আড়াইহাজার থানাকে একটি দলের দলীয় কার্যালয়ে রূপান্তর করে ফেলেছেন। অতীতে আমরা এমন দৃশ্য থানায় দেখিনি। স্থানীয় বিএনপির এক নেতাকে খুশি রাখার জন্য ওসি সর্বদা ব্যস্ত থাকেন। এরই মধ্যে তিনি ওই নেতার চাটুকার হিসাবেও পরিচিতি লাভ করেছেন।
প্রসঙ্গত. খাগকান্দা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি বেলায়েত হোসেনের সঙ্গে অর্থ লেনদেনের বিষয় নিয়ে কথা-কাটাকাটি করছেন। এসময় ওসির কক্ষে থাকা কে বা কারা একটি মোবাইলে ফোনে কয়েক সেকেন্ডের একটি ভিডিও ধারণ করেন। পরে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোষ্ট করলে মুহুর্তের মধ্যে এটি ভাইরাল হয়ে পড়ে। এনিয়ে নানা প্রশ্নের মুখে পড়েন ওসি এনায়েত হোসেন। নানা চাপের মুখে তিনি শনিবার আড়াইহাজার থানায় তার অফিস কক্ষে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। এসময় তিনি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। তবে তার এই সংবাদ সম্মেলনের ভিডিও ফুটেজটি ফের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে আবারও তিনি সমলোচনার মধ্যে পড়েন। ওসি প্রশ্নের মুখে পড়ার ভয়ে আড়াইহাজারের কোন সাংবাদিককে তিনি এই সংবাদ সম্মেলেনে রাখেননি। স্থানীয় অনেক সাংবাদিক বলেন, ওসি এনায়েত হোসেন ৫ আগস্টের পর আড়াইহাজার থানায় যোগদান করেই দুই হাতে অর্থ হাতিয়ে নিতে থাকেন। তিনি অর্থ ছাড়া কিছুই বুঝেনা। এদিকে আড়াইহাজার থানার ওসি এনায়েত হোসেন বলেন, আড়াইহাজার চারটি ভাগে বিভক্ত হয়ে বিএনপির রাজনীতি পরিচালিত হচ্ছে। আমি রাজনীতির প্রতি হিংসার শিকার। আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগগুলো মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। #