শিরোনাম
শিমরাইল-আদমজী-চাষাড়া সড়কে ইজিবাইক চলাচল বন্ধে ভোগান্তিতে লক্ষাধীক মানুষ
নারায়ণগঞ্জের খবর প্রতিবেদকঃ দ্বিতীয় দিনের মতো বন্ধ রয়েছে শিমরাইল-আদমজী-চাষাড়া সড়কে ইজিবাইক চলাচল। এতে করে ভোগান্তিতে পড়েছে এ সড়ক দিয়ে চলাচলকৃত চাকরিজীবী শিক্ষার্থীসহ লক্ষ্যাধিক সাধারণ মানুষ। বিকল্প উপায়ে গন্তব্য বা কর্মস্থলে যাওয়ার চেষ্টা করলেও বাধার সম্মুখীন হচ্ছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। এই সড়কটিতে দীর্ঘদিন ধরে কোন গণপরিবহন না থাকায় প্রায়সময়েই ভোগান্তিতে পড়তে হয় সাধারণ জনগণের। এমনটাই অভিযোগ করছেন স্থানীয়রা।
এদিকে ইজিবাইক চালকদের অভিযোগ ৫ আগষ্টের পর পুলিশ কোন ইজিবাইক নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষারা ও কালিরবাজার প্রবেশে বাধা দেয়নি। তাছাড়া বিভিন্ন ভূঁইফোড় গণমাধ্যমের নামে যে চাঁদাবাজি হতো সেটাও বন্ধ রয়েছে। এতে করে নির্বিঘ্নে তারা চলাচল করতে পারতো। কিন্তু সম্প্রতি জেলা পুলিশ ও সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ইজিবাইক নগরীতে প্রবেশ করতে পারবে না। আদেশ অমান্য করে প্রবেশ করলে ইজিবাইক আটক করা হবে এবং জরিমানা করা হবে ৫ হাজার টাকা। ইজিবাইক নগরীর খানপুর পর্যন্ত চলাচল করতে পারবে বলে চালকদের জানানো হয়েছে। রনি নামের সিদ্ধিরগঞ্জে চৌধুরী বাড়ি এনায়েতনগরের এক ইজিবাইক চালক জানান, আমরা পুলিশ ও সিটি করপোরেশনের এই সিদ্ধান্ত মানি না। তাই আমরা সকলে গাড়ি চালানো বন্ধ রেখেছি। যতক্ষণ আমরা কোন সমাধান না পাবো ততক্ষণ ইজিবাইক চলাচল বন্ধ থাকবে।
সরেজমিনে ঘুরে মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) সকালে দেখা যায় শিমরাইল-আদমজী-চাষাড়া সড়কের পাঠানটুলি থেকে শিমরাইল মোড় পর্যন্ত প্রায় সাড়ে নয় কিলোমিটার সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে ইজিবাইক চালকরা অবস্থান নেয়। এসময় ইজিবাইক চলাচল করতে বাঁধা প্রদান করে। এছাড়াও বিকল্প উপায়ে কেউ কর্মস্থল বা গন্তব্যে যেতে চাইলে তাদেরকেও আটকে দেয়া হচ্ছে। এই সড়কের উভয়পাশে রয়েছে ইপিজেডসহ অসংখ্য সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। রয়েছে অসংখ্য স্কুল কলেজ। ইজিবাইক চালকদের বাঁধার কারণে শিক্ষার্থী, গার্মেন্টকর্মীসহ অন্যান্য চাকুরীজীবিরা তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মস্থলে যেতে পারেনি। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চলছে ক্লাস টেস্ট পরীক্ষা। যার নম্বর বার্ষিক পরীক্ষার মূল্যায়নের সাথে যোগ হবে। ইজিবাইক বন্ধ থাকায় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র নজরুল বাসা থেকে বের হয়েও পৌঁছাতে পারেনি বিদ্যালয়ে। গোদনাইল এসও এলাকায় এই প্রতিবদকের সাথে কথা হলে সে জানায়, আজকে তাদের গণিত ক্লাস টেস্ট পরীক্ষা। এই পরীক্ষার নাম্বার যুক্ত হবে বার্ষিক মূল্যায়ন পরীক্ষায়। কিন্তু ইজিবাইক বন্ধ থাকায় যেতে পারছি না স্কুলে। দূরত্ব বেশি হওয়ায় হেঁটে গিয়েও পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না। বিষয়টি নিতে তাই একটু চিন্তায় আছি। এদিকে সকাল থেকে গার্মেন্টকর্মীরা তাদের কর্মস্থলে যেতে পারছে না। বিশেষ করে যার দূরের কোন প্রতিষ্ঠানে কাজ করে তাদের ভোগান্তিটা বেশি হচ্ছে। গার্মেন্টকর্মী তানিয়া, রোজীনা,সাদীয়া তারা তিনজন একসাথে একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করে। ডেমরার সুকুরশী থেকে আদমজী এলাকায় তাদের প্রতিষ্ঠানে আসতে মঙ্গলবার বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে বলে জানান। ডেমরা থেকে শিমরাইল আসতে পারলেও সেখান থেকে আদমজী পর্যন্ত আসার জন্য আর কোন যানবাহন পাচ্ছিলেন না। অগত্যা বাধ্য হয়ে প্রায় সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে কর্মস্থলে পৌঁছান প্রায় আধাঘন্টা পরে। এতে করে কর্মঘন্টা হারাচ্ছেন শ্রমিকরা।
এদিকে ইজিবাইক চালকদের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের ট্রাফিকের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রুহুল আমিন সাগর জানান, একজন ইজিবাইক চালক সারাদিনে কতো টাকা আয় করে! তাদের কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা আদায়ের তথ্যটি সঠিক নয়। আমরা নগরীর যানজট নিরসনে তাদের নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি। তাদের চলাচল বন্ধ করছি না। নগরীর একটি নির্দিষ্ট এলাকা পর্যন্ত তাদের সীমাবদ্ধতা দেয়া হচ্ছে। চাষারায় প্রবেশের ক্ষেত্রে তাদের আটক করা হচ্ছে। কখনো একদিন বা দুদিন আটকে রেখে এমনিতেই ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। আবার কখনো সর্ব্বোচ্চ ৫শত টাকা জরিমানা নেয়া হচ্ছে। তবে যেটা জানতে পেরেছি সিটি করপোরেশনও তাদের কাছ থেকে জরিমানা আদায় করছে।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাকির হোসেন জানান, নগরীতে প্রবেশের ক্ষেত্রে আমরা সকল অবৈধ ইজিবাইকগুলোকে ৩ হাজার টাকা জরিমানা করছি। ইজিবাইকের কি কোন বৈধতা আছে এমন প্রশ্নের জবাবে এই কর্মকর্তা বলেন, সেটি নেই। তবে পূর্বে পায়ে চালিত রিক্সারগুলো চলাচলে সিটি করপোরেশনের অনুমোদন ছিলো এবং লাইসেন্স দেয়া হতো। সেই লাইসেন্সগুলোকে কেউ চাইলে ব্যাটারি চালিত দ্বি আসন বিশিষ্ট বাহনগুলোর জন্য কনভার্ট করে নিতে পারবে। এর বাইরে অন্যান্য সকল ইজিবাইক অবৈধ হিসেবে পরিগনিত হবে। আর আন্দোলনটা অবৈধ ইজিবাইক চালকরাই করছে। বিষয়টি নিয়ে সমাধানে জন্য চালকদের পক্ষ থেকে আপনাদের সাথে কেউ যোগাযোগ করেছে কি না জানতে চাইলে তিনি জানান, কেউ তাদের সাথে এখনো যোগাযোগ করেনি। #