শিরোনাম
শারমিন মিলে শ্রমিক হত্যায় দায়ী মালিককে গ্রেফতার সর্বোচ্চ শাস্তি ক্ষাতিপূরনের দাবি
নারায়ণগঞ্জের খবর ডেস্কঃ সিদ্ধিরগঞ্জে শারমিন স্টিল রি-রোলিং মিলসে বিস্ফোরনে শ্রমিক হত্যায় দায়ী মালিককে অবিলম্বে গ্রেফতার ও সর্বোচ্চ শাস্তি ক্ষাতিপূরনের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশ করা হয়েছে। বুধবার ১৮ অক্টোবর বিকেলে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে এ কর্মসূচী পালন করেছে নারায়ণগঞ্জ জেলা রি-রোলিং স্টিল মিলস শ্রমিক ফ্রন্ট। এসময় সমাবেশে বক্তারা নিহত শ্রমিকদের আইএলও কনভেনশন ১২১ মোতাবেক আজীবন আয়ের সমান ক্ষতিপূরণ দাবি করে বলেন, নারায়ণগঞ্জে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ স্টিল এবং রি-রোলিং মিলগুলোতে যে ধরণের সেফটি ব্যবস্থা থাকা দরকার, শ্রমিকদের সেফটি পোশাক থাকার কথা এর কোনটাই এখানে ছিল না। বাস্তবে মালিকের অতি মুনাফার লোভ, অবহেলা ও দায়িত্বহীনতার কারণে এ ঘটনা ঘটেছে। এটাকে দুর্ঘটনা বলা যায় না, এটা হত্যাকান্ড। অবিলম্বে মালিককে গ্রেপ্তার ও সর্বোচ্চ শাস্তি দিতে হবে।
১৮ অক্টোবর জেলা রি-রোলিং স্টিল মিলস শ্রমিক ফ্রন্ট এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, এ কর্মসূচীতে বিকেলে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ ও শহরে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। রি-রোলিং স্টিল মিলস শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি জামাল হোসেনের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন রি-রোলিং স্টিল মিলস্ শ্রমিক ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ইমাম হোসেন খোকন, ও সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি আবু নাঈম খান বিপ্লব, গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক সেলিম মাহমুদ, রি-রোলিং স্টিল মিলস্ শ্রমিক ফ্রন্ট জেলার সাধারণ সম্পাদক এস.এম.কাদির, গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট জেলার সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম শরীফ।
এসময় বক্তারা আরো বলেন, সিদ্ধিরগঞ্জে অবস্থিত শারমিন স্টিল রি-রোলিং মিলস কারখানায় গত ১৩ অক্টোবর দিবাগত রাত ৩ টায় গ্যাস বিষ্ফোরণে অগ্নিদগ্ধ হয়ে ইতিমধ্যে ৪ জন শ্রমিক মৃত্যুবরণ করেছে। ১ জন আশঙ্কাজনকভাবে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারী ইন্সটিটিউটে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, রানাপ্লাজা ট্রাজেডি। সারা বিশ্বকে নাড়া দিয়েছিল। কলকারখানা অধিদপ্তর সম্প্রসারিত করা হয়েছে। মানুষের প্রত্যাশা ছিল এরপরে কারখানায় মালিকের অবহেলায় শ্রমিকের মৃত্যু বন্ধ হবে। কিন্তু এরপরও টাম্পাকো ফয়েল, সেজান জুস, বিএম কন্টেইনার ডিপোসহ ছোট বড় অনেক কারখানায় বহু শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। রানাপ্লাজার ঘটনার ১০ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। কোন ঘটনারই বিচার কাজ সম্পন্ন হয়নি। বরং আমরা দেখতে পেয়েছি বি এম কন্টেইনার ডিপো ও সেজান জুস কারখানার মামলার চার্জশীটে মালিককে দায় থেকে অব্যহতি দেয়া হয়েছে। এভাবে পুলিশ প্রশাসনের সাথে যোগসাজশে মালিকদের রক্ষা করা হয়। এ বিষয়ে সুষ্ঠু বিচারের স্বার্থে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি করতে হবে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, ২০০৬ শ্রম আইনে কর্মস্থলে মৃত্যু হলে শ্রমিকের ১ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ বিধান ছিল, ২০১৮ সালে শ্রম আইন সংশোধন করে ২ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ করা হয়েছে। মালিকের অবহেলায় মৃত্যু হলে কখনও ক্ষতিপূরণ এটা হতে পারে না। মালিকের অবহেলায় শ্রমিকের মৃত্যু হলে আইএলও কনভেনশন ১২১ অনুযায়ী আজীবন আয়ের মানদন্ড ক্ষতিপূরণের বিধান করতে হবে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, ২০২২ সালে আন্তর্জাতিক শ্রম সম্মেলনে (আইএলসি) শ্রমিকের নিরাপত্তা বিষয়ক কনভেনশন আইএলও কনভেনশন ১৫৫ ও ১৮৭ মৌলিক হিসাবে স্বীকৃত হয়েছে। বাংলাদেশে শ্রম আইন সংশোধন প্রক্রিয়া চলছে। শ্রম আইনে শ্রমিকের নিরাপত্তা বিষয়ে কঠোর আইন করতে হবে।
নেতৃবৃন্দ শারমিন স্টিল রি-রোলিং মিলসে শ্রমিকের মৃত্যুর জন্য মালিককে অবিলম্বে গ্রেফতার ও সর্বোচ্চ শাস্তি, নিহতদের আইএলও কনভেনশন মোতাবেক আজীবন আয়ের সমান মানদন্ড ক্ষতিপূরণ এবং আহতদের সুচিকিৎসা, উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের দাবি করেন। একই সাথে নেতৃবৃন্দ কারখানা দেখভাল করার জন্য নিয়োজিত সরকারি কতৃপক্ষের দায়িত্বরতদের ব্যাপারেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান। #