‘ভারি ব্যাগ বহনে শিশুরা মেরুদণ্ডের সমস্যা নিয়ে বেড়ে ওঠে’
দশম শ্রেণি পর্যন্ত দীর্ঘসময় ভারি ব্যাগ বহনের ফলে শিশুদের পিঠে-ঘাড়ে চাপ পড়ে, এমনকী অনেকের মেরুদণ্ড বাঁকা হয়ে যায়। মেরুদণ্ডের সমস্যা নিয়ে বেড়ে ওঠা এসব শিশু ৪০-৫০ বছরে পৌঁছালে সমস্যা প্রকট হয়।রোববার (১৬ অক্টোবর) সকাল ১০টায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) বিশ্ব স্পাইন দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ নিউরো স্পাইন সোসাইটি আয়োজিত বৈজ্ঞানিক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ছিল ‘মেরুদণ্ড আপনার অমূল্য সম্পদ, মেরুদণ্ডকে সুস্থ রাখতে হবে’। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন- নিউরো স্পাইন সোসাইটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. কামাল উদ্দিন। সঞ্চালনায় ছিলেন- অধ্যাপক ডা. মো. রফিকুল ইসলাম।বক্তারা জানান, আমাদের দেশে শিশুদের জন্য স্কুলে ব্যবহৃত বেঞ্চ বা চেয়ারগুলো স্বাস্থ্যসম্মত নয়। এ ছাড়া দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা বেশ ভারি স্কুলব্যাগ বহন করে। আবার অনেক স্কুলে শিক্ষকদের জন্য শ্রেণিকক্ষে বসার ব্যবস্থা থাকে না। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার কারণে তাদেরও মেরুদণ্ডের সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএসএমএমইউয়ের উপাচার্য ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, বিগত দিনের তুলনায় দেশে স্পাইন রোগের চিকিৎসা অনেক দূর এগিয়েছে। তবে কমসংখ্যক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠানের ঘাটতি ও আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে দেশের জনগোষ্ঠীর ৫০ শতাংশ এ চিকিৎসাসেবার বাইরে রয়েছে।বর্তমান সরকার ২০২৫ সালের মধ্যে মেরুদণ্ডের চিকিৎসা কার্যক্রম জেলা পর্যায়ে পৌঁছে দিতে কাজ করে যাচ্ছে।সেমিনারে বলা হয়, বিশ্বের ৫৪ কোটি মানুষ মেরুদণ্ডের সমস্যা ভুগছেন। বাংলাদেশে প্রায় ৫০ লাখ মানুষের এ সমস্যা রয়েছে। প্রতি বছর দেশের প্রায় ২০ হাজার মেরুদণ্ড সমস্যার রোগী চিকিৎসা নেন।অথচ এসব রোগীকে চিকিৎসা দিতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র ২১২ জন, যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। অনেক সময় গাছ থেকে পড়ে যাওয়া ও আঘাতজনিত সমস্যা হলে অস্ত্রোপচার করতে হয়। অন্য রোগীদের ইনজেকশন, ওষুধ ও থেরাপি জাতীয় চিকিৎসা দেওয়া হয়।প্রতিবছর এ সমস্যায় আক্রান্ত ৪০ হাজার রোগীর অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন, কিন্তু এদের অধিকাংশই থেকে যান চিকিৎসার বাইরে। তাছাড়া ব্যয়বহুল হওয়ায় অনেকে চিকিৎসার খরচ বহন করতে পারেন না।সেমিনারে আরও বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশেই বাংলাদেশে নিউরো সার্জারিতে এমএস কোর্স চালু করা হয়। দেশে বর্তমানে উন্নতমানের নিউরো স্পাইনের সব ধরণের চিকিৎসা করা হয়। তবে চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোকে বিশ্বমানের করা প্রয়োজন।অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন- স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এমএ আজিজ, বিএসএমএমইউয়ের সার্জারি অনুষদের ডিন ডা. মোহাম্মদ হোসেন।এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন- ইউজিসি অধ্যাপক ডা. সজল কৃষ্ণ ব্যানার্র্জী, বিএসএমএমইউয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলাল, নিউরোসার্জারি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আফজাল হোসেন, বর্তমান চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আখলাক হোসেন, অধ্যাপক ডা. ধীমান চৌধুরী, অধ্যাপক ডা. হারাধন দেবনাথ, হেপাটোলিবিলিয়ারি অ্যান্ড প্যানক্রিয়াটিক বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ মহছেন চৌধুরী, অনকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. নাজির উদ্দিন মোল্লাহ্, রেডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সাঈদা শওকত, হৃদরোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আরিফুল ইসলাম জোয়ারদার টিটো, নিউরো সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. কেএম তারিকুল ইসলাম প্রমুখ।
সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএসএমএমইউয়ের নিউরো সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. শাহনেওয়াজ বারী ও ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) নিউরো সার্জারি বিভাগের কনসালট্যান্ট অধ্যাপক ডা. ইসমে আজম জিকো।