পৃথিবীতে একজন লোহার ফুসফুস নিয়ে ৬৯ বছর বেঁচে আছে
নারায়ণগঞ্জের খবর ডেস্কঃ মানুষ কতভাবেই না বাঁচে! একবার ভাবুন তো লোহার ফুসফুস বুকে নিয়ে বেঁচে থাকার কথা। অসম্ভব মনে হচ্ছে? অথচ পৃথিবীতে একজন আছেন যিনি এভাবে বেঁচে আছেন ৬৯ বছর ধরে। পুরো জীবন লোহার বাক্সে কাটিয়েছেন। তাই বলে, এখানেই থেমে থাকেননি তিনি। নিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি, আইন পেশায় প্র্যাকটিসও করেছেন। এমনকি অনুপ্রেরণা দিতে লিখেছেন বই। লোহার ফুসফুস নিয়ে বেঁচে থাকার খবর হয়তো অনেকেই জানেন না। যদিও সব রোগীর ক্ষেত্রে আয়রন লাং কাজ করে না, তবে পল আলেকজান্ডার ১৯৫২ সাল থেকে এখনো পর্যন্ত লোহার ফুসফুস নিয়েই বেঁচে আছেন।জানা যায়, পোলিও রোগের কারণে পল ফুসফুসের কার্যক্ষমতা হারান। এরপর থেকেই লোহার ফুসফুস তার নিত্যসঙ্গী। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ১৯৫২ সালে ভয়াবহ আকার ধারণ করে পোলিও। এটি বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ সময়ের মধ্যে অন্যতম। সে সময় যুক্তরাষ্ট্রে ৬০ হাজারেরও অধিক শিশু পোলিও রোগে আক্রান্ত হয়েছিল। এই রোগের সংক্রমণ ঠেকাতে বন্ধ করা হয়েছিল জনসমাগম। বিভিন্ন পার্ক, রেস্তোরাঁতে যাওয়াও নিষিদ্ধ ছিল।
সেই দিনের স্মতি আজও নাড়া দেয় পলের মনে। পলের বয়স তখন ৬ বছর। সারাদিন বৃষ্টি ছিল। মাঠে খেলা করার সময় জ্বর আসে পলের। তীব্র জ্বরের সঙ্গে ঘাড় ব্যথা। সেই জ্বরের লক্ষণে তার মা বুঝেছিলেন ছেলের হয়তো পোলিও হয়েছে। বারবার সৃষ্টিকর্তার কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। কিন্তু মায়ের আশঙ্কাই সত্যি হয়েছিল। সেই থেকে ফুসফুসের ক্ষমতা হারায় পল। পল বাঁচবে না বলেই ধারণা করেছিলেন চিকিৎসকরা। সব ধরনের চেষ্টা করেও যখন ব্যর্থ হচ্ছিলেন তখন তারা লোহার ফুসফুসের কথা ভাবেন। শেষ চিকিৎসা হিসেবে তারা পলকে ট্র্যাকাউট্রমি করে একটা লোহার ফুসফুসে রেখে দেন। এ ধরনের বদ্ধ ট্যাংক সেসময় ব্যবহৃত হতো পোলিও রোগীদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে। এরপর ১৮ মাস হাসপাতালে থাকতে হয়েছিল পলকে। কিছুটা সুস্থ হলে চিকিৎসকরা লোহার বাক্সসহ তাকে বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছিলেন।
পলের বর্তমান বয়স ৭৫। সেই ছোটবেলা থেকেই চিকিৎসকরা পলকে শ্বাস নেওয়ার বিভিন্ন কৌশল শেখাতেন। সেই কৌশল রপ্ত করে ধীরে ধীরে শ্বাস নিতে থাকেন পল। এক সময় পলের আত্নবিশ্বাস বাড়ে। স্কুলে যাওয়া শুরু করেন তিনি। স্কুলে হুইলচেয়ার ব্যবহার করতেন। ক্লাসে সবচেয়ে বেশি নম্বর পেয়ে স্কুল শেষ করেন তিনি। এরপর অর্থনীতি ও ফিন্যান্সে পড়ার জন্য টেক্সাসে সাউদার্ন মেথোডিস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।
এর মধ্যে ফুসফুস ছাড়া দুই থেকে তিন ঘণ্টা চলতে শেখেন তিনি। ফলে মা-বাবার কাছ থেকে দূরে গিয়ে টেক্সাসে একাই থাকতেন তিনি। তার দেখভালের দায়িত্ব নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পল ১৯৮৪ সালে স্নাতক সম্পন্ন করেন। এর দুই বছর পর তিনি আইন বিষয়ে ডিগ্রী নেন। পারিবারিক আইন এবং দেউলিয়ার মামলা নিয়ে হুইলচেয়ারে বসেই আদালতে ক্লায়েন্টদের প্রতিনিধিত্ব করতে থাকেন তিনি। প্রায় ৩০ বছর পলের দেখাশোনা করছেন ক্যাথি। খাবার তৈরি, চুল কাটা, নখ কাটা, পোশাক পরানোসহ সব কাজ করেন তিনি। তবে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আবারও বাক্সে বন্দি হয়ে পড়ছেন পল। লোহার ফুসফুসের বাইরে এখন তিনি প্রায় অচল।#