আসছে শীত, খেজুর রস সংগ্রহে প্রস্তুত গাছিরা
ধীর পায়ে এগিয়ে আসছে শীত। সকাল-সন্ধ্যার প্রকৃতিতে পাওয়া যাচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা। শীত এলেই রাজশাহীর গ্রামে গ্রামে শুরু হবে খেজুর রস নামানোর কর্মযজ্ঞ। আর তাই এখন গাছ প্রস্তুতের কাজ শুরু করেছেন গাছিরা। মালিকদের কাছ থেকে ইজারা নেওয়া শত শত গাছ কেটে রস নামানোর উপযোগী করে রাখছেন তারা। এ জন্য ব্যস্ত সময় কাটছে গাছিদের।রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলায় খেজুর গাছ আছে ৭ লাখ ৮০ হাজার। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি গাছ আছে চারঘাট উপজেলায়। সেখানে গাছের সংখ্যা ৩ লাখ ৯৬ হাজার। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২ লাখ ৯৯ হাজার গাছ আছে বাঘা উপজেলায়। আর পুঠিয়া উপজেলায় খেজুর গাছের সংখ্যা ৮৫ হাজার। বাকি গাছগুলো অন্য উপজেলায়।শীতকালে রাজশাহীর বাঘা, চারঘাট ও পুঠিয়ার বাড়িতে বাড়িতে চলে খেজুর গুড় তৈরির কর্মযজ্ঞ। প্রতি শীত মৌসুমে প্রায় ৬০ কোটি টাকার ৮ হাজার মেট্রিক টন গুড় উৎপাদন হয় এসব এলাকায়।গাছিরা মালিকদের কাছ থেকে গাছ ইজারা নিয়ে রস সংগ্রহ করেন। শীত আসার আগেই তারা গাছ ছেটে রস নামাতে প্রস্তুতি শুরু করেন। এখন তাদের সেই কাজ শুরু হয়েছে।শুক্রবার (১৪ অক্টোবর) সকাল ৮টার দিকে গাছ প্রস্তুতের কাজ করছিলেন বাঘার মনিগ্রাম এলাকার গাছি আবদুস সোবহান। তিনি বলেন, ‘আমার নিজস্ব কোনো গাছ নেই। আমি গাছ ইজারা নিয়ে রস নামাই। এবারও আশপাশের ১২০টি গাছ চুক্তিতে নিয়েছি। প্রতিটি গাছের জন্য মালিককে দিতে হবে ২০০ থেকে ৪০০ টাকা। এখন গাছগুলো প্রস্তুত করে রাখছি। কয়দিন পরই রস নামবে।’পুঠিয়ার জাইগিরপাড়া গ্রামের গাছি ফিরোজ আলীও এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন গাছ প্রস্তুতের কাজে। তিনি বলেন, ‘প্রত্যেক বছরই আমি খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করি। সেই রস বাড়িতে নিয়ে যায়। বাড়ির মেয়েরা তাতে জ্বাল দেন। এরপর তৈরি হয় সুস্বাদু খেজুর গুড়। গতবছর ১২৫টি গাছের রস থেকে প্রতিদিন গড়ে ২৫ কেজি গুড় তৈরি হয়েছে। এবার গাছের সংখ্যা ১৪০টি। রস নামাতে শীত আসার আগেই আমি গাছগুলোকে প্রস্তুত করে রাখছি।’কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, রাজশাহীতে মৌসুমভিত্তিক আড়াই হাজার পরিবার খেজুর গাছের উপর নির্ভরশীল। অনেকের নিজের কিছু গাছ আছে। কিন্তু বেশিরভাগ গাছি টাকার বিনিময়ে রস নামানোর জন্য গাছ ভাড়া নেন। গাছিদের বাড়িতে তৈরি গুড় হাটের দিন তারা বিক্রি করেন।জেলার পুঠিয়ার বানেশ্বর, ঝলমলিয়া এবং বাঘা উপজেলা সদরে খেজুর গুড়ের হাট বসে। হাটে নিয়ে গাছিরা আড়তে গুড় বেচেন। আর আড়ত থেকে গুড় কিনে নিয়ে যান দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা বেপারিরা। শীতকালে এখানকার গাছিদের সুদিন ফিরে আসে। তাই তারা শীতের অপেক্ষায় থাকেন।ঝলমলিয়া হাটের গুড়ের আড়ত জয় ট্রেডার্সের মালিক সুমন সরকার বলেন, ‘শীতকালে সপ্তাহের দু’দিন ঝলমলিয়ায় গুড়ের হাট বসে। প্রতি হাটে প্রায় কোটি টাকা মূল্যের ১৫০ মেট্রিক টন গুড় বেচাকেনা হয়। শীতকালের এই গুড়ের কদর ভালো। তাই এই গুড় দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়।’জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, ‘রাজশাহীর বাঘা, পুঠিয়া ও চারঘাটের বিভিন্ন রাস্তার পাশে, পতিত জমি কিংবা ঝোপ-জঙ্গলে প্রচুর খেজুর গাছ রয়েছে। এগুলো গ্রামীণ অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখে। গাছিরা এখন গাছ প্রস্তুত করতে ব্যস্ত। শীত আসার সঙ্গে সঙ্গে রস নামতে শুরু করবেন তারা। তখন গাছিদের পুরো পরিবার গুড় তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়বেন।’