শিরোনাম
জনকল্যানের জমি বিক্রি করে দিয়েছে ওসমান পরিবার | উদ্ধারের দাবি
নারায়ণগঞ্জের খবর প্রতিবেদকঃ নারায়ণগঞ্জে জনকল্যাণের ব্যবহারের জন্য অধিগ্রহণ করা জমি অসাধু সরকারি কর্মকর্তা ও ওসমান পরিবারের যোগসাজসে ব্যক্তি মালিকানায় বিক্রি করে দেওয়া জমি উদ্ধারের দাবি জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির নেতারা। শনিবার (৩১ আগস্ট) বিকেলে রাউজক কর্তৃক বিক্রিত শহরের ৭৬ শতাংশ জমি পুনরুদ্ধারের দাবিতে অনুষ্ঠিত অবস্থান কর্মসূচিতে এ দাবি জানান তারা৷ এ সময় তারা জেলার বেহাত হওয়া সকল সরকারি জমি পুনরুদ্ধারের দাবি জানান। নাগরিক কমিটির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি রফিউর রাব্বি বলেন, নারায়ণগঞ্জে ওসমান পরিবারের নেতৃত্বে মাফিয়াচক্র তৈরি হয়েছিল।
তারা অসাধু সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে যোগসাজসে নারায়ণগঞ্জে রেলওয়ে, রাউজক, সওজ, বিআইডব্লিউটিএ’র জমি আত্মসাৎ করেছে। আমরা এই ভূমিদস্যুতা, লুটপাট থেকে পরিত্রাণ পেতে চাই। তিনি আরও বলেন, নারায়ণগঞ্জে রেলওয়ে ১৮৮১ থেকে ৮৫ সাল পর্যন্ত ভূমি অধিগ্রহণ করে। তাদের অব্যবহৃত জমি রেলওয়ের অসাধু কর্মকর্তারা বিভিন্নভাবে ভূমিদস্যুদের সাথে আতাত করে বিক্রি করে দিয়েছে। রাউজক ১৯৫৮ থেকে ৬৫ সাল পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জের ২৪ একর জমি অধিগ্রহণ করে। যার মধ্যে ডিআইটি মার্কেটসহ ৬টি বিপণীবিতান মার্কেট করে ও বাকি জমি পতিত রেখে প্লট করে বিক্রি করে দেয়। ২০০৫ সালে রাউজক পতিত জমিতে ৮১টি প্লট করে টেন্ডার আহ্বান করে। কিন্তু আন্দোলন মুখে সে টেন্ডার বাতিলের ঘোষণা দেয়। ২০০৮ সালে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার রাউজকের অব্যবহৃত ভূমি ও বঙ্গবন্ধু সড়কের ৬টি বিপনী বিতান ফেরত চেয়ে উচ্চ আদালতে আবেদন করে। এ মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় রাউজক শহরের বালুর মাঠের ৭৬ শতাংশ জমিগুলো বিক্রি করে দেয়।
রফিউর রাব্বি বলেন, ভূমি অধিগ্রহণ আইন অনুযায়ী, যে কারণে ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে, সেটা না হলে অধিগ্রহণকৃত জমি বিক্রি, লিজ দেয়া বা হাত বদল যাবে না। কিন্তু রাউজক এই আইনের তোয়াক্কা না করে ২০১৭ সালে নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অ্যান্ড কমার্সের সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজলের কাছে সাড়ে ১৯ শতাংশ এবং ২০১৬ সালে নূপুর কুমার ভৌমিকের কাছে তিন দলিলে সাড়ে ৫৬ শতাংশ জমি বিক্রি করে দেয়। কিছুদিন পর সেই জমি তারা পপুলার ডায়গনেস্টিক সেন্টারের কাছে আবার বিক্রি করে।খালেদ হায়দার খান কাজল ওসমানদের সহযোগী এবং একজন রাজাকারের ছেলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কাজলের বাবা শান্তি কমিটির চাষাঢ়া শাখার সভাপতি ছিল। সেলিম ওসমান কাজলকে বিভিন্নভাবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য রাইফেল ক্লাব, চেম্বার অব কমার্সে বসিয়েছে।
ওসমান পরিবারের সহযোগীরা এখনো নারায়ণগঞ্জে রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওসমানদের টাকা বিদেশে পাচার করার মূল হোতা ব্যাংক কর্মকর্তা লিয়াকত আলী এখনো বহাল আছে। খুনি আজমেরী ওসমান তার বোন জামাতা ইফতেখারের গাড়িতে নারায়ণগঞ্জ থেকে পালিয়েছে। সেই পুলিশ কর্মকর্তা ইখতেখার ও তার ভাই মাহবুব এখনো বহাল থাকে। খুনিদের সহযোগী, যারা গণহত্যা করেছে এবং এখনো নৃশংসতা চালাচ্ছে তারা কিভাবে বহাল থাকে।
অন্তর্বতীকালীন সরকারে উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, মাফিয়া, গডফাদারদের বহাল রেখে রাষ্ট্র সংস্কার সম্ভব না। অতিদ্রæত গ্রেপ্তার করুন এবং তাদের সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় আনুন। কেন ওসমান পরিবার ও সহযোগীরা এখনো গ্রেপ্তার হয়নি আমরা প্রশাসনের কাছে জানতে চাই৷
তিনি বলেন, রাউজকের সাথে আতাত করে সরকারের যারা জড়িত, যে মন্ত্রী জড়িত তাদের নাম প্রকাশ করে আইনের আওতায় এনে যথাযথ শাস্তি ব্যবস্থা করতে হবে।রফিউর রাব্বি বলেন, জায়গার অভাবে নারায়ণগঞ্জে একটি মেডিকেল কলেজ, হৃদরোগ ইনস্টিটিউর, মান সম্মত চক্ষু হাসপাতাল করা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় মাফিয়াদের হাতে নারায়ণগঞ্জ জিম্মি থাকতে পারে না। তাই বিভিন্ন সময় লুট হওয়া ভূমি যেকোনো মূল্যে ফের আনতে হবে।প্রশাসনে উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ছাত্র জনতার অভুত্থানে শহীদদের রক্তের দিকে তাকিয়ে মাফিয়াদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সভাপতি এবি সিদ্দিকের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল হক দিপুর সঞ্চালনায় উপস্থিত ছিলেন সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবুর রহমান মাসুম, খেলাঘর আসরের সাবেক সভাপতি রথীন চক্রবর্তী, সিপিবি জেলা সভাপতি হাফিজুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক শিবনাথ চক্রবর্তী, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি ভবানি সংকর রায়, গণসংহতি আন্দোলন জেলা সমন্বয়কারী তরিকুল সুজন প্রমুখ। #