রনজিত পুরস্কার’ পাচ্ছেন প্রাণ-প্রকৃতির শিল্পী কফিল আহমেদ
নারায়ণগঞ্জে খবর প্রতিবেদকঃ নারায়ণগঞ্জের সংগঠন শ্রুতি সাংস্কৃতিক একাডেমি প্রবর্তিত ‘রনজিত পুরস্কার ২০২৩’ পাচ্ছেন সঙ্গীত শিল্পী কফিল আহমেদ। শুক্রবার (২০ জানুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টায় নগরীর আলী আহাম্মদ চুনকা নগর পাঠাগার ও মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে, এই পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তির নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন সংগঠনের পরিচালক ধীমান সাহা জুয়েল।সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন শ্রুতি সাংস্কৃতিক একাডেমির সভাপতি মাইন উদ্দিন মানিক। এতে জানানো হয়, শ্রুতি সাংস্কৃতিক একাডেমি মূলত নারায়ণগঞ্জের একটি প্রতিষ্ঠান হলেও দেশের নানা প্রান্তে এর কর্মপরিচিতি বিদ্যমান। বিশেষ করে শ্রুতি প্রবর্তিত ‘শ্রুতি পুরস্কার’ (বর্তামানে) ‘রনজিত পুরস্কার’-এর জন্য মনোনীত ব্যক্তিকে সারাদেশের কর্মপরিধি বিবেচনায় নির্বাচন করা হয়। এই নির্মোহ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন ইতোমধ্যে দেশব্যাপী অনেকের আস্থা এবং আগ্রহ সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে।রনজিত পুরস্কারের নগদ অর্থমূল্য ২৫ হাজার টাকা। সঙ্গে একটি ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি সংগঠনের ৩১ তম বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠানে পুরস্কারটি প্রাদন করা হবে।এর আগে শিল্প-সংস্কৃতিতে মূল্যবান অবদানের জন্য দেশের ১৪ জন গুণীকে এই পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। তারা হলেন- কবি শামসুর রাহমান, যাদুশিল্পী জুয়েল আইচ, দার্শনিক সরদার ফজলুল করিম, ঢোলবাদক বিনয়বাঁশী জলদাস, কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক, জ্যোতি-পদার্থবিদ ড. জামাল নজরুল ইসলাম, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, নাট্য ব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ, প্রাবন্ধিক অধ্যাপক যতীন সরকার, উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত ওস্তাদ সাইমুদ আলী খান, কথাসাহিত্যিক আবদুশ শাকুর, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজ, কথাসাহিত্যিক মামুন হুসাইন ও চিন্তক, প্রাবন্ধিক সলিমুল্লাহ খান।পুরস্কার ঘোষণায় বলা হয়- এই পুরস্কার সম্পূর্ণ শ্রুতির নিজস্ব অর্থনৈতিক উৎস থেকে দেয়া হয়। এর জন্য প্রতিষ্ঠানের বাইরের কোনো বিচারক নেই। শ্রুতির পরিচালনা পরিষদই পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত ব্যক্তির নাম নির্ধারণ করে থাকে।এবার সঙ্গীতে স্বতন্ত্র ধারা উন্মোচনের মধ্য দিয়ে প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষায় লড়াকু ভূমিকার জন্যে কফিল আহমেদকে এই পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়। এটি শ্রুতির ১৫ তম পুরস্কার।উল্লেখ্য, কফিল আহমেদ কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জে প্রগতিশীল এক কৃষিপ্রাণ পরিবারে ১৯৬২ সালের ০১ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। বাবা আবদুর রহমান মরু সরকার ছিলেন বিশিষ্ট সমাজকর্মী, প্রগতিশীল কৃষক আন্দোলনের একজন সক্রিয় সংগঠক-ব্যক্তিত্ব। মা মালেকা আক্তার। স্কুলে এবং কলেজে পড়াশোনা করেছেন যথাক্রমে কিশোরগঞ্জ এবং যশোরে। এরপর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স করেছেন ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে। লেখালেখি করেছেন মূলত সাহিত্য কাগজে। এর মধ্যে আশির দশকের সাহিত্য কাগজ পূর্ণদৈর্ঘ্য, দামোদর, নান্দীপাঠ, নদী, ফৃ, এবং মান্দারের কথা বিশেষভাবে বলতে হবে। লেখালেখিসহ সে সময়ের প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক গণ-আন্দোলনে রয়েছে তার উল্লেখযোগ্য উজ্জ্বল ভূমিকা। আশির দশকের শেষাশেষি সাহিত্য জীবনের সাথে যুক্ত হয় তার বর্ণময় সঙ্গীত জীবনের। সেসময়েই নিজের একান্ত গানের পাশাপাশি সুর সাজিয়েছেন চর্যাপদ, বিদ্যাপতি, চন্দ্রাবতী, চন্ডীদাস, উদ্ধবদাসসহ মধ্যযুগের প্রিয় গীতিকবিতাতেও। ২০০১ সালে,ঘোড়াউত্রা কর্তৃক প্রকাশিত তার গানের অডিও সংকলন ‘পাখির ডানায় দারুণ শক্তি গরুর চোখে মায়া’ বাংলা গানে এক নতুন চিন্তা আর সুরভাষার জন্ম দিয়েছে। ২০১৯ সালে উড়কি থেকে প্রকাশিত হয় তার ‘কথাকবিতাগদ্য’ নিয়ে গ্রন্থ ‘রোজ তাই কথা বলে আমার কবি’! সর্বপ্রাণবোধের এক নির্ভীক যাত্রিক এই কবি ও শিল্পী গানে-কাব্যে-জীবনে প্রাণে প্রাণ মেলাবার প্রতিজ্ঞাবোধ নিয়ে আজোবধি লড়ে যাচ্ছেন। #