কারখানার তরল বর্জ্যে অবরুদ্ধ ১৫টি পরিবার
জরাজীর্ণ আর স্যাঁতস্যাঁতে বিছানায় শুয়ে আছেন পঞ্চাশোর্ধ্ব রাবেয়া খাতুন। ঘরের মেঝেতে পানি। আর ঘর থেকে বের হতে পাড়ি দিতে হয় হাঁটু পানি। এভাবেই সিটি কর্পোরেশন আর কারখানার তরল বর্জ্যে অবরুদ্ধ হয়ে আছেন তার মতো আরো ১৫টি পরিবার। দুর্ভোগের এমন চিত্র গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের নাওজোড় মোল্লাপাড়া আমতলী এলাকার। গত তিন বছর ধরে ওই এলাকায় বসবাসরত শিক্ষার্থী ও শ্রমিকরা প্রতিদিন হাঁটু পানি পাড়ি দিয়ে চলাচল করছেন।স্থানীয়রা জানান, সামান্য বৃষ্টিতে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। কোথাও গোড়ালি সমান, কোথাও হাঁটু পর্যন্ত ওঠে পানি। বৃষ্টির পানির সঙ্গে নালা থেকে উঠে আসে ময়লা-আবর্জনা। ফলে সাধারণ মানুষ রাস্তা দিয়ে হাঁটতে গিয়ে বিপাকে পড়েন। এছাড়া স্থানীয় জেকে স্পিনিং কারখানার বর্জ্যে ও ময়লা পানি কোনো দিকে বের হতে না পেরে বাড়ির ভেতরে জোয়ারের মতো প্রবেশ করে। তিন বছর ধরে ১৫টি পরিবার এই সমস্যার সম্মুখীন হলেও সিটি কর্পোরেশন দুর্ভোগ নিরসনে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তারা। সমস্যা সমাধানে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ বরাবর স্মারকলিপি প্রদান এবং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মনিরকে মৌখিকভাবে জানানো হলেও কোনো রকম আশ্বাসও মেলেনি বলে জানান এলাকাবাসী।জাহিদ হাসান নামের স্থানীয় এক যুবক বলেন, ‘মাত্র ত্রিশ মিনিট বৃষ্টি হলে ১৫ দিন ঘরে পানি থাকে। পাশের রাস্তাটি ঠিক হলে এই পরিবারগুলো জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পেত। সব সময় পানি দিয়ে চলাফেরা করায় শরীরে দেখা দিয়েছে বিভিন্ন পানিবাহিত রোগ।’ সালেহা খাতুন বলেন, ‘ড্রেনের পানি ছেড়ে দিছে। যে কারণে পানি পাড়াইয়া যেতে হয়। শুধু ড্রেনের পানি নয়, পার্শ্ববর্তী ফ্যাক্টরির ময়লা পানিও আসে। কাউন্সিলরকে ফোন দিলে বলে, মাফ চাই। আমি আমতলী এলাকায় কিছু করতে পারব না।’ মরিয়ম বলেন, ‘ড্রেনের কাজ শেষ না করেই পানি ছেড়ে দিছে, এ জন্য আমাদের এই অবস্থা। গত তিন বছর ধরে কষ্ট করছি। ছেলে-মেয়েদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে কষ্ট হয়। ঘরের মধ্যে সব সময় পানি থাকে।’ আমেনা খাতুন বলেন, ‘সিটি কর্পোরেশনের লোকজনদের জানাইলে বলে, কাজ হবে কিন্তু হয় না। আমাদের চলার কোনো উপায় নেই, ঘরের মধ্যে পানি থাকায় কোনো ভাড়াটিয়া থাকে না। আমাদের জীবনের কষ্টের আরেক নাম পানি।’ চাঁনমিয়া বলেন, ‘আমার ঘরে পানি। আপনি নিজেই দেখছেন হাঁটু পানি পাড়ি দিয়ে বাড়িতে যেতে হয়। সিটি কর্পোরেশনের বাসিন্দাদের এমন মানবেতর জীবন কোথাও আছে?’ পাল্টা প্রশ্ন রাখেন তিনি। এ বিষয়ে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিল মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘সমস্যা সমাধানে অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু পারিনি। ওখানে দুইটি পক্ষ আছে, কাজ করতে গেলে তারা বাধা দেয়। এছাড়া ওই কারখানার লোকজন আমার কথা শুনে না। সত্যি বলতে আমি অপারক।’