মহান মে দিবসে সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সমাবেশ বর্ণাঢ্য পতাকা মিছিল
নারায়ণগঞ্জের খবর ডেস্কঃ মহান মে দিবস উপলক্ষে সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার উদ্যোগে শ্রমিক সমাবেশ ও শহরে বর্ণাঢ্য লাল পতাকা মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ সকাল ১০ টায় আলী আহম্মেদ চুনকা নগর পাঠাগার ও মিলনায়তনের সামনে শ্রমিক সমাবেশ ও শহরে বর্ণাঢ্য লাল পতাকা মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সমাবেশের পূর্বে চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র গণসংগীত পরিবেশন করে। সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি আবু নাঈম খান বিপ্লবের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাসদ নারায়ণগঞ্জ জেলার আহয়ক নিখিল দাস, গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি সেলিম মাহমুদ, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সহসভাপতি এম এ মিল্টন, রি-রোলিং স্টিল মিলস শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক এস এম কাদির, গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট জেলার সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম শরীফ।
নেতৃবৃন্দ বলেন, আজ থেকে ১৩৭ বছর পূর্বে ১৮৮৬ সালে আমেরিকার শিকাগো শহরের হে মার্কেটে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত কাজ নয়, আট ঘণ্টা কাজ এই দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে জীবন দিয়েছিলেন অগাস্ট, স্পাইজ, এঞ্জেলস, ফিসার। মালিক এবং সরকার ভেবেছিল ফাঁসি দিয়ে, শ্রমিক নেতাদের হত্যা করে আন্দোলন দমন করা যাবে। কিন্তু ন্যায্য দাবিতে গড়ে উঠা আন্দোলন হত্যা ও নির্যাতনের মাধ্যমে দমন করা যায় নাই। এ আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে পৃথিবীর দেশে দেশে। পরবর্তীতে ১৮৮৯ সালে সর্বহারার মহান নেতা ফ্রেডরিক এঙ্গেলসের নেতৃত্বে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিকের প্যারিস কংগ্রেসে প্রতিবছর ১ মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতি দিবস পালনের সিদ্ধান্ত হয়। ১৮৯০ সালে নিউইয়র্কে প্রথম মে দিবসের সমাবেশের প্রস্তাবে লেখা হয়, আট ঘণ্টা কাজের দিনের দাবি পূরণের সংগ্রাম আমরা চালিয়ে যাব, কিন্তু কখনো ভুলবো না, আমাদের শেষ লক্ষ্য হলো পুঁজিবাদী মজুরি ব্যবস্থার উচ্ছেদ সাধন। তারপর থেকেই আট ঘণ্টা কাজ, ন্যায্য মজুরি আর পুঁজিবাদ উচ্ছেদের সংগ্রাম একসাথেই চলছে।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, বাংলাদেশের জনগণের স্বাধীনতা ও শোষণমুক্তির প্রতিটি সংগ্রামে শ্রমজীবী মানুষ অংশগ্রহণ করে জীবন-রক্ত ও ঘাম দিয়েছে, নিপীড়ন-নির্যাতন সহ্য করেছে। স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের শতকরা ৮৭ জনই ছিলেন শ্রমজীবী মানুষ। তাদের লড়াইয়ে দেশ স্বাধীন হয়েছে, শ্রমে দেশের উৎপাদন বাড়ছে, জিডিপি ৯ বিলিয়ন থেকে ৪৫০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। দেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে বলে ক্ষমতাসীনরা গর্ব করছে কিন্তু সবচেয়ে বি ত অংশ হলো শ্রমিক শ্রেণি। তাদের মজুরি মধ্যম আয়ের দেশের মতো নয়, বরং বিশে^ সবচেয়ে কম।
নেতৃবৃন্দ বলেন, ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার সংকুচিত। শ্রম আইনে সুরক্ষা কম, আগুনে পুড়ে, ভবন ধ্বসে মৃত্যু ঘটছে। নারী শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন ছুটি নিয়ে বৈষম্য, বৃদ্ধ বয়সের অনিশ্চয়তা আর যে কোন সময় ছাঁটাই হওয়ার আতঙ্কে কাটে শ্রমিকদের জীবন। দ্রব্যমূল্য বাড়ছে শ্রমিকের দুর্দশাও বাড়ছে। দেশে ৭ কোটি ৩৪ লাখ শ্রমজীবী মানুষ যার মধ্যে ২ কোটি ৫৯ লাখ নারী শ্রমিক। মোট শ্রম শক্তির ৬ কোটি ৫০ লাখ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত। তাদের নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা, নিয়মিত মজুরি কিংবা আইনগত অধিকার কোনটারই নিশ্চয়তা নাই। গার্মেন্টস-পাট, রি-রোলিং, চা, তাঁত, চাতাল, পরিবহণ-হালকা যানবাহন, রিকশা-ব্যাটারি রিকশা, ইজিবাইক, পাদুকা, মোটরমেকানিক, নির্মাণ, হকার, গৃহকর্মী, হোটেল শ্রমিক, ডেলিভারিম্যান, সিকিউরিটি গার্ডসহ প্রায় চার শতাধিক খাতে শ্রমিকরা কাজ করে তার মধ্যে মাত্র ৪৩টি খাতে মজুরি নির্ধারণের জন্য মজুরি বোর্ড গঠনের বিধান আছে। আইন অনুযায়ী মজুরি বোর্ড প্রতি ৫ বছর পর মজুরি নির্ধারণের কথা থাকলেও তা করা হয় না। অথচ জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে প্রতিবছর। গার্মেন্টসে মজুরি বোর্ড গঠিত হয়েছে, কিন্তু বর্তমান বাজার দর বিবেচনায় শ্রমিকের দাবি অনুযায়ী ২৪ হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরি কি নির্ধারিত হবে?
নেতৃবৃন্দ বলেন, বিভিন্ন জরিপ বলছে, একবেলা না খেয়ে থাকছে ৩৭ শতাংশ নিম্ন আয়ের মানুষ, মাংস খাওয়া কমিয়েছে ৯৬ শতাংশ এবং মাছ খাওয়া কমিয়েছে ৮৮ শতাংশ নি¤œবিত্ত, যারা প্রধানত, শ্রমজীবী। শ্রমিকের শ্রমে মালিকদের মুনাফা বাড়ে কিন্তু শ্রমিকদের মজুরি বাড়ে না, শ্রমিক শ্রেণি কৃষি, শিল্প-সেবা খাতে উৎপাদন করে দেশের প্রয়োজন মেটায়, বিদেশে রপ্তানি হয়। মালিকের বাড়ি-গাড়ি, ব্যাংক ব্যালেন্স বাড়ে। প্রবাসী শ্রমিক টাকা পাঠায় বলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ে কিন্তু শ্রমিক কী পায়? দেশের মাথাপিছু ২ হাজার ৭৯৩ ডলার আয় হিসেবে ৫ সদস্যের একজনের পরিবারের মাসিক আয় হওয়ার কথা ১ লাখ ২৩ হাজার টাকারও বেশি। কিন্তু কোন শ্রমিক পরিবার কি মাসে এই পরিমাণ টাকা আয় করতে পারে? একদিকে দ্রব্যমূল্যের চরম ঊর্ধ্বগতি অন্যদিকে কম মজুরি এই দুই কারণে শ্রমিকদের জীবনে দুঃখ বেড়েই যাচ্ছে। মে দিবস এই শিক্ষা দেয়Ñশ্রমিকের দাবি যতই ন্যায্য হোক না কেন, লড়াই করা ছাড়া তা আদায় করা যায় না। মালিক এবং পুঁজিবাদী রাষ্ট্রের কাছে দয়া বা করুণা চেয়ে অধিকার প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। সাধারণ মানুষের উপর পুঁজির মালিকের শোষণ উচ্ছেদ করেই কর্মঘণ্টা কমানো এবং ন্যায্য মজুরির দাবি আদায় করতে হবে। #