প্রেমের টানে বরিশালে এসে ভারতীয় যুবকের মৃত্যু
বরিশালে প্রেমের টানে আসার তিন দিন পর জাভেদ খান (২৯) নামে ভারতীয় এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। প্রেমিকার সাথে হোটেল থাকার একদিন পরই অসুস্থ হয়ে পড়ে সে। এরপর বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়ার সময় অ্যাম্বুলেন্সেই তার মৃত্যু হয়।মৃত জাভেদ খান ভারতের উত্তর প্রদেশের হাসানপুরের বাসিন্দা। জাভেদের প্রেমিকা নগরীর ভাটিখানা এলাকার বাসিন্দা ফাতেমা তুজ জোহরা খুশি বলেন, হঠাৎ করে বুকে ব্যথা ওঠে অসুস্থ হয়ে পড়লে ১০ অক্টোবর বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় জাভেদকে। এরপর ১২ অক্টোবর ভোর রাতে চিকিৎসকদের পরামর্শে ঢাকা নেওয়ার প্রস্তুতি নিলে অ্যাম্বুলেন্সে ওঠানোর পরেই মারা যায় সে। জাভেদ অসুস্থ হয়ে পড়ার পর তার পরিবারকে জানিয়েছি। মৃত্যুর পরও ভোর পৌনে ৫টার দিকে তাদের জানিয়েছি। জাভেদ আমার বয়ফ্রেন্ড।হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ১০ অক্টোবর থেকে হাসপাতালের সিসিইউতে ভর্তি ছিলেন জাভেদ খান।বরিশাল নগরীর কাটপট্রি এলাকার হোটেল এ্যাথেনার অভ্যর্থনাকারী সাব্বির জানান, গত ৯ তারিখ সকাল সাড়ে ৭টার দিকে জাবেদ নামে একজন ভারতীয় নাগরিক তাদের হোটেলে আসে এবং ৪১০ নাম্বার রুম ভাড়া নেন। তার সাথে বন্ধু পরিচয়ে একজন মেয়ে দেখা করতে আসেন এবং কিছু সময় রুমে থাকেন। পরের দিন ১০ তারিখ বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ রুমটি ছেড়ে দেন। রিসিপশনে জাভেদ তার ব্যাগ রেখে যান, পরে নিয়ে যাবেন বলে। ১১ তারিখ ওই মেয়েটি এসে ব্যাগ নিয়ে যায়। আর বুধবার সকালে পুলিশের মাধ্যমে জানতে পারি, লোকটি মারা গেছে। পুলিশ আমাদের কাছ থেকে জাবেদের আসা-যাওয়ার সকল তথ্য নিয়ে গেছে। পুলিশের সাথে তখন ওই মেয়েটিও ছিল।বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানার সহকারী কমিশনার খলিলুল রহমানের কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি ‘ইনকমপ্লিটলি’ কিছু বলতে রাজি হয়নি।এদিকে, বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. রিফায়তুল হায়দার বলেন, মৃত ব্যক্তির শরীরে কোনও আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তবে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে কিছু লেখা ছিল। তিনি কিছু রোগে ভুগছিলেন।বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার সাইফুল ইসলাম বলেন, ভারতীয় নাগরিক জাভেদ খান ৮ তারিখ ভারত থেকে রওনা দেন। ৯ তারিখ সকালে বরিশালে আসেন। এরপর তার প্রেমিকাকে নিয়ে একটি হোটেলে ওঠেন। তারা ঘোরাঘুরিও করেছিল। একপর্যায়ে তার পেইন হচ্ছিল। সে সদর হাসপাতালে যায়। সেখানে কিছু টেস্ট করিয়ে আবার হোটেলে ফিরে। পরের দিন আবার পেইন হলে অ্যাপোলোতে গিয়ে ডাক্তার দেখায়। সেখানের ডাক্তার তার রিপোর্ট দেখে দ্রুত বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন। রাত দুইটার দিকে জাভেদের অবস্থা খারাপ হয়ে যাওয়ায় তাকে ঢাকায় রেফার করতে বলা হয়। ঢাকা নেওয়ার পথে ভোর রাত ৪টার দিকে সে মারা যায়।তিনি বলেন, ফাতেমা তুজ জোহরা খুশি নামের মেয়েটির সাথে জাভেদ খানের অনেকদিন ধরেই ফেসবুকের মাধ্যমে সম্পর্ক। ২০১৮ সালের দিকে জাভেদ আরেকবার বাংলাদেশে এসেছিল।পুলিশ কমিশনার বলেন, চিকিৎসকরা একটি বোর্ড তৈরি করেছে। জাভেদ খানের বুক, কিডনি ও লিভারে সমস্যা ছিল। তাছাড়া তার হাত-পায়ে কোনও আঘাতের চিহ্ন নেই। ভারতেও সে চিকিৎসা নিয়েছিল। সেখানকার ডাক্তাররা তাকে কিছু কিছু জিনিস অর্থাৎ অ্যালকোহল জাতীয় জিনিস খেতে নিষেধ করেছিল। আমরা প্রাথমিক পর্যায়ে এটা পাচ্ছি। লাশ হস্তান্তরের বিষয়টি পুরো ভারতীয় দূতাবাসের। তারা যেভাবে বলবে, সেভাবেই লাশের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। জাভেদের পরিবারের সাথে কথা বলেছি আমরা, তাদের কোনও অভিযোগ পাইনি। পুরো বিষয়টি তদন্ত চলছে।