ঢাকায় ডেঙ্গুর হটস্পটের শীর্ষে মিরপুর
চলতি বছরের ১২ অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশে ২২ হাজার ৫১৭ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ঢাকার ১৬ হাজার ৭৬২ জন। ঢাকায় ডেঙ্গুর হটস্পটগুলোর মধ্যে শীর্ষে মিরপুর এলাকা। এর পরের অবস্থানে আছে উত্তরা, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, বাসাবো, মুগদা, যাত্রাবাড়ী ও কেরানীগঞ্জ এলাকা।বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর) রাজধানীর মহাখালীতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে সারা দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি বিষয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য তুলে ধরা হয়।প্রেস ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. আহমেদুল কবির বলেছেন, ‘প্রতিনিয়ত ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। সব হাসপাতালে ডেঙ্গু চিকিৎসার জন্য ব্যবস্থাপনা, লজিস্টিক, ম্যানপাওয়ার ও স্পেসগুলো তৈরি রাখার কথা বলা হয়েছে। কারণ, হাসপাতালগুলোতে ঠিক কী পরিমাণ রোগী আসবে, তা তো আগাম বলা যাচ্ছে না। সেজন্য প্রস্তুতিটা আমাদের রাখতে হবে, যাতে কোনো রোগী ফিরে না যায়। আমরা আজ ঢাকা মেডিকেল কলেজ, মুগদা, মিটফোর্ড, সোহরাওয়ার্দী, কুর্মিটোলা, রাজশাহী, সিলেট হাসপাতালসহ বিশেষায়িত ও সদর হাসপাতাল নিয়ে বসেছি।’তিনি বলেন, ‘আমাদের আপাতত কোনো চ্যালেঞ্জ নেই। যে রোগী আসছে ভালোভাবেই ম্যানেজ করা যাচ্ছে। তবে, যদি রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পায়, তাহলে লজিস্টিক সাপোর্টের প্রস্তুতি রাখতে হবে। কারণ, ডেঙ্গু সব সময় জটিল ও ক্রাইসিসের। এটাকে রুটিনভাবে দেখলে হবে না। ব্লাড বা প্লাটিলেটের অভাব যাতে না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে বলা হয়েছে।’‘ডেঙ্গু সিজনাল কিছু না। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের জন্য যেখানে মশার জন্ম ও বংশবৃদ্ধি ঘটছে, সেখানে ধ্বংস করা দরকার। এটা নিয়ে জনসচেতনতাই বেশি জরুরি। চিকিৎসার জায়গায় আমরা চিকিৎসা দিচ্ছি। চিকিৎসা দিয়ে রোগীকে ভালো করতে পারলেও ডেঙ্গুর যে বিস্তার সেটা তো অপ্রত্যাশিত। করোনা অদৃশ্য শক্তি, কিন্তু ডেঙ্গু চেনা শক্তি।’স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক আরও বলেন, ‘এই মশা কোথায় অবস্থান করে, কীভাবে বিস্তার লাভ করে, সেটা আমরা জানি। বাসা-বাড়িতে কোনো পানি জমিয়ে রাখা যাবে না। আমাদের বাসা-বাড়িতে যদি নিজেরা সচেতন থাকি আর সিটি করপোরেশন যদি তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখে, তাহলে আমরা খুব দ্রুতই স্বস্তির জায়গায় যেতে পারব।’ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেছেন, ‘আমাদের সমন্বয়ের কোনো একটা জায়গায় গ্যাপ হচ্ছে। সেটা আমাদের পূরণ করতে হবে। সিটি করপোরেশন বাইরে কাজ করছে। বাসায় নিজের পরিচ্ছন্নতা আমাদের নিজেদেরই করতে হবে। আরবানাইজেশনের কারণে ডেঙ্গু সারা দেশেই দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। সুতরাং সচেতনতার বিকল্প নেই।’স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গু সংক্রান্ত উপস্থাপনায় বলা হয়, চলতি বছরে ১২ অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ২২ হাজার ৫১৭ জন। গত বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন ২৮ হাজার ৪২৯ জন। ২০২০ সালে আক্রান্ত হয়েছিলেন ১ হাজার ৪০৫ জন। তবে, ২০১৯ সালে সর্বোচ্চ ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন।স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, ঢাকা সিটি করপোরেশন এলাকায় চলতি বছরের ১২ অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ১৬ হাজার ৭৬২ জন। ঢাকার বাইরে আক্রান্ত হয়েছেন ৫ হাজার ৭৭৫ জন। ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে ৪৬ জন নারী এবং ২৯ জন পুরুষ মারা গেছেন।অপরদিকে, ২০১৯ সালে ডেঙ্গুতে মারা যান ১৭৯ জন। ২০২০ মৃত্যু হয় ৭ জনের। ২০২১ সালে মৃত্যু হয় ১০৫ জনের। সর্বশেষ ২০২২ সালের ১২ অক্টোবর পর্যন্ত ৭৫ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।