কষ্টে আছি, কারে কমু এই কষ্টের কথা, ফতুল্লা বাসীর জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ শেষ হবে কবে?
ফতুল্লা প্রতিবেদকঃ প্রবল বৃস্টি হলেই ফতুল্লা পৌষারপার তলিয়ে জলাবদ্ধতায় বিরামহীন কষ্টে জীনযাপন করে এলাকার মানুষ। এ জলাবদ্ধতার সমস্যা দূর করতে নেওয়া হয়নি যথাযথ উদ্যোগ এমন অভিযোগ এলাকাবাসির।পৌষারপার এলাকার বাসিন্দা চিকিৎসক মোহাম্মদ দুলাল অভিযোগ করে বলেন, ‘গত তিন বছর ধরে বর্ষা আসার আগে বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যায় পুরো এলাকা। গত দুই বছর নানাভাবে পানি নিষ্কাশন করা হয়েছে, কিন্তু এ বছর বৃস্টির পানিতে জলাবদ্ধতায় এলাকার মানুষের সিমাহীন দূর্ভোগ বেড়েছে । ঘরের ভেতর পানি, রাস্তা কোমর পর্যন্ত পানি। ঘর থেকে বের হলে সাথে করে একটি অতিরিক্ত পোশাক নিয়ে বের হতে হয়। নৌকায় বা ভ্যানে করে চলাচল করতে হয়। জলাবদ্ধতার কারণে ফতুল্লায় বাড়িঘর ও রাস্তা পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে তিনটি ইউনিয়নের কয়েকটি ওয়ার্ডের হাজারো মানুষ। নৌকায় ও ভ্যানে করে চলাচল করতে হচ্ছে স্থানীয় লোকজনদের। গত মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা গেছে, সদর উপজেলার ফতুল্লা ইউনিয়নের লালপুর, পৌষার পাড়, এনায়েত নগর ইউনিয়নের উত্তর মাসদাইর ও কুতুবপুর ইউনিয়নের আলীগঞ্জ, নয়ামাটি, চিতাশাল, নুরবাগ ও দক্ষিণ দেলপাড়াসহ আশপাশের কয়েকটি এলাকার হাজারো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এসব গ্রামের ঘরবাড়িতে পানি ঢুকে পড়ায় ইট দিয়ে ঘরের আসবাপত্র উঁচু করা হয়েছে। ঘরের ভেতর পানি থাকায় রান্না করতে ভোগান্তিতে পড়েছেন নারীরা। ময়লা ও দূষিত কালো পানি পেরিয়ে চলাচল করছে এলাকবাসী। পৌষারপার এলাকার বাসিন্দা চিকিৎসক মোহাম্মদ দুলাল বলেন, ‘গত তিন বছর ধরে বর্ষা আসার আগে বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যায় পুরো এলাকা। গত দুই বছর নানাভাবে পানি নিষ্কাশন করা হয়েছে, কিন্তু এ বছর এলাকার মানুষের ভোগান্তি চরম পর্যায়ে। ঘরের ভেতর পানি, রাস্তা কোমর পর্যন্ত পানি। ঘর থেকে বের হলে সাথে করে একটি অতিরিক্ত পোশাক নিয়ে বের হতে হয়। নৌকায় বা ভ্যানে করে চলাচল করতে হয়। তিনি আরও বলেন, ‘কালো ও পচা পানিতে এলাকার মানুষের ডায়রিয়া, আমাশয়সহ নানা রোগে ভুগছে। বিশেষ করে অসুস্থরা সবচেয়ে বিপদে পড়ছেন। কারণ তাদের এ পানি পার হয়ে হাসপাতালে যেতে হয়। আমরা অতিষ্ঠ হয়ে গেছি। অনেকে এলাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। লালপুর এলাকার বাসিন্দা মজিবুর রহমান বলেন, ‘এলাকার মানুষ পানিতে মরলেও কারও কিছু যায় আসে না। চেয়ারম্যান, মেম্বারের বাড়িতে তো পানি ওঠে নাই, তাই তারা বোঝে না মানুষের কষ্ট। এলাকার মানুষ চেয়ারম্যানদের কাছে গেলে তারা কয় দেখতাছি, কিন্তু পানি তো যায় না। চিতাশাল এলাকার সবজি দোকানি সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘এলাকার অধিকাংশ দোকান বন্ধ। করোনা মহামারির প্রভাব এখনো বিরাজ করছে এর মধ্যে ব্যবসার অবস্থা খারাপ তার ওপর এই পানি। তাই ইট দিয়ে মাচা করে সবজি রাখছি। আশপাশের মানুষ ময়লা দিয়ে আইসা কিনে নিয়ে যায়। অনেক কষ্টে আছি, কারে কমু এই কষ্ট। ঘরের মধ্যে পানি থাকায় রান্না করতে নানা সমস্যায় ভুগছেন নারীরা। পৌষার পাড় এলাকার আলেয়া বেগম বলেন, ‘ময়লা পানি দিয়ে হাইটা দূর থেইকা ভালা পানি কিন্যা আনতে হয়। তারপর সেই পানি দিয়া রান্না করি। প্রতিবছর এই সময় রাস্তা, বাড়িঘরে পানি উঠে। বাচ্চারা ঘর থেকে বের হতে পারে না। শুনছি দুইটা মোটরের পাম্প দিয়ে পানি সরাইতাছে কিন্তু তারা কী পাম্প লাগাইছে যে এত দিনেও পানি যায় না। তিনি আরও বলেন, ‘গত বছরও এমন হইছে দেড় মাস মানুষ পানির নিচে আছিল। এরপর মোটর দিয়া পানি সরানো হইছে। কিন্তু পানি সরানোর কোনো ব্যবস্থা নেয় না নেতারা। তাদের কাছে গেলে শুধু কয় সব ঠিক কইরা দিব। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খন্দকার লুৎফুর রহমান স্বপন বলেন, পানি নিষ্কাশনের জন্য দুইটি মোটরের পাম্প বসানো হয়েছে কিন্তু তাতেও পানি সরানো সম্ভব হচ্ছে না। তার কারণ এলাকাটা নিচু। পাশের আরও দুইটা ইউনিয়নেও একই সমস্যা। আলাদিনের চেরাগ না পাইলে পানি সরানো সম্ভব না। এলাকার মানুষ অনেক কষ্ট করছে তা তো নিজের চোখেই দেখছি কিন্তু ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষে এর চেয়ে বেশি কিছু করার সামর্থ্য নেই। তাই জেলা প্রশাসনের কাছে পাম্প বাড়ানোর আবেদন করেছি। পাম্প বাড়ানো হলে পানি কমে যাবে।’
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মন্জুরুল হাফিজ জানান, ‘ফতুল্লার কয়েকটি ওয়ার্ডের মানুষ জলবদ্ধতায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে একটি পাম্প দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে উপজেলা প্রশাসনকে। আশা করছি কয়েকদিনের মধ্যে পানি নেমে যাবে। ডিসি আরও বলেন, ‘এসব এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে চার সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে দ্রুত পানি নিষ্কাশন করে জলবদ্ধতার স্থায়ী সমাধানের উপায় খুঁজতে, যাতে করে আগামীতে মানুষ পানিবন্দি না হয়।#
ফতুল্লা প্রতিবেদক
২০ অক্টোবর ২২/ স ০৩/২৭ এ/এম