শিরোনাম
সোনারগাঁওয়ে হাওরের ঐতিহ্যবাহী মালজোড়া গানের আসর | গান নিয়ে সেমিনার
হাসান উল রাকিব – নারায়ণগঞ্জের খবর প্রতিবেদকঃ সোনারগাঁ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের বৈশাখী মেলায় হাওরের ঐতিহ্যবাহী মালজোড়া গানের আসর ও গান নিয়ে সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে । সেমিনারে ঐতিহ্যবাহী মালজোড়াগান নিয়ে বিষয়ে মূলপ্রবন্ধ পাঠ করেন লোকসংস্কৃতি গবেষক ও লেখক সুমনকুমার দাশ। এসময় তাকে উত্তরীয় পড়িয়ে সম্মান জানানো হয়।
শুক্রবার ১৯ এপ্রিল বিকেলে বৈশাখী মেলা উপলক্ষে সোনারগাঁয়ের লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন ( সোনারগাঁ জাদুঘর ) মালজোড়া গানের আয়োজন করে । সন্ধ্যায় জাদুঘরের সোনারতরী লোকজ মঞ্চে শুরু হয় গুরু- শিষ্যের মালজোড়া । বাউল সাধক কফিলউদ্দিন সরকারের শিষ্য বাউল সূর্যনাল দাস গুরু এবং বাউলসম্রাট শাহ আবদুল করিমের শিষ্য সিরাজ উদ্দিন শিষ্যের ভূমিকায় গান করেন । মালজোড়ার রীতি অনুযায়ী বন্দনা গানের মাধ্যমে শুরু হয় দুই বয়াতির লড়াই ।
ঢোল , বাঁশি , হারমোনিয়াম , বেহালা , খঞ্জনির সঙ্গে তাল মিলিয়ে গানে গানে সেসব প্রশ্নের উত্তর দেন সূর্যলাল । দুই বয়াতির আলোচনা , তর্ক , কৌতুক আর গানের মাধ্যমে জমে ওঠে আসর । মালজোড়ার সুর আর ভিন্ন ঢঙের উপস্থাপনায় মুগ্ধ হয় ছুটির দিনে মেলায় ঘুরতে আসা নারী- পুরুষ ।
এসময় মালজোড়া গানের সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন
সোনারগাঁয়ের লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের পরিচালক ও ফোকলোরবিদ ড. আমিনুর রহমান সুলতানের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব আতাউর রহমান। স্বাগত বক্তব্য দেন ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক এ কে এম আজাদ সরকার।
সেমিনারে ঐতিহ্যবাহী মালজোড়াগান নিয়ে বিষয়ে মূলপ্রবন্ধ পাঠ করেন লোকসংস্কৃতি গবেষক ও লেখক সুমনকুমার দাশ।
অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেন এ কে এম মুজ্জাম্মিল হক মাসুদ। সেমিনার শেষে মালজোড়াগান পরিবেশন করেন বাউলশিল্পী সূর্যলাল দাস ও সিরাজ উদ্দিন।
আলোকচিত্রী : শামসুল আলম সেলিম, সভাপতি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, সিলেট; বিশিষ্ট গীতিকার।
সেমিনারে ঐতিহ্যবাহী মালজোড়াগান নিয়ে বিষয়ে মূলপ্রবন্ধ পাঠ করেন লোকসংস্কৃতি গবেষক ও লেখক সুমনকুমার দাশ বলেন , গত শতাব্দীর ত্রিশের দশকে নেত্রকোনার বাউলসাধক রশিদ উদ্দিনের হাত ধরে মালজোড়া গানের শুরু। নিজস্ব ঢঙ ও বৈশিষ্ট্যের কারণে শুরু থেকেই জনপ্রিয় হয়ে উঠে মালজোড়া গান। পরবর্তীকালে সুনামগঞ্জসহ পুরো হাওরাঞ্চলে ছড়িয়ে যায়।
জালাল উদ্দিন খাঁ, চান মিয়া, উকিল মুন্সি ও তাঁর ছেলে আব্দুস সাত্তার, শাহ আবদুল করিম, কামাল উদ্দিন, দুর্বিন শাহ, কারি আমীর উদ্দিন আহমদ ও মো. শফিকুন্নূরের মতো বাউলসাধকরা মালজোড়া গানের আসর মাতিয়েছেন বলে সুমনকুমার উল্লেখ করেছেন।
সুমনকুমার দাশের আলোচনা থেকেই জানা যায়, কারি আমীর উদ্দিন মালজোড়া গেয়ে এতটাই জনপ্রিয় হয়ে উঠেন যে আশির দশকে তিনি ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা বায়না করে গানের আসরে যেতেন। হাজারো শ্রোতা টিকিট কেটে আসতেন তাঁর গান শুনতে। পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে এখন আর তেমন আসর বসে না। লোক ফাউন্ডেশনের এমন সেমিনার ও গানের আসর আমাদের লোকজসংস্কৃতিকে শক্তিশালী করবে। #