বিদায় হে প্রিয়মুখ, প্রিয়জন || আহমেদ বাবলু
আহমেদ বাবলুঃ এ শহরে একজন অসিত কুমার ছিলেন। আছে তো আরও কত কেউ কেউ।
কত কত মুখ শুধু আওয়াজ করে যায়, ব্যানারে ব্যানারে জানান দেয়
তারাও আছে। সগৌরবে। আসলে সে থাকা নিষ্ফলা শুধু।
অসিত কুমার শুধু আওয়াজে ছিলেন না, ছিলেন না ব্যানার সর্বস্ব সাংস্কৃতিক পাখি।
তাঁর জমিন নিষ্ফলা ছিল না। তিনি ফসলের শেকড়ে শেকড়ে সুরে সুরে পানি দিতেন,
সে শেকড়ের বৃক্ষরূপ হয়ত দেখা হলো না তাঁর।
আদর্শের আয়নায় আমাদের মুখ সুন্দর। আদর্শের ফ্রেমে আমরা প্রেমে বাঁধা পড়ি। মানুষের আদর্শ থাকতে হয়। ডান কিংবা বাম। শুধু মনে রাখা দরকার-
আদর্শ যেন বুকের ভেতর ঘৃণার পাহাড় তৈরি না করে,
যে পাহাড়ের নিচে চাপা পড়ে গিয়ে ক্ষমাশীল পবিত্র আত্মার মৃত্যু হয়।
এ শহরে একজন অসিত কুমার ছিলেন। আমাদের প্রথাগত আদর্শের ফ্রেমে
তাঁকে মাঝে মাঝে হয়ত অপবিত্র মনে হতো। আমরা অনেকেই গর্জে উঠতাম।
গর্জে উঠেছি। তাঁর প্রতি ছুঁড়ে দিয়েছি হয়ত শত শত ঘৃণার তীরও।
তাতে অসিত কুমার হয়ত বিদ্ধ হয়েছেন। ক্ষত বিক্ষত হয়েছেন। কিন্তু
কী আশ্চর্য! আড়ালে আড়ালে অবিচল থেকে নিজস্ব চাষবাসে মগ্ন ছিলেন তবু।
তাহলে কি শুধু ভাব নয়, কাজেরও আলাদা আদর্শ থাকে কোনো?
ফ্রেমের বাইরে এসে কি প্রেমে পড়া যায়? যায় তো!
প্রেম তো কখনো ফ্রেমে থাকে না। সংস্কার ভাঙার নামই তো সংস্কৃতি, তাই না?
অতঃপর প্রেমে ফ্রেম ভাঙতে হয়, সংস্কৃতিমানের ভাঙতে হয় সংস্কার।
আমাদের ফ্রেমের বাইরে, সংস্কারের বাইরে একজন অসিত কুমার
কর্মমূখর ছিলেন। শিল্পে যার একাগ্র বসবাস ছিল।
তবু এই সত্য জানি-
“আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু, বিরহদহন লাগে
তবুও শান্তি, তবু আনন্দ, তবু অনন্ত জাগে॥
তবু প্রাণ নিত্যধারা, হাসে সূর্য চন্দ্র তারা,
বসন্ত নিকুঞ্জে আসে বিচিত্র রাগে॥”
তেমতো কোনো বসন্তের কিংবা হতে পারে তা বরষারও,
হুট ক’রে কোনো রাগ, কোনো সুর, কোনো গান এসে আমাদের মনে করিয়ে দিয়ে যাবে
এ শহরে একজন অসিত কুমার ছিলেন। যিনি অনন্ত অসীমে
হয়ত শিল্পের সাথেই বেঁধেছেন ঘর।
সে ঘরে তিনি ভালো থাকুন। ভালোবাসায় থাকুন। বিদায় হে প্রিয়মুখ, প্রিয়জন।
লেখকঃ কবি ও সাহিত্যিক আহমেদ বাবলু