রূপগঞ্জে অতি বৃষ্টিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতার জনদুর্ভোগ
নিজাম উদ্দিন আহমেদ – রূপগঞ্জ প্রতিবেদকঃ টানা ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার গোলাকান্দাইল, ভুলতা, তারাবো, মুড়াপাড়া, রূপগঞ্জ, দাউদপুর ও ভোলাবো এলাকার নিন্মাঞ্চলে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা স্থায়ীরূপ নিয়েছে। রাস্তা-ঘাট, খেলার মাঠ বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে।
বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠে পানি ঢুকে পড়েছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকার নিন্মাঞ্চলের মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। কোন কোন স্থানে অব্যাহত বৃষ্টিতে সেতুর সংযোগ সড়ক ডুবে গেছে। রূপগঞ্জের চোরাবো-সমু মার্কেট সড়ক ডুবে যাওয়ায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে। বৃষ্টি বেশি হওয়ায় বালু ও শীতলক্ষ্যাসহ নদ নদীর পানীও বেড়েছে। তারাবো পৌরসভার নিন্মাঞ্চলের বসতঘরে হাঁটু সমান পানি। গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের সাওঘাট, মাহনা, কেশাবো, কালী, শিংলাবো, নতুন বাজারসহ আশপাশের এলাকার নিন্মাঞ্চলে হাঁটু সমান পানি। কোন কোন স্থানে কোমর সমান পানি জমে স্থায়ী জলাবদ্ধতায় রূপ নিয়েছে। তাতে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বেড়েই চলছে। কয়েকটি বিদ্যালয়ের মাঠে পানি ডুকেছে। রাস্তার বিভিন্ন অংশ পানিতে তলিয়ে গেছে। এদিকে পানি নি:ষ্কাশনের জন্য বেশ কিছু সেচ মেশিন বসানো হয়েছে।
মুুড়াপাড়া ইউপি সদস্য আলম হোসেন বলেন, দড়িকান্দী, গঙ্গানগর, কুলীনপাড়া, সরকারপাড়া এলাকার নিন্মাঞ্চলের ঘর বাড়িতে পানি উঠেছে। তলিয়ে গেছে কৃষকদের ফসলি জমি। মুড়াপাড়া ইউপি সদস্য মানিক মিয়া বলেন, স্থানীয় শিল্প কারখানা অপরিকল্পিভাবে স্থানে স্থানে বাঁধ নির্মাণ করায় ও বর্জ্য ফেলে পানি নি:ষ্কাশনের খাল বন্ধ করে দেওয়ায় সৃষ্ট জলাবদ্ধতা স্থায়ী রূপ নিয়েছে। মুড়াপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব তোফায়েল আহম্মেদ আলমাছ বলেন, জলাবদ্ধতা এখন স্থায়ী রূপ নিয়েছে। নিচু এলাকার রাস্তা-ঘাট তলিয়ে গেছে। মঙ্গলখালী, মুকিবনগর, বানিয়াদী, ফরিদআলীরটেক, মীরকুটিরছেঁও, মাছিমপুর, মীরগদায়, বাড়ৈইপাড়াসহ আশপাশের নিন্মাঞ্চলে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা নিরসনে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দায়ী শিল্প কারখানার মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করে পানি নি:ষ্কাশনের স্থায়ীভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপ-সহকারী প্রকৌশলী ফারুক আল মামুন বলেন, শীতলক্ষ্যা নদীর পানি বাড়ছেই। তবে বিপদসীমার ১ দশমিক ৫৩ মিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জ-নরসিংদী সেচ প্রকল্প বøক-১ এর চারটি সেচ পাম্প দিয়ে সার্বক্ষণিক পানি নি:ষ্কাশন করা হচ্ছে। আর ভারী বৃষ্টিপাত না হলে পরিস্থিতি উন্নতির দিকে যাবে।
রূপগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার ফাতেহা নূর বলেন, শাক-সবজি ও রোপা আমনের বীজতলার আংশিক ক্ষতি হয়েছে। রূপগঞ্জ উপজেলা প্রকোশলী মোঃ জামাল উদ্দীন বলেন, অতি বর্ষণে ও পাহাড়ী ঢলে পানি বেড়ে যাওয়ায় চলাচলে কিছুটা বিঘ্ন ঘটছে। রাস্তা ঘাটের ক্ষতি হয়েছে। তবে পানি নি:ষ্কাশনের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তারাবো পৌরসভার মেয়র হাছিনা গাজী বলেন, পৌরসভার ভেতরে পানি নি:ষ্কাশনের জন্য ৩১ কিলোমিটার খাল খনন করা হয়েছে। এ খাল দিয়ে যাত্রামুড়ার পাম্পহাউজের ৩টি ও রূপসী পাম্পহাউজের ৩টি পাম্প দিয়ে দিনরাত পানি নি:ষ্কাশন করা হচ্ছে।
রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফয়সাল হক বলেন, সৃষ্ট জলাবদ্ধতা নিরসনে সংশ্লিষ্ট সকলেই সার্বক্ষণিক কাজ করছেন। আগামী দুই তিন দিনের মধ্যেই জলাবদ্ধতা নিরসন হয়ে যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীর প্রতিক বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করা হচ্ছে। সেচ প্রকল্পের পাম্পগুলো দিনরাত পানি নি:ষ্কাশন করছে। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে পানি নি:ষ্কাশনের কাজ অব্যাহত রয়েছে। #