মেয়র আইভী একজন মেধাবী চিকিৎসক থেকে সফল রাজনীতিবিদ
নারায়ণগঞ্জের খবর ডেস্কঃ দরকার দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন —মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের তিন – তিনবার নির্বাচিত মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী । একজন মেধাবী চিকিৎসক থেকে সফল রাজনীতিবিদ । দৈনিক কাল বেলা পত্রিকায়লি খেছেন রীতা ভৌমিক।
রাজনীতি মানেই মানুষের সেবা । একজন মেয়র করছি । পরিবার থেকেই মেয়েরা প্রথম অবহেলার শিকার হয় । পরিবারই মেয়েদের গৃহবন্দি করে রাখে । মেয়েদের ক্ষেত্রে মায়েদের দৃষ্টিভঙ্গি এখনো তেমন পরিবর্তন হয়নি । যে মায়েদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন হয়েছে , সেই মায়েদের মেয়েরাই অনেকদূর এগিয়ে গেছে । সর্বপ্রথম আমাদের যদি কিছু পরিবর্তন করতে হয় , তাহলে দরকার আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি , মানসিকতার পরিবর্তন । নিজের কষ্ট অনুভব করেই মেয়েকে কষ্ট দেওয়া যাবে না । ছোটবেলায় নিজের বিয়ে হয়েছে বলে মেয়েকে বাল্যবিয়ে দেওয়া যাবে না । জমি বিক্রির টাকায় মেয়েকে বিয়ে নয় , লেখাপড়া শেখাতে হবে । নিজে লেখাপড়া করতে না পারলেও মেয়েকে লেখাপড়া করাতে হবে । লেখাপড়া , খেলাধুলা , চলাফেরা , চাকরি , মতামত প্রকাশের ক্ষেত্রে মেয়েকে সহযোগিতা করা । এটাই হবে আমাদের নারী সমাজের স্লোগান — বললেন নারায়ণগঞ্জের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী । সামাজিকভাবে নিজের অবস্থান দৃঢ় করতে হলে ঘরে বাইরে নারীকে শক্তিশালী হতে হবে । যুদ্ধ করেই পরিবার , সমাজ , রাষ্ট্রে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে । যে নারী সাহসী , সে – ই সামনে এগিয়ে যেতে পারবে । তবে প্রতিটি কাজই সততার সঙ্গে করতে হবে ।
পরিবার থেকে কর্মক্ষেত্র সব জায়গায় নারীরা সততার সঙ্গে কাজ করে বলে মনে করেন সেলিনা হায়াৎ আইভী । নারীরা যাতে স্বাবলম্বী হয় , পরিবার , সমাজ , রাষ্ট্রে নিজের বলিষ্ঠ অবস্থান তৈরি করতে পারে , এ জন্য নারীদের উন্নয়নে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি । ইউএনডিপির সহযোগিতায় স্থানীয় সংগঠনের মাধ্যমে নারীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছেন । এ ব্যাপারে সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন , নারায়ণগঞ্জ এলাকায় গার্মেন্ট সেক্টরকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে । নারীরা গার্মেন্টে কাজ করলেও অনেকে মেশিন চালাতে পারেন না । তাদের মেশিন চালানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় । যিনি ড্রাইভিংয়ে আগ্রহী তিনি ড্রাইভিংয়ের প্রশিক্ষণ নেন । এ ছাড়া পুরুষদেরও ড্রাইভিংয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে । অনেক নারী মুদিদোকান , ব্যবসা করতে আগ্রহী , কিন্তু পুঁজি নেই । আমরা তাদের পুঁজির ব্যবস্থাও করে দিই । নারায়ণগঞ্জ সদরে এক রাজনৈতিক পরিবারে জন্ম সেলিনা হায়াৎ আইভীর , ১৯৬৬ সালের ৬ জুন । ছাত্রজীবনে বাবা আহমদ চুনকার হাত ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন । ১৯৮৪ সালে বাবাকে হারান । ১৯৮৫ সালে সোভিয়েত রাশিয়ার স্কলারশিপ নিয়ে ডাক্তারি পড়তে যান । কিন্তু সেখানে পড়তে যাওয়ার ক্ষেত্রে অনেক সামাজিক বাধা আসে । পরিবার , আত্মীয়স্বজন সবাই চাচ্ছিলেন তিনি ঢাকায় ডাক্তারি পড়েন । এমনকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তখন বিরোধী দলের নেত্রী । রাজনীতির কারণে তিনিও তাকে ঢাকায় লেখাপড়া করার পরামর্শ দেন । কিন্তু তার মা তাকে সোভিয়েত রাশিয়ায় পড়ার পক্ষে সম্মতি দেন । মা বলেছিলেন , আইভী যেখানে পড়তে চায় সেখানেই পড়বে । কেউ তাকে বাধা দেবে না । অথচ তার মা ঘরের চার দেয়ালের ভেতরেই বড় হয়েছেন । বাইরের জগৎ সম্পর্কে ধারণা ছিল না । স্বামীর সেবা আর মানুষকে রান্না করে খাওয়াতেই জীবন পার করেছেন । সেই মা মেয়ের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন বলেই আজকে আইভী হতে পেরেছেন । লেখাপড়া খুব বেশি না জানলেও তিনি অসম সাহসী ছিলেন । মায়ের মতো আইভীর মধ্যেও সাহসিকতার পরিচয় মেলে । দৃঢ় চেতনার আইভী ১৯৮৫ সালে রাশিয়ায় পড়তে যান । এমবিবিএস ডিগ্রি নিয়ে ১৯৯২ সালে দেশে ফিরে ইন্টার্নি করেন । ১৯৯৫ সালে মিটফোর্ড এবং নারায়ণগঞ্জ হাসপাতালে অনারারি চিকিৎসক হিসেবেও কিছুদিন দায়িত্ব পালন করেন । ২০০৩ সাল । সেলিনা হায়াৎ আইভী পৌর চেয়ারম্যান নির্বাচনে অংশ নিয়ে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার প্রথম নারী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন ।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রথম নারী মেয়র তিনি । যিনি পরপর তিনবার নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন । রাজনীতিতে আসা নিয়েও অনেক প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়েছেন । অনেকেই তার সম্পর্কে মন্দ কথা বলতে কুণ্ঠাবোধ করেননি । কেউ কেউ তাকে বদমেজাজি , খারাপ , বাবার মতো হয়নি ,
ডাক্তারি পড়েছে রাজনীতির সে কী বুঝবে ! দুদিন পর তাকে এখান থেকে চলে যেতে হবে , এক বছরও যাবে না সে এখান থেকে পালাবে ইত্যাদি নানা মন্তব্যও তাকে শুনতে হয়েছে । তার বিরুদ্ধে বিকৃত পোস্টার লাগিয়ে পুরো নারায়ণগঞ্জ ভরে দিয়েছে । এতকিছুর পরও তাকে দমানো যায়নি । এ প্রসঙ্গে সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন , আমার বিরুদ্ধে যারা ষড়যন্ত্র করেছিল তাদের বলেছিলাম , আমার নামে কুৎসা রটাবে , আমি ভয় পেয়ে মুখ লুকিয়ে চলে যাব , তা হবে না । নারী বলে আমাকে প্রতিহত করার চেষ্টা করা হয়েছিল , সেদিন সংকল্প নিয়েছিলাম , আমাকে যত কিছুই বলুক আমি এখান থেকে যাব না । কারণ আমি সততার সঙ্গে মানুষের জন্য কাজ করতে চেয়েছি । আমি নারায়ণগঞ্জের রাজনীতি পরিবর্তন করতে চেয়েছি । গণমানুষের কাছে যেতে চেয়েছি । ভয়ভীতি ত্রাসের রাজত্ব ভাঙতে চেয়েছি । এর ফলে শত নারী আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন । তিনি আলী আহমদ চুনকা ফাউন্ডেশন এবং নারায়ণগঞ্জ হার্ট ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি । রাজনীতিতে বিশেষ অবদানের জন্য ২০১৬ সালে অনন্যা শীর্ষ দশ সম্মাননায় ভূষিত হন । ২০২২ – এর আগস্টে প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী , ডা . সেলিনা হায়াৎ আইভী প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা পান । #