শিরোনাম
দুই হাজার কুড়িতে একটি অসমাপ্ত লেখা – ম . মানিক
দুই হাজার কুড়িতে একটি অসমাপ্ত লেখা – ম . মানিক
“আমরা যারা কবিতা লেখার জন্য একত্রিত হয়েছিলাম
সেইসব হীরক হৃদয় মানুষ
যারা লিখবে পৃথিবীর না বলা গল্পসমূহ
সৃষ্টির ধারাপাত
বিলের পানিতে ভাসমান পানকৌড়িটির হৃদয়ের কথা
অতিক্রান্ত দুপুর ও বিকেলের ডাইরি
অপসৃয়মান সময় আর তার লাগামের গোপন সংবাদ;
বিষণ্ণ বিপ্লবীদের ধারাবাহিক রক্তক্ষরণ।
অনিবার্য বিষাদে ভরে থাকা আমাদের হৃদয়ের যাবতীয় আক্ষেপের শুশ্রূষায়
আমরা পরস্পরকে দিতে চেয়েছিলাম
আশ্বাসের বিশাল আকাশ
সমুদ্রতীরের গল্পসমূহ
অরণ্যের নীরবতা, সমুদ্রের কল্লোল;
প্রচুর মানুষ জড়ো হয়েছিলাম
মনে হচ্ছিল কবিতা হয়ে উঠবে আগামী যুগের ত্রাতা–“
প্রিয় বন্ধু কবি আরিফ বুলবুল এখন থেকে ঠিক ১০ ঘন্টা পূর্বে উপরের লেখাটি পোস্ট দিয়েছেন। উপরের লেখাটুকু তার সম্পূর্ণ লেখাটির অংশ বিশেষ।
লেখার শেষ অংশটুকু এখানে উল্লেখিত হয়নি।
আমি বরাবরই কবি আরিফ বুলবুলের কবিতা, গান, নানা বিষয় ভিত্তিক লেখার অনুরাগী। কিন্তু লেখাটির শেষ অংশে যেয়ে মনের মধ্যে কিছুটা ধাক্কা খেলাম। শব্দ প্রয়োগ ও মনের ক্ষোভ প্রকাশ কেমন বেখাপ্পা অসংযত মনে হলো। ইচ্ছে হলো শেষ অংশের একটা কঠিন সমালোচনা লিখি।
কিন্তু লিখতে বসে মনোজগতে এক নতুন ভাবনার উদয় হলো–একজন লেখকের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করার কোনো অধিকার আমার আছে কি?
লেখকের সব কথা, সব চিন্তা কেন আমার পছন্দ মাফিক হতে হবে?
একজন কবিইতো বলতে পারেন, “আমিও গ্রামের পোলা, চুদমারানির পোলা কইয়া আমিও গালি দিতে পারি! “
কিংবা “সব শালা কবি হবে, পিঁপড়ায় গো ধরেছে উড়বেই। বন থেকে দাতাল শুয়োর রাজাসনে বসবেই। “
একজন কবিই পারেন এমন করে জীবন যুদ্ধে হার না মানা জীবনের স্বরূপ উম্মোচন করতে —
“এক দুপুরে ধান ভানা শেষ হলে এক সের চাল নিয়ে বাড়ির পথে মেঘজান।
ঢাল বেয়ে উঠতেই ডানে মৃত শাশুড়ীর কবর।
আধঘুমু ক্লান্ত মেঘজান যেন প্রায়ই দেখে – কবরে শুয়ে নয়, কবরের উপর বসে আছে তার বৃদ্ধ শাশুড়ী
দুপুরের ভাতের অপেক্ষায়–“
একজন কবিই গভীর অন্ধকারেও আধারের স্বরূপ দেখতে পান। তাইতো তিনি লিখতে পারেন—
“এখনো যাদের কাছে স্বাভাবিক বলে মনে হয়
মহৎ সত্য বা রীতি, কিংবা শিল্প অথবা সাধনা
শকুন ও শেয়ালের খাদ্য আজ তাদের হৃদয়। “
সন্ত্রাসীদের হাতে নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার একজন তরুণ মেধাবী বালকই তার কবি হৃদয়ের গহীনে দেখতে পান এ প্রজন্মের ললাটের লিখন —
তাইতো তিনি একে যেতে পারেন মানুষের মুখোসের আড়ালে ঘাতকের নিষ্ঠুরতার এমন ভয়ঙ্কর চিত্রকল্প—-
“ওরা ছুরি ও
ধারালো অস্ত্র দিয়ে
দ্বিখণ্ডিত করে কণ্ঠনালি
ওরা উল্লাসে দেখে
কীভাবে শরীর থেকে
বৃষ্টির মতো রক্ত গড়ায়।”
এমন অনেক ধারার কথা হৃদয়ে ঘুরপাক খায়। প্রিয় বন্ধু কবি আরিফ বুলবুলের প্রতি জমে ওঠা বিরক্তটুকু ভালবাসায় রূপ নেয়।
মনের ভেতর ঝংকৃত হয় –
কবিকে কথা বলতে দাও, ওর টুটি চেপে ধরো না। এখনও একমাত্র কবিই পারেন সমাজের সকল মিথ্যে, সকল অসঙ্গতির বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়াতে।
——-
এসব ভাবতে ভাবতে এমনিতেই মনটা খারাপ হয়ে আছে।
নারায়নগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় করোনার প্রকোপ বেড়েছে, লক ডাউন কঠোর করা হয়েছে। মানুষের চলাচল বিশেষভাবে নিয়ন্ত্রিত। চারিদিক থেকে নানা ধরনের অশুভ অমানবিক সংবাদে বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। সুস্থ্য মানুষের নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।
কোথাও করোনায় আক্রান্ত স্বজনকে বুকে জড়িয়ে বিপন্ন মানুষ একটু চিকিৎসার আশায় হাসপাতাল, হাসপাতালে, ক্লিনিকে ক্লিনিকে, ডাক্তারদের দ্বারে দ্বারে হন্যে হয়ে ঘুরছে, কোথাও স্বজনকে রাস্তায় ফেলে রেখে আপনজনরা দূরে সরে যাচ্ছে।
সারাদেশ, সারা দুনিয়া ব্যাপি মিডিয়া প্রচার মাধ্যম এক ভয়ঙ্কর অমানবিক প্রচারে মেতে উঠেছে, কারো বিপদে কেউ এগিয়ে যেও না। সকলেই যার যার ঘরে থাকো। একা হয়ে যাও। একা একা বাঁচো। করোনায় আক্রান্ত কাউকে স্পর্শ করোনা। নিজে বাঁচলে বাপের নাম। প্রাথমিক ভাবে এক তীব্র ভয় মানুষের ভেতর ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। করোনায় আক্রান্ত হয়ে যাতনা মানুষ মারা যাচ্ছে, তার চেয়ে বেশী মরছে বিনা চিকিৎসায়, ভয়ে, ডাক্তারদের অবহেলায়, মানুষের অমানবিকতায়।
ক্ষণে ক্ষণে টিভিতে, বিভিন্ন মিডিয়া প্রচার হতে থাকে, সন্তানের করোনা হয়েছে, ওকে আলাদা করে দাও। বাবা বা মায়ের করোনা হয়েছে, তাকে আলাদা বন্দীশালায় পাঠিয়ে দাও। পাশের বাড়ির মাসী আক্রান্ত, ছোটবেলার বন্ধু আক্রান্ত, তাকে ধরে এ্যাম্বুলেন্সে তুলে দেয়া যাবে না —–
কিন্তু মানবতার কাছে সবই পরাজিত হয়। করোনা এবং বিভ্রান্ত সৃষ্টিকারী অশুভ শক্তিও পরাজিত হবে।
সাধারণ মানুষ যারা দিন আনে দিন খায়, প্রতিদিনের উপার্জনে যাদের সংসার চলে, একদিন কাজ না করলে যাদের অভুক্ত থাকতে হয়, অল্প বেতনের চাকরীজীবি –
এমন জনগোষ্ঠীর পারিবারিক অর্থনৈতিক জীবন আজ করোনার তান্ডবে ভয়াবহ হুমকির মুখোমুখি।
তারা চরম মানবেতর জীবন যাপনে বাধ্য হচ্ছে।
এইসব জনগোষ্ঠীর সাহায্যার্থে সমাজের সাধারণ মানুষের সহযোগিতায় বিভিন্ন রাজনৈতিক সামাজিক সংগঠনসমূহ তাদের সীমিত সামর্থ্য নিয়ে স্বেচ্ছাসেবক টিম গঠন করে বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতামুলক কাজে ঝাপিয়ে পড়েছে। আমার মাথায়ও কিছু সামাজিক দায়িত্ব পালন করা যায় কিনা, একটা স্বেচ্ছাসেবক টিম করে নিজেদের পাশে, দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানো যায় কিনা এমন চিন্তা ঘুরপাক খেতে থাকে। এ অবস্থায় সাহসী তরুণ যুবক দরকার। খবর পাচ্ছি আমাদের আমলাপাড়া একতা খেলাঘরের সাধারণ সম্পাদক অনিক সাহা আমাদের আশপাশের অসহায় পরিবারগুলোর বিভিন্ন সমস্যায় ছুটে যাচ্ছে। নিজেকে সুরক্ষিত রেখে অসহায় পরিবারের বাজার সদাই থেকে করে দেয়া থেকে শুরু করে নানামুখী সহযোগিতায় ছুটে যাচ্ছে। আমি যেন হালে পানি পেলাম। ওর সহযোগিতা কিছু করা যায় কিনা সে ভাবনায় ডুবে গেলাম। মনটা যেন আরও খারাপ হয়ে যায়।
একটি বিশেষ কাজের প্রয়োজনে একটু শহরে বেড়োলাম। কাজ শেষে কাছের দু চারজনের সাথে দেখা হলো, কিছুটা আলাপ হলো, কিন্তু প্রখড় রৌদ্র আর তাপদাহে টিকতে না পেরে খুব দ্রুতই বটতলা নদীর পাড়ে গিয়ে দাঁড়ালাম। বন্ধু বুলবুল, ছোটভাই শাহিন, শিমুলের সাথে দেখা হলো, কিছুটা আড্ডা হলো, বহুদিন পর মুক্ত জীবনের স্বাধ পেলাম। শিমুল ও শাহিন ওদের মোবাইলে
কিছুটা আড্ডা হলো , বহুদিন পর মুক্ত জীবনের স্বাধ পেলাম । শিমুল ও শাহিন ওদের মোবাইলে করোনাকালীন কিছু স্মৃতি ধরে রাখে । বাড়ি ফিরে এলাম । জামা কাপড় চেঞ্জ করে ভালো করে গোসল করে নিলাম । অয়ন্তর রুমে অয়ন্ত হারমোনিয়ামে গান করছে — ” দিনে দিনে খসিয়া পড়িবে রঙিলা দালানের মাটি , গোসাই জী কোন রঙে — । ” আমার শব্দ পেয়ে ডাকলো , আব্বু শোনোতো ? বললাম , কি হয়েছে বাবা বলো ? আব্বু ক্ষুধা লাগছে , কিছু খেতে দাও । গতরাতে ওর আম্মুর সাথে রাগ করে না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়েছে । একটু দেরীতে ঘুম থেকে ওঠেছে । নাস্তা না করেই হারমোনিয়াম নিয়ে রেওয়াজে বসেছে । গত রাতের রেশ কাটেনি , তাই ওর মা’র কাছে খাবার চায়নি । দুপুর প্রায় ছুঁই ছুঁই , দুপুরের রান্নাও প্রায়ই শেষ পর্যায়ে , তবুও দু টুকরো চিকেন ফ্রাই ভাজা ছিলো , ওইটুকু গরম করে দুই পিস পাউরুটি দিয়ে অয়ন্তকে খেতে দিলাম । জানতে চাইলো , চিকেন ফ্রাই আম্মু ভেজেছে ? বললাম , জ্বী । চিকেন ফ্রাই খুব পছন্দ করে , তাই অনেক সময় খাবার নিয়ে বিরক্ত করলে দু টুকরো ফ্রাই দিয়ে বুঝে আনা যায় । এদিকে ঝর্ণা বললো , অয়ন্তর আব্বু শুধু অল্প একটু মাছই রান্না করলাম , গরমে টিকতে পারছিনা । বললাম , সমস্যা নেই , চলবে আমাদের ।কিছুটা আড্ডা হলো , বহুদিন পর মুক্ত জীবনের স্বাধ পেলাম । শিমুল ও শাহিন ওদের মোবাইলে করোনাকালীন কিছু স্মৃতি ধরে রাখে । বাড়ি ফিরে এলাম । জামা কাপড় চেঞ্জ করে ভালো করে গোসল করে নিলাম । অয়ন্তর রুমে অয়ন্ত হারমোনিয়ামে গান করছে — ” দিনে দিনে খসিয়া পড়িবে রঙিলা দালানের মাটি , গোসাই জী কোন রঙে — । ” আমার শব্দ পেয়ে ডাকলো , আব্বু শোনোতো ? বললাম , কি হয়েছে বাবা বলো ? আব্বু ক্ষুধা লাগছে , কিছু খেতে দাও । গতরাতে ওর আম্মুর সাথে রাগ করে না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়েছে । একটু দেরীতে ঘুম থেকে ওঠেছে । নাস্তা না করেই হারমোনিয়াম নিয়ে রেওয়াজে বসেছে । গত রাতের রেশ কাটেনি , তাই ওর মা’র কাছে খাবার চায়নি । দুপুর প্রায় ছুঁই ছুঁই , দুপুরের রান্নাও প্রায়ই শেষ পর্যায়ে , তবুও দু টুকরো চিকেন ফ্রাই ভাজা ছিলো , ওইটুকু গরম করে দুই পিস পাউরুটি দিয়ে অয়ন্তকে খেতে দিলাম । জানতে চাইলো , চিকেন ফ্রাই আম্মু ভেজেছে ? বললাম , জ্বী । চিকেন ফ্রাই খুব পছন্দ করে , তাই অনেক সময় খাবার নিয়ে বিরক্ত করলে দু টুকরো ফ্রাই দিয়ে বুঝে আনা যায় । এদিকে ঝর্ণা বললো , অয়ন্তর আব্বু শুধু অল্প একটু মাছই রান্না করলাম , গরমে টিকতে পারছিনা । বললাম , সমস্যা নেই , চলবে আমাদের ।
টেবিলে মাত্র ঠিকা তোলা পাতিলে গরম ভাত – সদ্য চূলা থেকে নামানো কড়াইয়ে কষানো পাঙ্গাস মাছের ঘন ঝোল । গরম ভাতের ধূয়া আর কষানো ঝোলের ঝাঝালো মৌ মৌ গন্ধে পেটের ভেতর মোচর দিয়ে উঠলো । এমনিতে কিছুদিন হলো নাস্তা খাওয়া ছেড়ে দিয়ে দুপুর আর রাত্র এ দুবেলা খাবার খাচ্ছি , তাই ক্ষুধায় পেটের নাড়ি ধরে টান দিলো । এদিকে দুপিস পাউরুটি আর অল্প একটু চিকেন ফ্রাইতে দুবেলা অভুক্ত থাকা আমার ছেলেটির পেট ভরেনি । তাই অয়ন্ত ঘুরে ঘুরে টেবিলের বয়াম থেকে চানাচুর খেয়ে যাচ্ছে । টেবিলে প্লেট নিয়ে ডাকলাম , বাবা ভাত খাবে ? নাও বাড়ো , বলে চেয়ার টেনে বসলো । ওঘর থেকে ঝর্ণা ডেকে বললো , অয়ন্তর আব্বু অয়ন্তর জন্যে চা গরম বসিয়েছি । জিঙ্গেস করলাম , বাবা , আগে চা খাবে ? না , আগে ভাত দাও , পরে মজা কইরা চা খামুনে । একটি মাত্র পদ , ঘন ঝোলে কষানো পাঙ্গাস মাছ — অথচ মনে হচ্ছে বাপপুতে অমৃত খাচ্ছি । এমন টেস্ট হইছে , মূহুর্তে অয়ন্ত দু বেলা না খাওয়ার দুঃখ ভুলে গেলো । ওর মা’কে ডেকে বললো , আম্মু রান্নাটা সে — ই হয়েছে । কোনো কিছু বেশী পছন্দ হলে অয়ন্ত দারুণ ভাবে সে — ই বলে। #
লেখক – ম. মানিক