মাদকের রমরমা বাণিজ্যে ভাংগাড়ির ব্যবসার অন্তরালে মাদক ব্যবসা !
নিজাম উদ্দিন আহমেদ – রূপগঞ্জ প্রতিবেদকঃ রূপগঞ্জে সর্বত্রই চলছে মাদকের রমরমা বাণিজ্য। ইদানিং ভাংগাড়ি ব্যবসায়ীরা ব্যবসার অন্তরালে মাদক ব্যবসা চালিয়ে আসছে। উপজেলার গোলাকান্দাইল সাওঘাট এলাকায় মিথিলা গ্রুপের বাউন্ডারি করা একটি পরিত্যাক্ত বিল্ডিংয়ের অভ্যন্তরে ব্যবসায়ী আনোয়ার তার ভাংগাডির দোকানের অন্তরালে গোডাউনে মাদক বিক্রির অভিযোগ উঠেছে।
গতকাল ২৮ নভেম্বর মঙ্গলবার দুপুরে স্থানীয়রা ওখান থেকে আটপিছ কাটা ড্রেজার পাইপ উদ্ধার করে। জিজ্ঞেসাবাদে বেরিয়ে আসে তাদের ব্যবসার গোপন রহস্য। একাধিক সূত্র জানায় এখানে রাতের আধারে জমজমাট থাকে মাদক ব্যবসা।
এছাড়াও উপজেলার গোলাকান্দাইল ৫ নম্বর ক্যানেল এলাকা, গোলাকান্দাইল উত্তরপাড়া বালুরমাঠ এলাকা, কালী মজলিসের বাগ, মুসলিমপাড়া কাঠবাগান এলাকা, ভুলতা এলাকা, তারাব পৌরসভার হাটিপাড়া, নোয়াপাড়া, বরাব এলাকা মাদকের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। কায়েতপাড়া ইউনিয়নের নগরপাড়া, বাগবাড়ী, দেলপাড়া, নয়ামাটি, কামশাইর, বরুনা এলাকা রীতিমতো মাদকের ডিপো। এ ছাড়া কাঞ্চন, রূপগঞ্জ সদর ইউনিয়নের গোয়ালপাড়া, পূর্বাচল উপশহর, ভোলাব ইউনিয়ন, দাউদপুর ইউনিয়নসহ সমগ্র রূপগঞ্জ মাদকে সয়লাব।
থানা পুলিশ ও স্থানীয়দের তথ্যমতে, গত একযুগে নেশার কাজে বাধা দেয়া ও প্রতিবাদ করায় ২৫ জন খুন হয়েছেন। ২০২০ সালে কায়েতপাড়া এলাকায় মাদকের দ্বন্দ্বে খুন হন আনোয়ার হোসেন। একই বছর শিংলাবো এলাকায় মাদক সেবনে বাধা দেয়ায় ছেলে সাইফুল ইসলামের হাতে মা দেলোয়ারা বেগম নিহত হন। রূপসী কাজীপাড়া এলাকায় মাদক ব্যবসায়ীদের হাতে খুন হন রাজন মিয়া। মাদক সেবন করে গত কয়েক বছরে মারা গেছেন পাঁচজন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কাঁচপুর থেকে আধুরিয়া পর্যন্ত ছোট-বড় প্রায় ৫ শতাধিক শিল্পকারখানা রয়েছে। এ সব শিল্পকারখানায় রয়েছে কয়েক লাখ শ্রমিক। এ সব শ্রমিকের মধ্যে প্রায় ১৫ হাজার শ্রমিক নেশায় জড়িয়ে পড়েছে। এ সব শ্রমিক সবাই বহিরাগত। এরা ছোট ছোট খুপরি ঘরে কিংবা মেস ভাড়া করে ঘিঞ্জি পরিবেশে বসবাস করছে। এ সব খুপরি ঘরে মাদক ব্যবসায়ীরা ফেরি করে নেশা বিক্রি করে বলে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শ্রমিক জানান।
সন্ধ্যার পরপরই মাদক ব্যবসায়ীদের আনাগোনা বেড়ে যায়। বহিরাগত ও ঘনবসতি থাকায় গার্মেন্টস এলাকায় মাদকবিরোধী অভিযান মুখ থুবড়ে পড়েছে।
রূপগঞ্জ থানা সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের প্রথম চার মাসে র্যাব, ডিবি ও থানা পুলিশ ২৫টি মামলা করেছে মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে। আর এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৫ হাজার ২৩৮ পিস ইয়াবা উদ্ধার করে।
রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এফ এম সায়েদ বলেন, মাদকবিরোধী অভিযান নিয়মিত চলে। রূপগঞ্জের অনেক এলাকা দুর্গম। এ সব এলাকায় যেতে অনেক সময় লাগে। এ সুযোগে মাদক ব্যবসায়ীরা পালিয়ে যায়। তা ছাড়া মাদক নিয়ে অভিযান চালাতে গেলে নানা দুর্ঘটনা ঘটে।
মাদকের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণাকারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফয়সাল হক বলেন, রূপগঞ্জে মাদক মাকড়সার মতো ছড়িয়ে গেছে। অভিযান চালিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।#