নারায়ণগঞ্জ  বুধবার | ২রা এপ্রিল, ২০২৫ | ১৯শে চৈত্র, ১৪৩১ বসন্তকাল | ৩রা শাওয়াল, ১৪৪৬

শিরোনাম
  |   আড়াইহাজারে বিএনপির যুবদলের মধ্যে সংঘর্ষ আহত ১০   |   কাশীপুরে যুবককে গুলি করে হত্যা   |   ঈদের দিন বিএনপি অফিসে হামলা, গণমাধ্যম কর্মীকে কুপিয়ে জখম   |   যুগের নারায়ণগঞ্জ ডটকম-এর তৃতীয় বর্ষপূতি উদযাপন   |   আড়াইহাজারে অপরাধ নিয়ন্ত্রনে ওসির জোরালো তৎপরতা    |   বুটবল তারকা হামজা চৌধুরীর পরিবার ঘুরে গেলেন কুতুব উদ্দিন আকসিরের বাড়ি   |   ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে কয়েল কারখানায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির   |   নুরুল ইসলাম স্মৃতি পাঠাগারের গুণীজন সম্মাননা অনুষ্ঠিত   |   সাংবাদিক প্রীতির সহযোগিতায় সৌদি থেকে ফিরল শায়েরার মরদেহ   |   বন্দরের যুবক সাইফুল নিখোঁজ   |   ৫০০ পিছ ইয়াবাসহ সুজন গ্রেপ্তার   |   রাজধানীতে ধর্ষণকারীকে পিটিয়ে হত্যা, পুলিশের ওপর হামলা   |   প্রয়াত বিমান ভট্টাচার্য্যের পরিবারকে না’গঞ্জ প্রেস ক্লাবের পাঁচ লক্ষ টাকা অনুদান প্রদান   |   রোহীঙ্গা সশস্ত্র সংগঠন আরসা প্রধান জুনুনী সহ ১০ জন আটক    |   গণঅভ্যুত্থানে হামলা ২৮৯ ছাত্রলীগ নেতাকর্মী সাময়িক বহিষ্কার   |   ব্রহ্মপুত্র নদে ভেসে উঠলো যুবকের মরদেহ   |   আ’লীগ নেতার মুক্তির দাবীতে থানা ঘেরাও    |   লায়ন রানাকে সমর্থন দিয়ে ভোট চাইলেন অধিকাংশ লায়ন্স ক্লাবের নেতৃবৃন্দ   |   ভয় দেখিয় যুবককে বলাৎকার | মামলার আসামী সাঈদ আটক   |   বন্দর প্রেসক্লাবে ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত 
 প্রচ্ছদ   শীর্ষ খবর   শিক্ষা কারিকুলাম ও শিক্ষা ব্যবস্থা – বিলকিস ঝর্ণা
শিক্ষা কারিকুলাম ও শিক্ষা ব্যবস্থা – বিলকিস ঝর্ণা
  শীর্ষ খবর || নারায়ণগঞ্জেরখবর.কম
প্রকাশিত: সোমবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২৩
লেখকঃ বিলকিস ঝর্না – বর্তমান নতুন কারিকুলাম শিক্ষা কার্যক্রম দেশের সমস্ত অভিভাবকের জন্য এক ভীতিকর অবস্থার সৃষ্টি করেছে। মিডিয়াতে চলছে বিভিন্ন নেতিবাচক কথাবার্তা। বিক্ষোভে ফেটে পড়ছে অভিভাবক মহল। অন্যদিকে আর এক পক্ষ এই নতুন কারিকুলাম শিক্ষা ব্যবস্থাকে সময়োপযোগী প্রমাণ করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। মিডিয়াতে চলছে নিঃশব্দ এক বিপরীতমুখী যুদ্ধ। তবে একথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, বহু আগে থেকেই আমাদের গতানুগতিক শিক্ষা ব্যবস্থা বরাবরই ত্রুটিপূর্ণ।

উপর্যুপরি শিক্ষা কার্যক্রমে ঘনঘন পরিবর্তন হলেও ত্রুটি সংশোধনের উদ্দেশ্য কোনোকালে কোনো সরকারেরই ছিলো না। বরং পূর্বাবস্থার চেয়েও বেশি ত্রুটিপূর্ণ এবং অত্যন্ত নিম্নমানের শিক্ষা কারিকুলামের বোঝা আমাদের সন্তানদের ওপর নির্বিচারে বারবার চাপিয়ে দেয়া হয়েছে এবং হচ্ছে। নিরুপায় ছাত্রছাত্রীরা সেই বোঝা মাথায় নিয়ে পার হচ্ছে শিশু থেকে তরুণ কাল অবধির অগ্নি পরীক্ষার পুলসিরাত। আর এরই ওপর ভিত্তি করে লাভবান হচ্ছে নির্দিষ্ট মহল। প্রথমত, নতুন প্রজেক্ট এনে প্রজেক্টের কার্যকারিতা কতটা ফলপ্রসূ সেইটা পরীক্ষা করার জন্য আমাদের সন্তানদের গিনিপিগের মতো ব্যবহার করা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, বই ব্যবসায়ীরা এবং ব্যবসায়ীদের থেকে বিরাট অংকের কমিশনের লোভের শিকার আমাদের এই নতুন সম্ভাবনাময় জেনারেশন। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত শ্রেণি। কেননা উচ্চবিত্তের জন্য নির্ধারিত ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল ব্রিটিশ কাউন্সিল দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।

আমাদের প্রথম শ্রেণির পাঠ্যবই ঠিক কতদিনের ব্যবধানে বদলেছিলো মনে নেই। তবে ‘মাছের কাঁটা পায়ে ফুটলে দোলায় চেপে যাই’ পড়াটা দুলে দুলে মুখস্থ করতে করতে শীতের বারান্দায় ‘আমার বই’ নামে প্রথম শ্রেণির নতুন বই এসে হাজির। সেই নতুন বইয়ের গন্ধ কারো ভালো লাগেনি বলে শুনেছি। এটা সম্ভবত ১৯৭৮ সালের কথা। আগের বইটা কি দারুণ ছিলো! সেটা পড়ার আনন্দে স্কুলে ভর্তি হতেই দেখি বই পাল্টে ফেলেছে। তেমনি আরও কত পাল্টানোর খেলায় মেতেছে প্রতিটি সরকার। এরশাদ সরকারের সময়ে তত্কালীন শিক্ষামন্ত্রী মজিদ খানের অনৈতিক শিক্ষানীতিও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের চাপে বাতিল করতে বাধ্য হয়েছিলো তত্কালে নবম শ্রেণির বিজ্ঞান বই। পাতা উল্টালেই ‘এসো নিজে করি’। পড়ার মতো কিচ্ছু নেই। সেই আমি একাদশ শ্রেণিতে বিজ্ঞান পড়তে গিয়ে মহাসমুদ্রে হাবুডুবু খাই।

তবে বর্তমান শিক্ষা কারিকুলাম নিয়ে মিডিয়াতে নেতিবাচক সমালোচনায় কর্তৃপক্ষ রীতিমতো কোণঠাসা সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। আর সেই প্রেক্ষিতে ইতিবাচক প্রচারণার জন্য মাঠে নেমেছে কর্তৃপক্ষ। এই প্রসঙ্গে ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড’ কর্তৃক সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তিও দেখা যায় সামাজিক প্রচার মাধ্যমে। সম্প্রীতিসহ ছয় ধরনের মূল্যবোধ জাগ্রতকরণ এবং আত্মবিশ্বাসসহ তিন ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টি । সব মিলিয়ে শিক্ষার্থীরা দশটি গুণ অর্জন করবে। নতুন শিক্ষাক্রমে প্রাক-প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ১০ ধরনের শেখার ক্ষেত্র ঠিক করা হয়েছে। বাকি থাকে মূল্যায়ন প্রক্রিয়া। সেখানেও খুব বেশি পার্থক্য দেখা গেলো না। যতটুকু পরিবর্তন তাতে আহামরি কোনো সমস্যা হবার কথা নয়। কেননা বর্তমান পদ্ধতিতে শুধু দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে হবে এসএসসি পরীক্ষা।

একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে দুইটি পাবলিক পরীক্ষা হবে। প্রতি বর্ষ শেষে বোর্ডের অধীনে এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর দুই পরীক্ষার ফলাফলের সমন্বয়ে এইচএসসির চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হবে। ২০২৩ সাল থেকে পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির পাবলিক পরীক্ষা থাকবে না। সাময়িক পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করা হবে। এছাড়া নতুন শিক্ষাক্রমে এখন থেকে শিক্ষার্থীরা দশম শ্রেণি পর্যন্ত অভিন্ন সিলেবাসে পড়বে । শিক্ষার্থী বিজ্ঞান, মানবিক, বাণিজ্য বিভাগে পড়বে, সেই বিভাজন হবে একাদশ শ্রেণিতে গিয়ে।

এখানে পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির পাবলিক পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। এগুলো আগেও ছিলো না। হুট করে এসবের উদয় হয়েছিলো। যার কোনো প্রয়োজন ছিলো না। অভিভাবক হিসেবে প্রশ্ন রাখতে চাই। এমন অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষার সিদ্ধান্ত কেন চাপিয়ে দেওয়া হলো বাচ্চাদের ওপর? বলে রাখি এই ফাঁকে যে, আমার মতো অনেকেরই আদরের সন্তানটি কিশোর বয়সে পড়ার চাপে কোনোদিন মাঠে বা ছাদে খেলতে যেতে পারেনি। কেননা পিএসসি ও জেএসসি-তে তাকে গোল্ডেন এ+ পেতে হবে।

এখন মূল কথা হচ্ছে— শিক্ষা পদ্ধতি যেমনই হোক। ধরে নিলাম উন্নত বা অত্যন্ত উন্নত শিক্ষা কারিকুলাম প্রণীত হয়েছে। উন্নত বিশ্বের সাথে তাল রেখে শিক্ষা পদ্ধতির রূপরেখা পরিবর্তন করা হয়েছে এবং সেটা গবেষণা করে আমাদের সন্তানদের উপযোগী করে তৈরি করা হয়েছে। তাহলে গত সময়গুলোতে যে অল্প সময়ে বারবার পরিবর্তনশীল গবেষণাহীন অনুন্নত শিক্ষা পদ্ধতিতে আমাদের সন্তানদের শিক্ষা দেওয়া হলো তার দায় কে নেবে। শিক্ষা কাঠামো হঠাত্ পরিবর্তন করে সৃজনশীল করা, পঞ্চম শ্রেণি ও অষ্টম শ্রেণির পাবলিক পরীক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত শিক্ষা ব্যবস্থায় চাপিয়ে দেওয়ার আগে কেন গবেষণা করা হলো না যে, এটা উন্নত ব্যবস্থা নয়। সে সময়গুলোতেও একই সরকার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিলো।

তখনও সিদ্ধান্তগুলো তাদেরই ছিলো। তাহলে তারা কি এযাবত্ পর্যন্ত ভুল কারিকুলামই আমাদের বাচ্চাদের শিক্ষা দীক্ষা দিলো। তবে তার দায় নেবে কে?

মোদ্দা কথা, বারবার এই পরিবর্তনে ছাত্রছাত্রীদের কোনো মেধার বিকাশ তো নয়ই, বরং ছাত্রছাত্রী তথা পুরো অভিভাবক মহল প্রতিনিয়ত তাদের সন্তানদের নিয়ে একটা উত্কণ্ঠার মধ্যে সময় পার করছে। আর ভবিষ্যতেও করবে। কেননা অচিরেই হয়তো কোন দিন আবার তাদের মনে হবে এই শিক্ষা কারিকুলামও সময়োপযোগী নয়। এর আমূল পরিবর্তন দরকার। আমাদের উন্নত বিশ্বের দিকে তাকাতে হবে তো! আগে যেখানে প্রথম শ্রেণি থেকেই শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেওয়া হতো, সেখানে এখন প্রাথমিক স্তরে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা থাকছে না। আবশ্যিক বিষয় ছাড়া অন্য বিষয়গুলোর পরীক্ষা বাদ দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয়ভাবে আগে পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী-পিইসি, জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট-জেএসসি এবং জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট-জেডিসি পরীক্ষা নেওয়া হতো। এসব পরীক্ষা এখন আর নেই।

বাংলাদেশের জন্ম থেকে অনেক শিক্ষা কমিশন গঠিত হয়েছে। প্রতিটি কমিশনের ছিল নিজস্ব লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। সব শিক্ষা ব্যবস্থা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা শহরের রাস্তার মতো। খোঁড়াখুঁড়ি যেন শেষই হয় না।

স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে প্রথম শিক্ষা কমিশন গঠিত হয়েছিল ১৯৭২ সালে, যেটি ড. কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন নামে বেশি পরিচিত। এরপর ১৯৮২ সালে মজিদ খান শিক্ষা কমিশন, ১৯৮৭ সালে মফিজউদ্দীন আহমদ শিক্ষা কমিশন, ১৯৯৭ সালে শামসুল হক শিক্ষা কমিশন, ২০০১ সালে এমএ বারী শিক্ষা কমিশন, ২০০৩ সালে মনিরুজ্জামান শিক্ষা কমিশন এবং সর্বশেষ ২০০৯ সালে কবির চৌধুরী শিক্ষা কমিশন গঠিত হয়।

নতুন কারিকুলামে কোনো পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই। তার পরিবর্তে আছে ধারাবাহিক মূল্যায়নের নামে অ্যাসাইনমেন্ট, উপস্থাপন ও প্রজেক্টনির্ভর মূল্যায়ন পদ্ধতি। শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রজেক্ট ও অ্যাসাইনমেন্টের সংযোজন অবশ্যই প্রশংসনীয় উদ্যোগ। একে বলা হচ্ছে, মুখস্থনির্ভর পরীক্ষা পদ্ধতির জায়গায় একধরনের বৈপ্লবিক চিন্তা। কখন, কোথায় হলো এ বিপ্লবটা? কারা ঘটালেন? তা জানলো না কেউ। শিক্ষা ব্যবস্থা কি এমন না জানার কিছু?

একটা দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা একটা গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। অথচ প্রতিনিয়ত একটা সিস্টেমে থিতু হতে না হতেই চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে নতুন নতুন সিস্টেম, নতুন নতুন বই, নতুন নতুন পরীক্ষা পদ্ধতি।

দেশের অর্ধেক জনসংখ্যা এই শিশু আর তরুণ সমাজকে প্রতিনিয়ত চাপের মুখে রেখে রাষ্ট্র কোন মেধা বিকাশ আর কোন উন্নত শিক্ষার হিসাব নিয়ে বসেছে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের তা বোধগম্য নয়।

রাষ্ট্র তথা কর্তৃপক্ষের কাছে প্রত্যাশা রইলো, নির্দিষ্ট মহলের স্বার্থে আমাদের সন্তানদের আর ভোগান্তি না হোক। সাধারণ মানুষ এই ঘন ঘন পরিবর্তিত শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে এবার নিষ্কৃতি চায়।

লেখক: প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট

গাছ লাগান পরিবেশ বাচাঁন, যোগাযোগ ভাই ভাই নার্সারী মোবাইল – ০১৭১২২৫৬৫৯১

ফেইসবুকে আমরা

এ সম্পর্কিত আরো খবর...

error: Content is protected !!
error: Content is protected !!