শিরোনাম
ফতুল্লায় সোর্সদের নিয়ন্ত্রনে মাদক ও অপরাধ জগত !
নারায়ণগঞ্জের খবর ডেস্কঃ পুলিশকে অপরাধীদের ধরতে গেলে সোর্সের প্রয়োজন হয়। কিন্তু পুলিশকে সহযোগিতার নামে যদি সোর্সরাই নানামুখী অপরাধে জড়িয়ে পড়ে তাহলে সেক্ষেত্রে সাধারন জনগনের ভোগান্তির কোন শেষ থাকেনা। মাদক ও অপরাধ নির্মুলে পুলিশের পাশাপাশি সোর্সদের ভুমিকাও কোন অংশে কম নেই কিন্তু পুলিশের সাথে প্রচুর সখ্যতা থাকার সুবাদে সোর্সরাই এখন ফতুল্লা থানা এলাকাতে বিভিন্নস্থানে গড়ে তুলেছেন বিশাল মাদকের স্পট ও সিন্ডিকেট। এ যেন শর্ষের ভেতরে ভুতের বসবাস ? ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশের সার্বিক সহযোগিতায় কথিত সোর্সদের অনৈতিক কর্মকান্ডগুলো সাধারন মানুষের মাঝে নাভিশ্বাসের কারন হয়ে দাড়িয়েছে। ডিউটিবিহীন কতিপয় পুলিশ সদস্যরা সিএনজি বাহিনীর মাধ্যমে আইনশৃংখলা বাহিনীর উর্দ্ধতন কতৃপক্ষের অনুমতিবিহীন চালাচ্ছে ফতুল্লার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান। অভিযানে পুলিশ কর্মকর্তারা পুলিশ সদস্যদের চাইতে ব্যবহার করছে নিয়োজিত সোর্সদের। সোর্সদের নিকট অবৈধভাবে হ্যান্ডকাপ প্রদান করে ফতুল্লা থানার তালিকাভূক্ত বিভিন্ন অপরাধীদের গ্রেফতারে সক্ষম হলেও অবৈধপন্থায় অর্থের বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে কতিপয় পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
ফলে একদিকে যেমন ক্ষুন্ন হচ্ছে পুলিশের ভাবমূতি সে সাথে ফতুল্লা মডেল থানার বিচক্ষন অফিসার ইনচার্জ মো.নুরে আযম মিয়ার অর্জিত সুনাম বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ফলে অভিযানের নামে সিএনজি বাহিনীর অভিযান বন্ধ করাসহ সোর্সদের দৌরাত্ব বন্ধের জন্য জেলা পুলিশ সুপার এবং ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার জরুরী ভিত্তিতে হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
একাধিক সুত্রে জানা যায় যে,পুলিশকে একটি কাজ দিতে পারলেই শতকরা ২০ ভাগ অর্থ পাওয়া যায় অথ্যাৎ প্রতি লাখে ২০ হাজার টাকা। সম্পুর্ন বিনে পয়সার এ ব্যবসাটি যেন অত্যন্ত আগ্রহের সাথেই লুফে নিচ্ছে সোর্স নামধারী চিহিৃত অপরাধীরা। ফতুল্লা থানাধীন বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বিভিন্ন বয়সী মানুষের সাথে আলাপকালে জানা যায় ব্যতিক্রমধর্মী অনেক কথাবার্তা। মাসদাইর বাজার ও আশপাশে সোর্স নাসির ওরফে কসাই নাসির স্থানীয়দের মাঝে আতংকের একটি নাম। পুলিশের সোর্সের পাশাপাশি মাসদাইর রোকেয়া স্কুলের পাশেই তার মেয়ে সালমা,ছেলে সেলিম ও রাসেলের সমন্বয়ে গড়ে তুলেছেন বিশাল এক মাদকের আখড়া। এদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হলেই বিনা অপরাধে গুনতে হয় প্রচুর টাকা অথ্যাৎ পুলিশ দিয়ে সাধারন প্রতিবাদীকে ধরিয়ে দিয়েই টাকা আয়ের হাতিয়ার বানিয়ে নেয়। কসাই নাসিরগংদের মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করাতেই কসাই নাসির তার নিজস্ব এসআই দিয়ে শায়েস্তা করে। লামাপাড়া শিবু মার্কেট এলাকাবাসীর জন্য আতংকের এক নাম শিবু ওরফে সোর্স শিবু। শিবুর নেতৃত্বে শিবু মার্কেট ও আশপাশের মাদক বিক্রেতাদের না ধরিয়ে দিয়ে সাধারন সেবনকারীকে ধরিয়ে দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে শিবু ও পুলিশের অসাধু সদস্যরা। তাদের অনেকের মতে সোর্সরাই যেন প্রজাতন্ত্রের দেশে নিরীহদেরকে হয়রানী করার জন্য আরেকটি বাহিনী যা কিনা শুধু অসাধু পুলিশরাই নিয়ন্ত্রন করে থাকেন তাদের আর্থিক সুবিধার্থে।
সূত্রে জানা যায়, যেই পুলিশ সোর্স দিয়ে অপরাধ দমন করা হয় সেই পুলিশ সোর্সরাই অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। কার্যত এখন পুলিশ সোর্সরাই চালাচ্ছে ফতুল্লা থানার কার্য্যক্রম। ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ কর্মকর্তারা হয়ে পড়ছেন সোর্স নির্ভরশীল। ফতুল্লা পুলিশের সোর্সদের দৌরাত্ব হয়রানি, চাঁদাবাজি উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে গেছে। এতে থানা পুলিশের ভাবমূর্তি মারাত্মক ক্ষুন্ন হচ্ছে। সোর্সদের দৌরাত্বে থানার কার্যক্রম বেহাল হয়ে পড়েছে। ফতুল্লা থানার সোর্সরাই এখন বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে চাঁদাবাজিতে নেমে পড়েছে। অনেক ক্ষেত্রে তারা নিজেদের পুলিশ সদস্য পরিচয় দেন। আর এ ক্ষেত্রে থানা এলাকার সাধারণ মানুষ তাঁদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে।
মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মাসোয়ারা আদায়,সোর্সদের দাবিকৃত মাসোয়ারা প্রদানে অস্বীকৃতি জানালে পুলিশ দিয়ে গ্রেফতার করানো এমনকি সোর্সদের মধ্যস্থতায় ছাড়ানো থেকে শুরু করে সব ধরনের সিদ্ধান্তই নিচ্ছে সোর্সরা। অনেক ক্ষেত্রে এই সোর্সরাই থানার ওসির ক্যাশিয়ার হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকেন। অনেক সোর্স মামলার আসামিদের পক্ষ নিয়ে পুলিশের নাম পরিচয় ব্যবহার করে বাদীকে হুমকি দেন। মূলত থানা চালাচ্ছেন পুলিশ সোর্সরা এমনটাই অভিযোগ ফতুল্লার বিভিন্ন শ্রেনী পেশার লোকজন।
ফতুল্লা থানা এলাকার যে সকল সোর্সদের দৌরাত্ব বেশি তাদের মধ্যে পারভেজ, জাহাঙ্গীর, রাসেল, ফতুল্লা থানা গেইট এলাকার জুয়ারী জাফর, ভোলাইল এলাকার ওয়াসিম, কাদির, নবীনগরের সাদ্দাম, শাহাদাত, ফাজিঁলপুর এলাকার দস্তোগির, নূরা, আবু, প বটি বস্তি এলাকার আবুল, সাগর, হরিহর পাড়া আমতলা এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী বর্তমানে পুলিশ সোর্স আকাশ, পাপ্পু, শান্তিনগর এলাকার, শান্ত, ভোলাইল এলাকার জলিল, কাদির, ওয়াসিম, সহিদ, মাসদাইর এলাকার দিলীপ, ল্যাংড়া মান্নান ওরফে চরমপন্থী মান্নান, শান্ত, কাইল্যা রিপন,নাসির হোসেন ওরফে কসাই নাসির, পাগলা এলাকার লিয়াকত, আনার, আলমগীর, লিটন, লালখা, সেহাচর, রামারবাগ ও শিবুমার্কেট এলাকার নাসির, লিমন, সাথী, জাহাঙ্গীর,শিবু ,ধর্মগঞ্জ এলাকার আলম, হাসান, জহির, রবিউল, কাশিঁপুর এলাকার মাহাবুব, শাহীন, প বটি এলাকার পাপ্পু, জাহাঙ্গীর, কাইল্যা মাহাবুব, ইব্রাহীম, আবু, বোচা সোহেল, এতিম খানা এলাকার সাদ্দাম, শাহাদাত, খলিল, নাছির, নবীনগর এলাকার সফিক, বক্তাবলী এলাকার আলমগীর, রাসেল, শাহীবাজার এলাকার মাহাবুব, জুয়েল, লিটন। ফতুল্লা ব্যাংক কলোনী এলাকার মামুন অন্যতম। সোর্স মামুন দুই স্ত্রীকে দুইস্থানে রেখে সংসার করলেও স্থানীয় নিরীহ মানুষগুলো নাভিশ^াস করে তুলেছে। ইয়াবা ব্যবসায়ী মানিককে পুলিশ দিয়ে গ্রেফতারের ভয়ভীতি প্রদান করে তার স্ত্রীকে ভাগিয়ে নিয়ে বিয়ে করে সোর্স মানিক। দুই স্ত্রীর একজন শিয়াচর এলাকায় বসবাস করলেও অপর স্ত্রী ধর্মগঞ্জ এলাকায় বসবাস করে। এ স্ত্রীকে দিয়ে হোরোইনের ব্যবসা করান সোর্স মামুন। ১১ এপ্রিল ঈদুল ফিতরের একদিন পর ফতুল্লার সাহারা সিটি মাঠ এলাকায় আবদুল্লাহ নামে এক ব্যক্তিকে আটক করে ফতুল্লা মডেল থানার একজন সহকারী উপপরিদর্শকের কথা বলে সাড়ে ৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় সোর্স মামুন। শুধুমাত্র পুলিশের ভয় দেখানোর কারনে উক্ত ভুক্তভোগী আবদুল্লাহ কোন পুলিশী ঝামেলায় যেতে রাজি হয়নি। বর্তমানে সোর্স মামুনের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে ফতুল্লা রেলষ্টেশন,সাজাহান রোলিং মিল,পাইলট স্কুলসহ আশপাশের সাধারন মানুষ।
আবার এ সকল সোর্সরাই ফতুল্লার বিভিন্ন মাদক স্পট,ঝুট সন্ত্রাস,তালিকাভূক্ত সন্ত্রাসীসহ বিভিন্ন অপরাধীদের হয়ে কাজ করে থাকে। সন্ত্রাসীদের তথ্য অনুয়ারী আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের মিস গাইডের মাধ্যমে সাধারন মানুষকে হয়রানী করা থেকে শুরু করে নানা ভাবে বø্যাক মেইলিং করে আসছে দীর্ঘদীন ধরে। এরা কখন থানা পুলিশের আবার কখনও গোয়েন্দা পুলিশের পক্ষ হয়ে কাজ করে সাধারন মানুষকে নাজেহাল করছে। এমনকি ফতুল্লা মডেল থানার কতিপয় পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্ধারকৃত মাদকদ্রব্য বিক্রি করে আসছে বলেও উঠেছে অভিযোগ।
ফতুল্লাবাসী মনে করেন, পুলিশ সোর্সদের বিতর্কিত কর্মকান্ডে পুলিশের ভাবমূতি ক্ষুন্ন হচ্ছে তেমনী এর জন্য দায়ী পুলিশ সদস্যরাই। তাই বিতর্কিত উল্লেখিত সোর্সদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জেলা পুলিশ সুপারের জরুরী ভিত্তিতে হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। #