ডায়াবেটিস থেক বাঁচার জন্য এ সম্পর্কে জানতে হবে | নিয়ম ও সচেতনতাই রক্ষাকবজ
ডা . মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ-নারায়ণগঞ্জের খবর ডেস্কঃ বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে ডায়াবেটিস দিবস । এবারের প্রতিপাদ্য ‘ শিক্ষাই পারবে ভবিষ্যৎ বাঁচাতে। মানে ডায়াবেটিক নিয়ে যত বেশি জানাশোনা বাড়বে , ততই নিরাপদ হবে ভবিষ্যৎ। ১৯৯১ সালে বিশ্ব ডায়াবেটিক ফেডারেশন ও বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা দিনটিকে ডায়াবেটিস দিবস ঘোষণা দেয় । গত দশকের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে ডায়াবেটিক রোগী । বাড়ছে স্থূলতা , অন্ধত্ব , হার্ট ডিজিজ ও কিডনি রোগ । মানুষ ১৪ নভেম্বর ফ্রেডরিক ব্যান্টিং জন্মগ্রহণ করেন । তিনি সহযোগী চার্লস বেল্টকে সঙ্গে নিয়ে অধ্যাপক ম্যাকয়িডের গবেষণাগারে ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণের মহৌষধ ইনসুলিন আবিষ্কার করেন । তাই এদিন দিবসটি পালন করা হয় । উদ্দেশ্য হচ্ছে ডায়াবেটিস রোগের লক্ষণ , চিকিৎসা ও নিয়ন্ত্রণ রাখার ব্যবস্থা সম্পর্কে গণসচেতনতা বাড়ানো । বিশ্বের প্রায় ৪৬ কোটি ৩০ লাখ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত । এর মধ্যে ৭৯ শতাংশেরই নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশে বসবাস । বছরে এই রোগে প্রায় এক লাখ লোক মারা যাচ্ছে ১৪ নভেম্বর দৈনিক কালবেলা প্রকাশিত সংবাদটি পঠকদের জন্য হুবহুব তুলে ধরা হলো। অন্যদিকে , আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিক ফেডারেশনের ( আইডিএফ ) তথ্য অনুযায়ী , বাংলাদেশে এখন ৮৪ লাখ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত । প্রতিবছর লক্ষাধিক মানুষ ডায়াবেটিস – সংক্রান্ত জটিলতায় মারা যাচ্ছেন । এবারের প্রতিপাদ্যে নারীদের ডায়াবেটিসের ওপর বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে । চিকিৎসকদের মতে , নগরায়ণ ও পরিবর্তিত জীবনধারণের কারণে গর্ভকালীন ডায়াবেটিক রোগীও বাড়ছে । বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে , গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত নারীদের অর্ধেকেরও বেশি পরে টাইপ -২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন । অপরিকল্পিত গর্ভধারণের কারণে শিশু অপুষ্টির শিকার হয় এবং তার ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে । শরীরে শক্তির জোগানদাতা কার্বোহাইড্রেট । জটিল বিক্রিয়া শেষে এটা শরীরের কোষে গ্রহণ উপযোগী সরল অণুতে পরিণত হয় । এই অণুই হচ্ছে গ্লুকোজ । এই গ্লুকোজ অণুকে শরীরের কোষ গ্রহণ করে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে শক্তি উৎপাদন করে । কিন্তু কোষে গ্লুকোজ প্রবেশ করতে একটি হরমোন লাগে । ওটাই হলো ইনসুলিন । দেহের কোষে এক ধরনের চ্যানেল থাকে , যেটা দিয়ে গ্লুকোজ শরীরে প্রবেশ করে । রক্তে অফুরন্ত গ্লুকোজের জোগান রয়েছে । কিন্তু ডায়াবেটিস থাকলে ইনসুলিনের অভাবে কোষগুলো থেকে যায় অভুক্ত । এ সময় রক্তে গ্লুকোজ বেড়ে গেলে প্রস্রাবের সময় ও ঘনত্ব বাড়ে । সামগ্রিক অবস্থাটিকে বলে ডায়াবেটিস মেলাইটাস । মানুষের রক্তে অভুক্ত অবস্থায় প্রতি লিটারে ৫.৬ থেকে ৬.১ মিলি মোল গ্লুকোজ থাকে । খাবার গ্রহণের দুই ঘণ্টা পরে এটা বেড়ে যায় । সুস্থ জেনেটিক কারণেও ডায়াবেটিস হতে পারে । অটিজম বা ক্লাইনফেল্টার সিন্ড্রোমে আক্রান্তদেরও এতে ভোগার আশঙ্কা বেশি । পাশাপাশি অগ্ন্যাশয়ের সমস্যার কারণে ডায়াবেটিস হতে পারে । আবার কারও হরমোন সমস্যা , কুশিং সিন্ড্রোম বাএক্রোমৃেগাল , যা থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হরমোনের কারণে হয়ে থাকে , এদেরও ডায়াবেটিকের ওপর প্রভাব আছে । গ্লুকোকটিকয়েড , থায়াজাইড কিংবা ফেনাইটইন জাতীয় ওষুধগুলোর কারণেও ডায়াবেটিস হতে পারে ।
লক্ষণ
যে সমস্যায় সবচেয়ে বেশি ভোগেন তা হলো বারবার প্রস্রাব । এতে শরীরে তরল কমে যায় এবং ঘন ঘন তৃষ্ণা পায় । আবার দেহে ‘ কোষীয় অনাহার ’ সৃষ্টি হয় । ফলে দেহ মস্তিষ্ককে ক্ষুধা লেগেছে বলে মেসেজ দেয় । এজন্য ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের ক্ষুধা লেগেই থাকে । প্রচুর খাওয়া সত্ত্বেও ওজন কমে যায় । ক্লান্তি ঘিরে রাখে ।
পরামর্শ
চিনি ও মিষ্টি জাতীয় খাবার বাদ দিতে হবে । ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে । অল্প অল্প করে বেশিবার খেতে হবে । ধূমপান বাদ দিতে হবে । কারণ , এটি ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স তৈরি করে । প্রতিদিন ৩০ মিনিট ব্যায়াম করতেই হবে । কোলেস্টেরল পরীক্ষা করাতে হবে নিয়মমতো । আঁশযুক্ত খাবার বেশি খেতে হবে । ইনসুলিন বা অন্য ওষুধ নিয়মিত গ্রহণ করলে খাবারও নিয়মিত খেতে হবে । #