শিরোনাম
হাড় ক্ষয় রোগে এখন কমবয়সীরাও আক্রান্ত হচ্ছে | জানুন কারন ও প্রতিকার
নারায়ণগঞ্জের খবর ডেস্কঃ নীরব ঘাতক হাড় ক্ষয় অস্টিওপোরোসিস বা হাড়ক্ষয় মানে হাড়ের ঘনত্ব কমে যাওয়া । এ রোগে হাড়গুলো ঘুণে খাওয়া কাঠের মতো হয়ে যায় । ফলে ভেঙে যেতে পারে সামান্য আঘাতেই । বয়স্কদের বেশি হলেও এখন কমবয়সীদেরও অস্টিওপোরোসিসে আক্রান্ত হতে দেখা যাচ্ছে ।
লেখক : প্রতিষ্ঠাতা , জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি ডা.মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ
কেন হয়ঃ-
আমাদের দেহের হাড় সাধারণত ২৮ বছর বয়স পর্যন্ত ঘনত্বে বাড়তে থাকে । এবং ৩৪ বছর পর্যন্ত সঠিক ঘনত্ব অটুট থাকে । এরপর থেকে হাড় ক্ষয় হতে শুরু হয় । বয়সের সঙ্গে সঙ্গে হাড়ক্ষয়ের ঝুঁকিও বাড়তে থাকে । পুরুষের তুলনায় নারীদের হাড় ক্ষয়ের প্রবণতা বেশি থাকে । বিশেষ করে মেনোপজ বা মাসিক বন্ধ হওয়ার পর ইস্ট্রোজেনের ঘাটতি দেখা দেয় । এতে মেয়েদের হাড় দ্রুত ক্ষয় হতে শুরু করে । স্বাভাবিক এ বিষয়গুলো ছাড়াও আরও কিছু কারণে কম বয়সে অস্টিওপোরোসিস হতে পারে ।
● সেগুলো হচ্ছেঃ-
● পর্যাপ্ত পরিমাণ শারীরিক পরিশ্রম না করলে এবং শরীরে প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি – এর ঘাটতি হলে হাড় নাজুক হতে থাকে ।
● শরীরের ওজন উচ্চতার সঙ্গে মানানসই না হলে অর্থাৎ ওবেসিটি থাকলে । • অতিরিক্ত ধূমপান বা মদ্যপান করলে কম বয়সে হাড় ক্ষয় শুরু হতে থাকে ।
● প্রয়োজনের অতিরিক্ত আমিষ নিয়মিত গ্রহণ করতে থাকলে এবং বেশি চিনি , অতিরিক্ত চা / কফি / চকলেট ও কোমল পানীয় গ্রহণের মতো অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস অতিরিক্ত অস্টিওপোরোসিসের অন্যতম কারণ ।
● দীর্ঘদিন স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ সেবন । বিভিন্ন হরমোনজনিত রোগ যেমন হাইপারথাইরয়িডিজম , হাইপারপ্যারাথাইরয়ডিজম , কিডনির অসুখ , ডায়াবেটিস , অ্যাডিসন রোগ , রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস থাকলে ।
● ক্রনিক লক্ষণ পিঠের দিকে অল্পস্বল্প ব্যথা দিয়ে অসুখের সূত্রপাত হলেও বেশিরভাগ মানুষ অবহেলা করেন । যখন বেশি ব্যথা হয় , তখন বুঝতে হবে হাড়ের ক্ষয় অনেক বেড়ে গেছে ।
প্রতিকারঃ-
● কম বয়স থেকেই সুস্থ জীবনযাপন মেনে চললে অস্টিওপোরোসিস ঠেকানো সম্ভব । রোগ যদি শুরু হয়েই যায় সে ক্ষেত্রে শুরুতে নির্ণয় করা গেলেও নিয়ম মেনে বিপদ কাটানো যায় ।
● বয়স ৩৫ হলেই বিএমডি অর্থাৎ বোন মিনারেল ডেনসিটি টেস্ট করে হাড়ের অবস্থা জেনে নিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে ।
● প্রতিদিনের খাবারে পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম , পটাশিয়ামসহ অন্যান্য খনিজের অভাব হলে হাড় নরম হয়ে যায় । ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার দুধ , দই , ছানার যে কোনো একটি রাখুন প্রতিদিনের খাবারে । সবচেয়ে ভালো ফল পেতে সকালে এক বাটি দই এবং রাতে শোবার আগে এক গ্লাস কুসুম গরম দুধ পান করুন ।
● দুধে অ্যালার্জি থাকলে সয়াদুধ , টোফু , মাশরুম , সবুজ শাকসবজি ও বাদাম খেতে হবে নিয়মিত । মাছ , মুরগি , ডিম থেকেও প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়াম পাওয়া যায় ।
● ক্যালসিয়াম শোষণের জন্য শরীরের প্রয়োজন হয় ডিটামিন ডি । ভিটামিন ডি এর সবচেয়ে কার্যকর উৎস হচ্ছে সূর্যের আলো । খাবার থেকে প্রয়োজনীয় ভিটামিন ডি পাওয়া সম্ভব নয় । তাই প্রতিদিন ১৫ থেকে ৩০ মিনিট সূর্যের আলোতে থাকুন । পাশাপাশি সামুদ্রিক মাছ , কড লিভার অয়েল খান ।
● প্রতিদিন অন্তত আধাঘণ্টা ব্যায়াম করতে হবে । হাঁটা , দৌড়ানো ও সিঁড়ি বেয়ে ওঠানামা করা ভালো ব্যায়াম । এতে শরীরের নিচের অংশের হাড় মজবুত হবে ।
● ডায়াবেটিস , লিভার , কিডনি রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখুন । ধূমপান ও মদপান ত্যাগ করুন । অতিরিক্ত ওজন থাকলে সাবধানে চলাফেরা করুন এবং যথাসম্ভব ওজন কমাতে চেষ্টা করুন । অতিরিক্ত চিনি , লবণ , চা – কফি গ্রহণ করা যাবে না । প্রিজারভেটিভ দেওয়া খাবার যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন ।
লেখক : ডা.মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ
প্রতিষ্ঠাতা , জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি