রং লাগিয়ে রক্ত বলে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে মুরগি ও গরুর ডামিস্টিক | জনস্বাস্থ্য হুমকিতে
নিজাম উদ্দিন – রূপগঞ্জ প্রতিবেদকঃ রূপগঞ্জে খোলা বাজারে প্রকাশ্যে অবাধে বিক্রি করা হচ্ছে মুরগি ও গরুর ডামিস্টিক (মুরগির মাংস ছাড়ানো হাড়গোর ও মাথা, গিলা, কলিজা, পা সহ ইত্যাদি ও চামড়ার ছাটি, ফ্যাফসা)। এসব মুরগির ডামিস্টিক মুখরোচক খাবার তৈরিতে কাঁচামাল হিসেবে ব্যাবহার করা হচ্ছে। এ ছাড়াও গরুর ডামিস্টিক (চামড়ার ছাটি, ফ্যাফসা) রং লাগিয়ে রক্ত বলে নিউ রেডিসন রেস্টুরেন্টের সামনে বিক্রি করা হচ্ছে।প্রশাসনের নাকের ডগায় মানুষের জন্য ক্ষতিকর খাবার বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে অবাধে। অথচ এর ক্ষতিকর দিকগুলো না জেনেই মুরগির ডামিস্টিক কিনে খাচ্ছে সাধারন মানুষ, এমনকি এই খাবারই মানুষের দেহে রোগের বাসা বেঁধে মৃত্যুর কারণও ঘটাতে পারে। অন্যদিকে অর্ধেকের বেশি লাভে বিক্রি করে রাতারাতি অধিক মুনাফা গুনছেন একদল প্রতারক।বুধবার (০৪ জানুয়ারী) উপজেলার ভুলতা গাউছিয়া এলাকায় আব্দুল হক সুপার মার্কেট ও নিউ রেডিসন রেস্টুরেন্টের সামনে এসব চাঞ্চল্যকার তথ্য পাওয়া যায়। আব্দুল হক সুপার মার্কেটের সামনে ফুটপাতে মর্তুজাবাদ এলাকার বাবু ও তার সেলসম্যান দুলালকে মুরগির ডামিস্টিক তথা কলিজা, মাথা, পাখনা, পা, এবং মাংস ছাড়ানো খাঁচার অংশ অবাধে বিক্রি করতে দেখা গেছে। এসব প্রতারক ব্যবসায়ীরা প্রায় অর্ধেকের বেশি লাভে বিক্রি করে থাকে মুরগির ডামিস্টিক। ওদিকে গোলাকান্দাইল এলাকার গরুর ডামিস্টিক বিক্রেতা দুলু প্রতিদিন এসকল অস্বাস্থ্যকর খাবার প্রকাশ্যে বিক্রি করে আসছে। কতৃপক্ষের সামনে জনস্বাস্থ্যের হুমকীর সম্মুখীন হলেও যেন দেখার কেউ নেই।অনুসন্ধানে জানা গেল, এগুলো আসে ভুলতা এলাকার কয়েকটি বড় হোটেল থেকে জনৈক বাবু নামে এক ব্যবসায়ী উক্ত হীন ব্যবসার মূল হোতা। তিনি বলেন, আমি গিলা কলিজা কিনে থাকি কাজী ফার্ম থেকে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এসব মুরগীর ফেলে দেয়া অংশ আসে শহরের নামিদামি চাইনিজ রেস্টুরেন্ট ও স্থানীয় কয়েকটি বড় হোটেল থেকে। এক চাইনিজ রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার বলেন, চাইনিজ রেস্টুরেন্টগুলোতে স্যুপ তৈরিতে কক ও বয়লার মুরগির শুধু মাংস ছাড়িয়ে তা কিমা করে কর্ণ স্যুপ তৈরি করি। আর মাংস ঝুড়ি ঝুড়ি করে থাই সুপ বানানো হয়। পরবর্তীতে মুরগির সেই অবশিষ্ট অর্থাৎ খাঁচার অংশটিসহ মুরগির গিলা-কলিজা, গলা, মাথা, পা সহ ইত্যাদি একত্রে ৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি করি। মুরগির রোস্ট তৈরিতে রান ও মূল অংশ ব্যতীত বাকী সব অর্থাৎ গিল-কলিজা, মাথা, পা সহ ইত্যাদি সব বিক্রি করে দেয়া হয়।তবে সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর ব্যাপার হল, প্রতিদিনের এসব মাল প্রতিদিন বিক্রি হয়না। ৪-৭ দিন কিংবা তার বেশি দিনের জমানো আগের মাল বিক্রি করা হয় একসঙ্গে। কারণ প্রতিদিন এত মাল জমা হয়না। তাছাড়া প্রতিদিন এসব বিক্রি করলে এটাকে একটা বাড়তি ঝামেলা মনে করেন ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েই। তাই ৪-৭ দিনের মাল জমিয়ে এক সঙ্গে বিক্রি করা হয়। জানা যায়, বাবু নামের উক্ত প্রতারক ব্যবসায়ী গোডাউন হিসাবে আব্দুল হক সুপার মার্কেটের নিচ তলায় মসজিদের পশ্চিম পাশের একটি দোকান ভাড়া নিয়েছে। সেখানেই এই পচাঁ গন্ধযুক্ত মুরগীর ডামিস্টিকগুলো সে জমিয়ে রাখে। ওখান থেকে প্রতিদিন এই পঁচা ও গন্ধযুক্ত মাল নিয়ে প্রকাশ্যেই বিক্রি করছেন এসব মুরগীর ডামিষ্টিক। চাইনিজ রেস্টুরেন্টে তাদের ভাষায় মুরগির মাংস ছাড়ানো অংশগুলোসহ মাথা, গিলা-কলিজা, পা সহ এসব পণ্যকে ডামিস্টিক বলা হয়।অথচ আব্দুর হক সুপার মার্কেটের সামনের মাছ বাজারের মুখেই এই ডামিস্টিক বিক্রির দোকনগুলো বসিয়ে এরা চড়া দামে বিক্রি করছে। তবে পণ্যের বিভিন্ন আকার প্রকার ভেদে দাম একটু বেশি কম হয়ে থাকে। মুরগির গলা, গিলা-কলিজা মিলিয়ে১১০-১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে মুরগির মাংস ছাড়ানো শুধু খাঁচা ১২০-১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর মাথা, পা, গিলা- কলিজা ১শ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। ওদিকে গরুর ছাটি বিক্রি করা হচ্ছে ৩০০ টাকা দামে।যেখানে চিকিৎসকরা বলে থাকেন, কাঁচা মাংস জাতীয় খাবার ২৪ ঘন্টার বেশি হলে তা খাওয়া ঠিক নয়। কারণ তাতে নানা রকমের ব্যাকটেরিয়ার জন্ম নেয় এবং তা থেকে নানা রকমের মারাত্মক রোগ হতে পারে।অন্যদিকে মুরগি ও গরুর ডামিস্টিক মালগুলো সব একত্রে রাখায় রক্ত ও পানি থাকার কারণে একটির ব্যাকটেরিয়া অন্যটিতে প্রবেশ সহ পচন ধরতে পারে সহজেই। তবে ফ্রিজ কিংবা হিমাগারে রাখার কারণে দুর্ঘন্ধ ছড়ায় না আর কোন রকমের অস্বাভাবিক অবস্থা বোঝা যায় না। যে কারণে সাধারণ মানুষ এর ক্ষতিকর দিকটা বুঝতেই পারেনা। তবে এসব পণ্য খেলে ক্যান্সারসহ মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হতে পারে বলে মনে করেন চিকিৎসকরা। #