শিরোনাম
ধরণীর দুঃখ – দুর্দশা বধে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব ঘটেছিল – তারাপদ আচাৰ্য্য
তারাপদ আচাৰ্য্য : শ্রীকৃষ্ণ পৃথিবীকে কলুষ মুক্ত করতে জরাসন্ধ ও শিশুপালসহ বিভিন্ন অত্যাচারিত কংস , রাজাদেও ধ্বংস করেন এবং ধর্মরাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন । দ্বাপরের যুগের সন্ধিক্ষণে রোহনী নক্ষত্রের অষ্টমী তিথিতে শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব ঘটেছিল এই মাটির ধরাধামে । ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অপ্রাকৃত লীলাকে কেন্দ্র করেই জন্মাষ্টমী উৎসব । ওই সময় অসুররূপী
জন্মতিথি নিয়ে কংসের কারাগারে ফিরে এলেন । নিঃশব্দে ন্যাটিকে রাখলেন । তিনি নিজেকে নিজে শৃংখলিত তে না পারে যে ইতিমধ্যে অনেক কিছু ঘটে গেছে রাজশক্তির দাপটে পৃথিবী হয়ে ওঠে ম্রিয়মাণ , ধর্ম ও ধার্মিকেরা অসহায় সংকটাপন্ন অবস্থায় নিক্ষিপ্ত হন ।
অসহায় বসুমতি পরিত্রাণের জন্য প্রজাপতি ব্রহ্মার শরণাপন্ন হন । ব্রহ্মার পরামর্শে দেবতারা সবাই মিলে যান দেবাদিদেব মহাদেবের কাছে পরিত্রাণের উপায় খুঁজে বের করতে । সৃষ্টি , স্থিতি ও প্রলয়ের যুগসন্ধিক্ষণে তারা সকলে বিষ্ণুর বন্দনা করেন । স্বয়ং ব্রহ্মা মগ্ন হন কঠোর তপস্যায় । ধরণীর দুঃখ – দুর্দশায় ব্যথিত হয়ে দেবতাদের শ্রীকৃষ্ণের জন্মতিথি ডাকে সাড়া দিয়ে তিনি দেবতাদের অভয়বাণী শোনান এই বলে যে , তিনি অচিরেই মানবরূপে ধরাধামে অবতীর্ণ হবেন দেবকীর অষ্টম গর্ভের সন্তানরূপে শঙ্খ , চক্র , গদাপদ্মধারী শ্রীকৃষ্ণ নামে । ভগবান বিষ্ণু দেবতাদেও নির্দেশ দিলেন এই ধরাধামে তার লীলার সহচর হওয়ার প্রয়োজনে এই ধরণীতে জন্ম নেয়ার জন্য ।
ভগবান বিষ্ণুর নির্দেশমতো দেবতারা তাদের স্ব স্ব পত্নীসহ ভগবানের কাঙ্ক্ষিত কর্মে সহায়তা করার উদ্দেশ্যে যদুকুলে বিভিন্ন পরিবারে জন্ম নিতে থাকেন । এভাবে ভগবানের সন্তুষ্টি বিধানের জন্য দেবতাদের মর্তলোকে অবতরণ । বসুদের দেখলেন , শিশুটির চারহাতে শঙ্খ , চক্র , গদা এবং পদ্ম ধারণ করে আছেন ।
নানা রকম মহামূল্য মনি – রত্ন খচিত সমস্ত অলংকার তাঁর দেহে শোভা পাচ্ছে । তিনি বুঝতে পারলেন জগতের মঙ্গলার্থে পূর্ণব্রহ্ম নারায়ণই জন্মগ্রহণ করেছেন তাদের ঘরে । বসুদেব করজোড়ে প্রণাম করে তাঁর বন্দনা শুরু করলেন । বসুদেবের বন্দনার পর দেবকী প্রার্থনা শুরু করলেন এবং প্রার্থনা শেষে একজন সাধারণ শিশুর রূপ ধারণ করতে বললেন শ্রীকৃষ্ণকে । একজন সাধারণ শিশুর রূপ ধারণ করে শ্রীকৃষ্ণ বললেন , “ আমি জানি , আপনারা আমাকে নিয়ে অত্যন্ত শঙ্কিত এবং কংসের ভয়ে ভীত । তাই আমাকে এখান থেকে গোকুলে নিয়ে চলুন । সেখানে নন্দ এবং যশোদার ঘরে একটি কন্যাসন্তান জন্মগ্রহণ করেছে । আমাকে ওখানে রেখে তাকে এখানে নিয়ে আসুন । ” শ্রীকৃষ্ণের কথা শুনে বসুদেব সূতিকাগার থেকে শ্রীকৃষ্ণকে নিয়ে যাবার জন্য প্রস্তুত হলেন । গোকুলে নন্দ এবং যশোদার সন্তানরূপে যিনি জন্মগ্রহণ করেছেন তিনি হলেন ভগবানের অন্তরঙ্গ শক্তি যোগমায়া । যোগমায়ার প্রভাবে কংসের প্রাসাদে প্রহরীরা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ল । কারাগারের দরজা আপনা আপনি খুলে গেল । সে রাত ছিল ঘোর অন্ধকার । কিন্তু যখন বসুদেব তার শিশু সন্তানকে কোলে নিয়ে বাইরে এলেন তখন সবকিছু দিনের আলোর মত দেখতে পেলেন । আর ঠিক সেই সময় গভীর বজ্রনিনাদের সঙ্গে সঙ্গে প্রবল বর্ষণ হতে শুরু হল । বসুদেব যখন শ্রীকৃষ্ণকে নিয়ে বৃষ্টির মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন তখন ভগবান শেষসর্পরূপ ধারণ করে বসুদেবের মাথার উপরে ফণা বিস্তার করলেন ।
বসুদেব যমুনা তীরে এসে দেখলেন যমুনার জল প্রচণ্ড গর্জন করতে করতে ছুটে চলেছে । কিন্তু এই ভয়ংকর রূপ সত্ত্বেও যমুনা বসুদেবকে যাবার পথ করে দিলেন । এভাবে বসুদেব যমুনা পার হয়ে অপর পাড়ে গোকুলে নন্দ মহারাজের ঘরে গিয়ে উপস্থিত হলেন । সেখানে তিনি দেখলেন সমস্ত গোপগোপীরা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে আছে । সেই সুযোগে তিনি নিঃশব্দে যশোদার ঘরে প্রবেশ করে শ্রীকৃষ্ণকে সেখানে রেখে যশোদার সদ্যজাত শিশুকন্যাকে নিয়ে কংসের কারাগারে ফিরে এলেন । নিঃশব্দে দেবকীর কোলে শিশুকন্যাটিকে রাখলেন । তিনি নিজেকে নিজে শৃংখলিত করলেন যাতে কংস বুঝতে না পারে যে ইতিমধ্যে অনেক কিছু ঘটে গেছে । সনাতনী সমাজে শ্রীকৃষ্ণের শ্রেষ্ঠ অবদান শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা । ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বাল্যলীলায় পুতনাবধ , দাম বন্ধন লীলা , কালীয়দমন , গোবর্ধন ধারণ প্রভৃতি কার্যের মধ্যে তাঁর অলৌকিক শক্তির পরিচয় মেলে । এ ছাড়া মুষ্টিক ও চানুর নামক দুই মল্ল যোদ্ধার নিধন , কংস বধ , অকাসুর বধ , শিশু পাল বধ প্রভৃতি ঘটনার মধ্য দিয়ে শ্রীকৃষ্ণের ঐশ্বরিক শক্তির প্রকাশ লক্ষ করা গেছে । তবে কুরুক্ষেত্রে সমরাঙ্গণে যুদ্ধবিমুখ হতোদ্যম অর্জুনকে তিনি যুদ্ধকর্মে উদ্বুদ্ধ করার জন্য ভগবান বলে পরিচয় দিয়েছেন । সনাতনী সম্প্রদায়ের অমূল্য সম্পদ মহাভারত , গীতা , ভাগধসঢ় ; বত ও বৈষ্ণবীয় পুরাণসমূহে শ্রীকৃষ্ণের ঈশ্বরত্ব সুপ্রতিষ্ঠিত এবং ভক্তদের নিবিড় সাধনার পরম পুরুষোত্তম হিসেবে তিনি পূজিত ।
লেখক – তারাপদ আচার্য্য সাধারণ সম্পাদক , সাধু নাগ মহাশয় আশ্রম দেওভোগ নারায়ণগঞ্জ । #