কেঁচো সারে নুরুলের আয় মাসে ১০ হাজার টাকা
রাসায়নিক সারের ব্যবহার বাড়ায় প্রতিদিনই কমে যাচ্ছে কৃষি জমির উর্বরতা। আর তাই জমির উর্বরতা বাড়াতে এবং অধিক ফলনের লক্ষ্যে ভার্মি কম্পোস্ট (কেঁচো সার) উৎপাদন করে সাড়া ফেলেছে সিরাজগঞ্জের কৃষক নুরুল ইসলাম। বর্তমানে নুরুলের ২০টি রিংয়ে উৎপাদন হচ্ছে ৯০০ কেজি সার। আর এই সার তৈরি ও বিক্রি করে মাসে ১০ হাজার টাকা আয় করছেন তিনি। তার এই সাফল্য দেখে অনেকেই কেঁচো সার তৈরীর জন্য পরামর্শ নিচ্ছেন।নুরুলের বাড়ি সদর উপজেলার সয়দাবাদ ইউনিয়নের সদানন্দপুর গ্রামে।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ও ভার্মি কম্পোস্টের বিষয়ে নুরুলের কোনো ধারণা ছিল না। পরে তিনি রাজশাহী বিভাগীয় কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করেন। এরপর ভার্মিকম্পোস্ট উৎপাদন শুরু করেন নুরুল। ২০২০-২১ অর্থবছরে আরডিএডিপি প্রকল্পের আওতায় ভার্মিকম্পোস্ট তৈরি প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রদর্শনীর মাধ্যমে প্রথমে ১০টি রিংয়ে কম্পোস্ট সারউৎপাদন শুরু করেন এই কৃষক। প্রদর্শনী থেকে উৎপাদিত সার জমিতে ব্যবহার করে অসাধারণ সাফল্য পান তিনি। এরপর নুরুল ইসলাম বাণিজ্যিকভাবে সার উৎপাদনে আগ্রহী হয়ে উঠেন।কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কৃষি সম্প্রসারণের পরামর্শ ও সহযোগিতায় ১০টি রিং স্থাপন করে কেঁচো সারের সাফল্য পেয়েছেন নুরুল ইসলাম। বর্তমানে ২০টি রিংয়ে ভার্মিকম্পোস্টে উৎপাদন করছেন কেঁচো সার।স্থানীয় কৃষক আওয়াল শেখ, শুক্কুর আলী, মজিবর শেখের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ‘বাপ-চাচারা যেভাবে আগে জমি চাষ করতেন সেভাবে এখন চাষ করা সম্ভব হয় না। এখন সার ব্যবহার ও চাষ পদ্ধতিতে অনেক পরিবর্তন এসেছে। এমনকি কয়েক বছর আগেও ফসল উৎপাদনে যতোটা সার প্রয়োজন হতো, এখন তার চেয়ে বেশি সার লাগছে। নতুন নতুন রোগের উপসর্গ দেখা দিচ্ছে। আর ফলনও সন্তোষজনক নয়। সব মিলিয়ে বলতে গেলে বর্তমানে খরচ বেড়েছে। কেঁচো কম্পোস্ট একটি জৈব সার যা জমির উর্বরতা বাড়াতে ব্যবহার করা হয়। জৈব সার ব্যবহার করেও অধিক ফলন পাওয়া সম্ভব হচ্ছে।সংশ্লিষ্টরা জানান, আমরা এখন যেসব খাবার খাচ্ছি সেসব খাবার উৎপাদনে অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহৃত হচ্ছে। অজান্তেই এসব রাসায়নিক শরীরে ঢুকে যাচ্ছে। তার প্রভাবে শরীরের বিভিন্ন রোগ বাসা বাধছে। এই সমস্যার সহজ সমাধান জৈব পদ্ধতিতে কৃষিকাজ। জৈব পদ্ধতিতে কেঁচো সারের ব্যবহার বাড়ানো গেলে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকমুক্ত পরিবেশবান্ধব কৃষি ব্যবস্থা গড়ে উঠতে পারে। এতে চাষের খরচের পাশাপাশি স্বাস্থ্য ঝুঁকিও কমে আসবে।কৃষক নুরুল ইসলাম বলেন, ‘নিজস্ব গরুর খামার থেকে পাওয়া গোবর ও কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় কেঁচো দিয়ে শুরু করি ভার্মি কম্পোস্টের বাণিজ্যিক উৎপাদন। প্রতি মাসে উৎপাদিত হচ্ছে প্রায় ৯০০ কেজি সার। প্রায় ২০০ কেজি নিজে ব্যবহার করার পর বাকি প্রায় ৭০০ কেজি অন্য কৃষক ও শহরের ছাদ বাগানিদের কাছে বিক্রি করি। প্রতি মাসে ভার্মি কম্পোস্ট (কেঁচো সার) ৭০০ কেজি বিক্রি বাবদ আয় হয় ১০ হাজার টাকা। পাশাপাশি ২/৩ হাজার টাকার কেঁচোও বিক্রি করি।’ সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রোস্তম আলী বলেন, ‘কৃষক নুরুলের উৎপাদিত কেঁচো সার ইতোমধ্যেই কৃষক ও ছাদ বাগানিদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। তারা প্রতিদিনই নুরুলের কাছ থেকে এই সার কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। তার দেখাদেখি এখন অনেকেই কেঁচো সার উৎপাদনে আগ্রহী হচ্ছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘কেঁচো সার উৎপাদনে কৃষি বিভাগ থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে কৃষকদের।’