শ্যামা মা অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন স্বর্গীয় রণবীর রায় চৌধুরীর জীবনেও
নারায়ণগঞ্জের খবর প্রতিবেদকঃ আবহমান বাংলার শক্তিপ্রবাহের প্রতীক মা শ্যামা- যিনি কালকে স্বরপে ধারণ করে, অশুভকে দমন করে, অজেয়কে জয় করে হয়ে উঠেছেন “কালী”- সার্বজনীন- “মাকালী”। এই জনপদে বহুরূপে বহুভাবে তিনি পূজিত হয়ে আসছেন বহুকাল ধরে। ভারতবর্ষের ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে জাত-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে নির্ভীকতার এক প্রতীক হয়ে উঠেছেন মা শ্যামা। রামপ্রসাদ থেকে শুরু করে কাজী নজরুল – শ্রীরামকৃষ্ণ থেকে স্বামী বিবেকানন্দ- অনেক মনীষীর অন্তরের অনুপ্রেরণা হয়ে কোটি মানুষের ভক্তিরসে সিক্ত হয়েছেন।
শ্যামা মা অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন স্বর্গীয় রণবীর রায় চৌধুরীর জীবনেও। আজ থেকে ৪৯ বছর আগে পারিবারিকভাবে শ্যামা মায়ের পূজা শুরু করেছিলেন তিনি। অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে, পরম মমতায়, ভক্তি ভরে আমৃত্যু তিনি মায়ের পূজা করে গেছেন। ২০০৫ সালে রণবীর রায় চৌধুরীর দেহান্তরের পর তাঁর উত্তরাধিকারেরা বাবার আকাঙ্ক্ষাকে বয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর সন্তানেরা গড়ে তুলেছেন রণবীর রায় চৌধুরী স্মৃতি সংসদ; গড়ে তুলেছেন ‘রণবন’ নামের এক ছাদবাগান ও সৃজনশীল আড্ডার কেন্দ্র। এই রণবনকে কেন্দ্র করেই ২০০৫ সাল থেকে নতুন পরিসরে বাৎসরিক এ আয়োজনটি সম্পন্ন হচ্ছে।
পারিবারিকভাবে এ পূজানুষ্ঠানটি আয়োজিত হলেও এটি নারায়ণগঞ্জসহ সারাদেশের অসংখ্য দর্শনার্থীর আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে আছে। শুরুতে এ পূজার সজ্জায় শ্যামা মায়ের প্রতিমা ঘিরে থাকতো কাহিনী নির্ভর ছোট ছোট বিভিন্ন দৃশ্য-প্রতিমা। ২০২২ সালে ৪৯তম আয়োজনে এ আয়োজনে এসেছে নতুন মাত্রা। সেইবার পূজার উৎসবকে ঘিরে ছিল নারায়ণগঞ্জ ফটোগ্রাফিক ক্লাবের সদস্যদের দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থানের ধর্মীয় সংস্কৃতি, আচার, ভক্তি এবং বিভিন্ন পূজা-পার্বণের আলোকচিত্র নিয়ে ‘অনুরক্তি’ শিরোনামে আলোকচিত্র প্রদর্শনী।
সৃষ্টিকর্তার সান্নিধ্য পাওয়ার, তাঁকে পরম ভক্তি নিবেদনের আকাঙ্ক্ষা মানুষের অনাদি কালের; জাত-বর্ণ-ভাষা বিভিন্ন হলেও আকাঙ্ক্ষার অভীষ্ট অভিন্ন- সৃষ্টিকর্তার কৃপাকাঙ্ক্ষা। সে আকারেই হোক কিংবা নিরাকার- মানুষ তাঁকে ভক্তি নিবেদন করে পরম মমতায়। তিনি বহমান থাকেন মানুষের মানবিকতায়, সৃজনশীলতা। কোন একক রূপে তিনি আবব্ধ হন না। রণবীর রায় চৌধুরীর হাত ধরে শুরু হওয়া শ্রী শ্রী শ্যামা পূজার সুবর্ণজয়ন্তী হতে যাচ্ছে এ বছর। শ্যামা মায়ের প্রতি অর্ঘ্য নিবেদনে ‘অনুরক্তি’ শিরোনামে এবারের আয়োজনে থাকছে শিল্পকর্ম প্রদর্শনী। এ প্রদর্শনীর জন্য ‘রণবন আর্ট স্পেস’ থেকে দেশবরেণ্য প্রবীণ ও খ্যাতিমান তরুণ শিল্পীদের শিল্পকর্ম দেয়ার অনুরোধ করা হয়। তাঁরা যথা সময়ে তাঁদের শিল্পকর্ম পৌঁছে দিয়ে কৃতজ্ঞতা পাশে আবদ্ধ করেছেন। সনাতন পৌরাণিক বিভিন্ন বিষয়ের সম্মিলনে বাংলাদেশের ১২জন ও ভারতের ১জন শিল্পীর শিল্পকর্ম থাকছে এ প্রদর্শনীতে।
সুবর্ণজয়ন্তীতে যাত্রারম্ভ হলো ‘রণবন আর্ট স্পেস’ এর। ভবিষ্যতে রণবন আর্ট স্পেস থেকে দেশ-বিদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের বহুমাত্রিক সম্মিলনে চিত্রকলা, স্থাপত্য, আলোকচিত্রের প্রদর্শনী করার আকাঙ্ক্ষা আছে।
রণবীর রায় চৌধুরী স্মৃতি সংসদ আয়োজিত শ্রী শ্রী শ্যামা পূজার সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠান ও রণবন আর্ট স্পেসের শিল্পকর্ম প্রদর্শনীতে আপনাদের সাদর আমন্ত্রণ। #