সেনাসদস্য শরীফ ছিলেন পরিবারের একমাত্র অবলম্বন
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে আফ্রিকায় পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে নিহত সৈনিক শরীফ হোসেন (২৬) সিরাজগঞ্জের বেলকুচির সন্তান। শরীফ পরিবারের একমাত্র অবলম্বন ছিলেন। তার মৃত্যুর খবরে বাড়িতে চলছে শোকের মাতম।শরীফ হোসেন বেলকুচি উপজেলা সদরের বেড়াখাড়ুয়া গ্রামের লেবু তালুকদারের ছেলে। মা-বাবা, দুই ভাই এক বোন ও স্ত্রীসহ পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৫।শরীফ হোসেন ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন।শরীফ বাড়িতে জানিয়েছিলেন, মিশন থেকে ফিরে ছোট বোনকে বিয়ে দিবেন। কিন্তু সে আশা তার আর পূরণ হলো না আর। শোকে স্তব্ধ শরীফের পরিবার। কাঁদতে কাঁদতে যেন চোখের পানি শুকিয়ে গেছে তার বাবা-মা, ভাইবোন ও স্ত্রীসহ স্বজনদের। এখন তারা শরীফের মরদেহের অপেক্ষায় রয়েছেন।বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) সকালে নিহত শরীফের ছোট ভাই কাউসার তালুকদার বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় আমার ভাই নিহত হয়েছে এই খবর মঙ্গলবার রাতে ঢাকা সেনানিবাস থেকে আমারদের জানানো হয়। খবরটা শুনে আমার বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। খবর শোনার পর থেকে বাড়ির সবাই কান্নাকাটি করছে। আমার বোনের বিয়ের কথা চলছে। ভাই বলেছেন, বোনের বিয়ে দিতে যত টাকা লাগে আমি দেবো। পরিবারের কারও চিন্তা করার দরকার নেই। আমি মিশন থেকে ফিরে বিয়ে দেবো। সেই ভাই আজ আমাদের মাঝে নেই। ভাই আমাদের সংসারটাও চালাতো। এখন আমাদের কী হবে।বাড়িতে গেলে দেখা যায়, ছেলের মৃত্যুতে শোকে নির্বাক হয়ে পড়েছেন তার মা পাঞ্জু আরা বেগম। কথা বলার ভাষা নেই বাবা লেবু শেখের। কাঁদতে কাঁদতে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন ভাই, বোন ও স্ত্রীসহ পরিবারের সদস্যরা। নিহত সেনা সদস্য শরীফ হোসেনের বাবা লেবু শেখ তালুকদার বলেন, আমি তাঁত শ্রমিকের কাজ করতাম। আমার স্ত্রী অন্যের বাড়ি থেকে সুতার কাজ করতো। ছেলের চাকরি হওয়ার পর থেকে আমাদের কোনো কাজ করতে দিতো না। ছেলেই সংসার চালাতো। তার চাকরির টাকা দিয়ে সংসারের সব খরচ চলছিলো। কিন্তু মিশনে যাওয়ার ৬ মাস আগে ছেলেকে বিয়ে করাই। আমার সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেলো। এত অল্প বয়সে ছেলে এভাবে চলে যাবে কোনো দিন ভাবিনি।নিহত শরীফের প্রতিবেশী পারভেজ ও হাসান শেখ বলেন, শরীফ মেধাবী ও ভালো একজন ছেলে ছিলো। সবার সঙ্গে হাসি মুখে কথা বলত। অল্প বয়সে তার মৃত্যুতে আমরা গভীর শোকাহত। আমরা ভালো একজন ছেলে হারালাম। শরীফ শুধু বেলকুচির না সারা দেশের হয়ে জীবন দিয়েছে। এটা এলাকার মানুষ হিসেবে আমাদের গর্ব।বেলকুচি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম সাজেদুল বলেন, শরীফ নিহত হওয়ার খবর শুনে আমি তাদের পরিবারের খোঁজ খবর নিয়েছি। শরীফ অত্যন্ত ভালো একটি পরিবারের ছেলে ছিলো। সে আমাদের বেলকুচির গর্ব।বেলকুচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আনিছুর রহমান বলেন, শান্তিরক্ষা মিশনে শরীফের মৃত্যুতে আমরা গভীর শোকাহত। মৃত্যুর খবর পেয়ে শরীফের বাড়িতে গিয়ে তার পরিবারকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। একমাত্র উপার্জনের ছেলেকে হারিয়ে পরিবারটি শোকে স্তব্ধ। লাশ দেশে আনাসহ সব বিষয়ে নিহতের পরিবারকে সহযোগিতা করা হবে।প্রসঙ্গত, গত (৩ অক্টোবর) সোমবার রাত ৮টার পর মধ্য আফ্রিকায় শান্তিরক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার সময় ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইসের (আইইডি) বিস্ফোরণে শরীফ হোসেনসহ (২৬) তিন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিহত হন। নিহত শান্তিরক্ষীরা হলেন, সৈনিক শরিফ হোসেন, সৈনিক জসিম উদ্দিন (৩১) ও সৈনিক
জাহাঙ্গীর আলম (২৬)।