বিরল রোগে আক্রান্ত সামিউরের সঙ্গে সহপাঠীরা মিশতে চায় না
মা সাবিনা বেগমের কোলজুড়ে আসলো প্রথম সন্তান। সবার খুশি হওয়ার কথা কিন্তু হাসি নেই কারও মুখে। ছেলে সামিউর অন্য ১০টি শিশুর চেয়ে দেখতে আলাদা।তার গায়ের রঙ গোলাপি। চুলের রঙ সোনালি। বয়স বাড়ার সঙ্গে তার সব কিছু অন্যদের চেয়ে আলাদা এবং তা স্পষ্টভাবে ফুটে উঠতে থাকে। সামিউর (১৭) এখন চোখে কম দেখে। বাইরে উন্মুক্ত স্থানে চলাফেরা করতে পারে না। সূর্যের আলোর দিকে একেবারে তাকাতে পারে না। উন্নত চিকিৎসা করালে চোখের সমস্যা অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব বলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জানিয়েছেন।সামিউর ফকিরের বাড়ি মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার বালিদিয়া ইউনিয়নের মিনা পাড়ায়। তিনি বালিদিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এ বছর মানবিক বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন। সামিউল ওই গ্রামের জিল্লির রহমান ফকিকের ছেলে।সামিউর জানায়, বুদ্ধি হওয়ার পর সে নিজেকে অন্যদের থেকে আলাদা দেখতে পায়। সহপাঠীদের অনেকে তাকে অপছন্দ করে। তুচ্ছতাচ্ছিল্যও করে। পাশে বসতে চাই না। নানা কিছু বলে ক্ষেপায়। বাইরে গেলে অনেকে নানা মন্তব্য করে। তখন মন ভীষণ খারাপ হয়ে যায়। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, তার এই চেহারা বা গায়ের রঙের জন্য যেন তিনি নিজে দায়ী।সামিউর আরও জানায়, তার এখন প্রধান সমস্যা চোখে কম দেখা। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দৃষ্টিশক্তি কমে যাচ্ছে। স্কুলের ব্লাক বোর্ডের লেখা দেখতে পায় না। পড়ালেখায় বেশ ভালো সামিউর। প্রাথমিক থেকে এসএসসির আগপর্যন্ত সব ক্লাসে ‘এ’ গ্রেডে উত্তীর্ণ হয়েছে। এক ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সে সবার বড়।আক্ষেপের সুরে সামিউর জানায়, বয়স হওয়ার পরও চোখের আইরিশ না মেলায় তিনি এবার হালনাগাদ ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারেননি। চোখের সমস্যার কারণে আইরিশ স্ক্যান করতে পারেনি। উন্নত চিকিৎসা করাতে পারলে হয়তো চোখটা আরেকটু ভালো হতো। কিন্তু দরিদ্র কৃষক বাবার পক্ষে চিকিৎসার টাকা জোগাড় করা সম্ভব হচ্ছে না।বাবা জিল্লুর রহমান ফকির বলেন, ছেলেটা সবদিকেই ভালো। শুধু তার গায়ের রঙ আলাদা। আর চোখে দেখতে কষ্ট হয়। মাত্র ২০ শতক কৃষি জমি চাষ করে কোনোমতে সংসার চলে। ছেলের চিকিৎসা করানোর সামর্থ নেই।সামিউরের সহপাঠী মিনহাজুর, শাকিল ও ফাহিম বলেন, ‘সামিউরের সঙ্গে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে তারা একসঙ্গে পড়ালেখা করছেন। প্রথম সামিউর নানা সমস্যায় পড়তো। এখন আমরা বোঝার পর আর তেমন সমস্যা হয় না। সামিউর চোখে কম দেখে, এ জন্য আমাদের দুঃখ হয়।’সামিউরের স্কুল বালিদিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মাফুজার রহমান বলেন, ‘সামিউর এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। পড়ালেখায় বেশ ভালো। সামিউরের জন্য আমরা স্কুলে শিক্ষার্থীদের কাউন্সিলিং করিয়েছি। যাতে কেউ তাকে উত্ত্যক্ত না করে। তার চোখের উন্নত চিকিৎসা করানো প্রয়োজন।’ এ জন্য তিনি সমাজের বিত্তবান মানুষের তাকে সহায়তার জন্য দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।মহম্মদপুর উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মকসেদুল মোমিন বলেন, সামিউর বিরল এলবেনিজম রোগে আক্রান্ত। এটি জন্মগত অসুখ। এই অসুখের প্রধান সমস্যা দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া ও রোদ সহ্য করতে না পারা। এই রোগ পুরো সারানো সম্ভব নয়। তবে আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে দৃষ্টিশক্তির কিছুটা উন্নতি করা সম্ভব।