নারায়ণগঞ্জ  সোমবার | ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ | ৮ই পৌষ, ১৪৩১ শীতকাল | ২০শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬

শিরোনাম
  |   বাংলাবাজারে জাকের পার্টির মিশন সভা ও জলছা মাহফিল অনুষ্ঠিত   |   আড়াইহাজার বাজারে হাত-পা বেঁধে ৪ দোকানে ডাকাতি   |   নারায়ণগঞ্জ ক্লাব নির্বাচনে জয়ি হওয়ায় ভোটারদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন হৃদয়    |   ১২ মামলার আসামী সালামের চেয়ারম্যানের ডান হাত সন্ত্রাসী সোহেল বাহিনী বেপরোয়া    |   নিহত মেধারী শিক্ষার্থী ওয়াজেদ সিমান্ত হত্যার বিচার কার্যকর ও নিরাপত্তার দাবিতে মানববন্ধন   |   জাতীয় সাংবাদিক সংস্থার কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হলেন মমিনুর রশিদ শাইন    |   জাতীয় পরিবেশ মানবাধিকার সোসাইটির শীতবস্ত্র বিতরণ | জেলার নতুন কমিটি ঘোষনা    |   পূর্বাচলের লেক থেকে অজ্ঞাত তরুণীর মরদেহ উদ্ধার   |   মহান বিজয় দিবসে রূপগঞ্জে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আলোচনা সভা   |   নারায়ণগঞ্জ ৫ আসনের সাবেক এমপি এস.এম. আকরামের মৃত্যুতে শোক ও সমবেদনা    |   তারেক জিয়া নেতৃত্বে দেশবাসীকে একটি নতুন বাংলাদেশ উপহার দিব- মুকুল   |   মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা প্রদান ও প্রীতি ফুটবল প্রতিযোগিতা    |   শহীদ বুদ্ধিজীবী  দিবসে বন্দরে বধ্যভূমিতে উপজেলা প্রশাসনের পুষ্প অর্পন    |   বিপিজেএ না’গঞ্জ কমিটির সাক্ষাৎ / অপসাংবাদিকতা পরিহারের আহবান জানালেন – হাতেম   |   লায়ন্স ক্লাব ১৮০০ মানুষকে সেলাই মেশিন, ভ্যানগাড়ি, শীতবস্ত্র, স্কুল ব্যাগ বিতরন সহ স্বাস্থ্যসেবা দিল   |   জাতীয়তাবাদী গার্মেন্টস শ্রমিকদলের নারায়ণগঞ্জ জেলা সম্মেলন অনুষ্ঠিত   |   বিএনপির ৩১ দফার সমর্থন আদায়ে সোনারগাঁওয়ে উঠান বৈঠক   |   আড়াইহাজারে ৮ কেজি গাজা সহ গ্রেফতার ২    |   রোকেয়া দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, না’গঞ্জ জেলার আলোচনা সভা   |   নারায়ণগঞ্জ ফটো জার্নালিস্টস এসোসিয়েশন নবগঠিত কমিটিকে বন্দর প্রেসক্লাবের শুভেচ্ছা
 প্রচ্ছদ   কলাম   ফিলিস্তিনে মানবিক বিপর্যয় – বিলকিস ঝর্ণা
ফিলিস্তিনে মানবিক বিপর্যয় – বিলকিস ঝর্ণা
  কলাম || নারায়ণগঞ্জেরখবর.কম
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ৯ নভেম্বর, ২০২৩
লেখক বিলকিস ঝর্ণাঃ বিশ্ববাসী হতবাক। প্রশ্ন আসে হঠাৎ ফিলিস্তিন কেন এই যুদ্ধযজ্ঞ শুরু করলো? এক বৃহত্তর বিশ্ব রাজনীতির শিকার এই যুদ্ধবিধ্বস্ত ফিলিস্তিন। সারাবিশ্বে পরোক্ষ উপনিবেশ স্থাপনকারী যুক্তরাষ্ট্র এই পরিস্থিতির সুযোগ নিতে সংঘর্ষে মদদ জোগায়। যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধাস্ত্র বিক্রির মার্কেট তাই ইউক্রেন আর ফিলিস্তিন। ইতোমধ্যে মধ্যস্থতাকারী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নৌবহর নিয়ে আসছে ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে।
যুগের পর যুগ সংকট ঝুলিয়ে রেখে সংকটের মধ্যস্থতা চলিয়ে যাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বানরের  পিঠা ভাগের এক গল্প যেন। এবারে তার ষোলোকলা পূর্ণ হলো। অথচ ফিলিস্তিনিদের ন্যায্য হিস্যা দিয়ে দিলেই সমস্যা চুকে যায়। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো স্থির সিদ্ধান্তে আসা সম্ভব হয়নি কখনও।

পৃথিবীর সকল জাতির আলাদা আলাদা রাষ্ট্র হবে এমন কোনো কথা নেই। দীর্ঘদিনের বিভিন্ন পরিস্থিতে একই ভূমিতে বসবাস করছে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল। সমগ্র ইসরায়েল, পশ্চিম তীর ও গাজা মিলে একটি দ্বি-জাতীয় রাষ্ট্র গঠিত হবে এবং সেখানে সবার সমান অধিকার থাকবে। এতে মানবিক বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন জাতির কোনো দ্বিমত পোষণ করার জায়গা নেই।

কিন্তু ইসরায়েল বহুকাল ধরে ফিলিস্তিনিদের ওপর যে ধরনের হামলা চালিয়ে আসছে তাতেও বিশ্ববাসী বরাবরই নীরব। কোনো মাথাব্যথা নেই বিশ্ববাসীর। গত দুই মাসের অধিককাল ধরে ইসরায়েলি আচরণে মনে হচ্ছিলো এরা ফিলিস্তিনিদের সব এলাকা দখল করে নিলেই সংকট চুকে যায়।

কিন্তু  স্বাধীনতাকামী ফিলিস্তিন কেন সেই হিসাব মেনে নিবে? একটা স্বাধীনতাকামী জাতিকে এত সহজে স্তব্ধ করে দেয়া যায় না। হামাস উপলব্ধি করছে পিঠ ঠেকে গেছে দেয়ালে। আর তাই অস্তিত্বের প্রশ্নে এক নজিরবিহীন হামলা চালাতে বাধ্য হয় ফিলিস্তিনের সশস্ত্রবাহিনী হামাস। হতভম্ব ইসরায়েল। হতভম্ব বিশ্ববাসী। যেন যোগ্য জবাব দিয়েছে হামাস। হয় মর না হয় মারো।

ইসরায়েলিদের বিশ্বাসে চির ধরে গেছে এই হঠাৎ হামলায়। হামাস অত্যন্ত সুচিন্তিতভাবে ‘স্মার্ট পরিকল্পনা’ ব্যবহার করেছে। অর্থাৎ এমন সময় এ হামলা চালানো হয়েছে যখন ইহুদিরা ঐতিহ্যবাহী ‘সুকোত’ উৎসব পালনে ব্যস্ত এবং হঠাৎ এই অভিযানে নড়বড়ে হয়ে পড়েছে ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা।

এবারে প্রতিশোধ নিতে নেমেছে ইসরায়েল। রীতিমতো ঘোষণা দিয়ে উপত্যকাটিতে খাবার, পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করা হচ্ছে। এতে বোমার আঘাতে বিধ্বস্ত গাজায় ভয়ানক মানবিক বিপর্যয় নেমে এসেছে। স্থল অভিযানের জন্য সেনা সমাবেশও ঘটানো হয়েছে গাজায়।

ইতোমধ্যে ইসরায়েলকে সহায়তা দেবার জন্য বিশ্বের সবচেয়ে বড় রণতরী ইউএসএস জেরার্ল্ড ফোর্ডসহ যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি যুদ্ধজাহাজ ওই অঞ্চলের দিকে যাত্রা করেছে।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, হামাসের বিরুদ্ধে ‘সর্বোচ্চ শক্তি’ প্রয়োগ করবেন তারা।  তবে এই বিষয় স্পষ্ট যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ তাদের মিত্র দেশগুলো রুশ- ইউক্রেন যুদ্ধের পরে অস্ত্র বিক্রির আরও একটি বাজার পেল। এই সংঘাত যত দীর্ঘস্থায়ী হবে ততই মার্কিনিদের লাভ। ফিলিস্তিনিরা ইসরাইলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে নিজেদের সামর্থ্যানুযায়ী পাথর মেরে প্রটেকশন দেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছিলো কেবল। অথচ সেইটুকু অজুহাতকে কেন্দ্র করে ইসরাইল তার আসল খেলা খেলে যাচ্ছে। প্রতিবাদের নামে ইসরাইল ভয়ানক সব অস্ত্র ব্যবহার করে নির্বিচারে হত্যা করে চলেছে বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের। যুদ্ধের নিয়ন্ত্রণ কেবল তাদের হাতে, যারা অস্ত্র বিক্রি করে সংঘাত টিকিয়ে রাখে। বাকিরা চিন্তক, দর্শক আর ভিক্টিম।

ইহুদি, খ্রিস্টান ও মুসলমান এই তিন ধর্মের মানুষের জন্যই এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান ফিলিস্তিন একসময়  অটোম্যান সাম্রাজ্যের অধীন ছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অটোম্যানদের পতনের পর ফিলিস্তিন দুর্ভাগ্য বশত ব্রিটেনের হাতে চলে যায়।

ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লর্ড বেলফো ১৯১৭ সালে যুদ্ধে জয়ী হওয়ার জন্য দাবার চাল হিসেবে এক ঘোষণা দেন যে, ব্রিটশরা যুদ্ধে জয়ী হলে এই ভূমিতে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হবে। যুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের থেকে সহায়তা পেতে তিনি এই প্রলোভনমূলক ঘোষণা দেন। এটিই ইতিহাসে ‘বেলফোর ঘোষণা’। কিন্তু সেই স্বাধীন রাষ্ট্র কাদের জন্য হবে সেই প্রসঙ্গ উহ্য থাকে। ইহুদিদের তুলনায় আরবিয়রা সংখ্যাগরিষ্ঠ। প্রসঙ্গ উহ্য থাকায় সংখ্যাগরিষ্ঠ স্থানীয় আরবিয়রা ঘোষণাকে তাদের অনুকূলে ধরে নেয়।

ইতিহাস ঘাঁটলে আমরা দেখতে পাই, ইহুদিরা বরাবরই মেধাসম্পন্ন জাতি। আর সেই সুযোগই নিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটেনের প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য  শক্তিশালী দুর্লভ বোমা তৈরি করেন যিনি। তিনি ইহুদি বিজ্ঞানী ড. হেইস বাইজম্যান। ফলশ্রুতিতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বাইজম্যানকে পুরস্কার দিতে চাইলে তিনি স্বজাতির জন্য ভূমি দাবি করেন। ব্রিটেন তখন ফিলিস্তিন ভূখণ্ডটি ইহুদিদের হাতে তুলে দেয়ার জন্য সম্পূর্ণ  প্রস্তুতি নেয় এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধ জয়ের পর থেকে ব্রিটেন ইহুদিদের স্বাধীনতা দেয়ার অঙ্গীকারে ১৯১৮ সাল থেকে একটানা ৩০ বছর দেশটিকে নিজেদের অধীন রাখে। মূলত এই সময়টিই ফিলিস্তিনকে আরব-শূন্য করার জন্য কাজে লাগায় ইঙ্গ-মার্কিন শক্তি।

কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পুরো ইউরোপে ব্যাপক সংখ্যায় ইহুদি নিধনের ফলে  ক্রমান্বয়ে ইহুদিরা জড়ো হতে থাকে। ১৯৪৮ সালে ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হলেও আরবদের সাথে তারা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। পরপর চারটি যুদ্ধ হয় আরব-ইসরায়েলের মধ্যে। এতে করে  ফিলিস্তিন হারাতে থাকে নিজেদের ভূখণ্ড। ফিলিস্তিনিদের অবস্থার উন্নতি হয়নি মোটেই।

১৯৯৩ সালে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের শান্তিচুক্তি হয়। এই শান্তিচুক্তি  হামাস মেনে নেয়নি। কেননা এই চুক্তিতে ইসরায়েল ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড ফেরৎ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা ছিল বরাবরের মতোই মিথ্যে প্রলোভন। ইসরাইল চেয়েছিল তার নিয়ন্ত্রণাধীন সার্বভৌমত্বহীন এক রাষ্ট্র হবে ফিলিস্তিন। বাস্তবে ঘটেছেও তাই।

২০১৭ সালে ড্রোনাল্ড ট্রাম্প ইসরায়েলে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস তেল আবিব থেকে জেরুজালেমে স্থানান্তরের ঘোষণা দিলে মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের দামামা বেজে ওঠে। পক্ষভেদে একদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল, অপরদিকে মুসলিম বিশ্ব।

বিগত ৭৫ বছর ধরে চলমান ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংকটের কোনো স্থায়ী সমাধান হয়নি অদ্যাবধি। ইসরায়েলিদের জন্য ফিলিস্তিন আক্রমণ করে ভূমি দখল করা যেন নেহাতই এক স্বাভাবিক ঘটনা। ইউক্রেনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রশ্ন তুলছে আজ জাতিসংঘ, অথচ ইসরায়েলিরা সেক্ষেত্রে শেষ ধাপে পৌঁছে গেছে। অন্যায়ের প্রতিবাদ চিরায়ত ন্যায়।

ফিলিস্তিনিদের পিঠ আজ দেয়ালে ঠেকে গেছে। ইসরায়েলের নির্যাতন অত্যাচার আজ চরম সীমায়। যুদ্ধ তাই অবশ্যম্ভাবী হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর তাই গত ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েল রাষ্ট্রে ২০ মিনিটে পাঁচ হাজার রকেট ছুড়ে বিশ্ববাসীকে হতবাক করে দেয়। আর এই হামলার কারণ উল্লেখ করে হামাস জানান, দশকের পর দশক ধরে ফিলিস্তিনিদের ওপর চালানো নৃশংসতার জবাব এই সামরিক অভিযান।

তাদের আকাঙ্ক্ষা এই প্রতিবাদের জের ধরে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় গাজায়, ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর এবং পবিত্র আল-আকসায় নৃশংসতা বন্ধে উদ্যোগ নেবে। কিন্তু দুর্বৃত্তের হিসাব মোটেই সহজ নয়। তারা সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। সুযোগের সদ্ব্যবহার করে তারা নৃশংসতা  চালায়। হামাসের অভিযানের বিরুদ্ধে গাজায় চলছে ইসরায়েলি প্রোপাগান্ডা।

হয়তো এটা দীর্ঘমেয়াদি এক যুদ্ধ। সবার জন্য যা উদ্বেগজনক। তবে প্রশ্ন থেকেই যায় এর ফলাফল কি হবে? ফলাফল যাই হোক। মানুষ হত্যা ছাড়া যুদ্ধের সমার্থক কোনো শব্দ নেই।

লেখক: আইনজীবী ও কলামিস্ট

নার্সারীতে সফলতা পেয়ে নার্সারী নুরুল ইসলাম সাত বার অর্জন করেছেন জেলা প্রশাসনের সম্মাননা পদক

ফেইসবুকে আমরা

এ সম্পর্কিত আরো খবর...

error: Content is protected !!
error: Content is protected !!