শিরোনাম
শীতে ঠান্ডা এলার্জি বাড়ার কারণ, লক্ষণ, চিকিৎসা ও প্রতিকার জানালেন চিকিৎসক
নারায়ণগঞ্জের খবর ডেস্কঃ শীতের শুষ্ক বাতাসে ডাস্ট মাইটস বা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ধুলার কণা বা পোকা বাতাসে ভেসে ভেসে বেড়ায় । ধূলিকণা ও এসব ক্ষতিকারক জীবাণু নিঃশ্বাসের সঙ্গে শরীরে প্রবেশ করে । তাই এ সময় ডাস্ট এলার্জির প্রকোপ বেড়ে যায় । এতে চুলকানি , হাঁচি , কাশি , নাক দিয়ে পানি পড়া , শ্বাসকষ্টসহ নানা ধরনের সমস্যা হতে পারে । বিরক্তিকর এ অসুখের কারণ , লক্ষণ , চিকিৎসা ও এর প্রতিকারের উপায় জানিয়ে দৈনিক কালবেলায় লিখেছেন ডা . আকিন আদনান লিখন
কেন হয় ?
পরিবারে আগে থেকে অ্যালার্জির সমস্যা থাকলে বাকি সদস্যদেরও অ্যালার্জিজনিত অসুবিধা দেখা দিতে পারে । তবে মনে রাখতে হবে এটি ছোঁয়াচে নয় । অল্পবয়স্ক শিশু , হাঁপানি রোগী এবং গর্ভবতী মহিলাদের এ ধরনের অ্যালার্জি হতে পারে । ঘাস বা ফুলের রেণু নাকে প্রবেশ করলে তা থেকেও অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন হয়। বাসাবাড়ির আর্দ্র ও ভ্যাপসা পরিবেশে ডাস্ট মাইটস বেশি হয়ে থাকে যা থেকে অ্যালার্জির সমস্যা হতে পারে ।
লক্ষণ ?
ডাস্ট অ্যালার্জির কারণে শ্বাসনালির ওপরের অংশে প্রদাহজনিত বিভিন্ন রকম শারীরিক লক্ষণ প্রকাশ পায় । এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য নাক দিয়ে পানি পড়া , বন্ধ নাক , নাকের অভ্যন্তরে জ্বালাপোড়া , অনবরত হাঁচি , চোখ চুলকানো বা লাল হয়ে যাওয়া ও চোখ থেকে ক্রমাগত পানি ঝরতে থাকা । এ ছাড়া মাথাব্যথা ও খুসখুসে কাশি থাকতে পারে । শিশুদের ক্ষেত্রে বারবার নাক ওপরের দিকে ঘষার প্রবণতাও দেখা যায় । যাদের হাঁপানির সমস্যা রয়েছে , তাদের শ্বাসকষ্টের প্রকোপ বেড়ে যাওয়া ছাড়াও আরও কিছু লক্ষণ দেখা দেয় । যেমন — শ্বাসকষ্ট , বুকে চাপ ধরা ভাব , শ্বাস ফেলার সময় বুক থেকে বাঁশির মতো বা কখনো কখনো ঘড়ঘড় শব্দ ইত্যাদি ।কাশি থাকলে রাতে ঘুমের অসুবিধা হয় কারও কারও ।
রোগ নির্ণয়…
প্রথমে ডাস্ট অ্যালার্জির সঠিক কারণ খুঁজে বের করতে হবে । এ জন্য কিছু পরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে । যেমন স্কিন অ্যালার্জি টেস্ট , ব্লাড টেস্ট ইত্যাদি । ডাস্ট অ্যালার্জির চিকিৎসায় সাধারণত অ্যান্টিহিস্টামিন ও প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ দেওয়া হয় । নাক বন্ধ থাকলে ডিকনজেসটেন্ট ড্রপ বা স্যালাইন সলিউশন ব্যবহার করতে পারেন । চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কারও কারও স্টেরয়েড স্প্রে ব্যবহার করার প্রয়োজন হতে পারে , যা নাকের ভেতরের ফোলা ভাব কমায় । তবে ওষুধের পাশাপাশি চিকিৎসার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো অ্যালার্জি উদ্রেককারী যে কোনো পরিস্থিতি এড়িয়ে চলা ।
করণীয়…
ডাস্ট অ্যালার্জির সমস্যা থাকলে ঘর থেকে বের হয়ে সবসময় মাস্ক ব্যবহারের অভ্যাস করতে হবে । বাড়ির ফার্নিচারের ধুলা নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে । প্রতিদিন ঘুম থেকে ওঠার পর এবং ঘুমানোর আগে বিছানা ভালোভাবে ঝেড়ে নিতে হবে । ঘর পরিষ্কার করার সময় নাক – মুখ যতটা সম্ভব ভালোভাবে ঢেকে নিতে হবে । প্রতিদিনের ব্যবহার্য কাপড়চোপড় , চাদর , বালিশ ইত্যাদি মাঝেমধ্যে কয়েক ঘণ্টা কড়া রোদে দিলে মাইটস তৈরি হতে পারে না । সপ্তাহে অন্তত একবার বিছানার চাদর , বালিশের কভার ধুয়ে ফেলুন । শোবার ঘরে বইয়ের তাক , ম্যাগাজিন , পুরোনো খবরের কাগজ না রাখা , কেননা এগুলোর ওপর সহজেই ধুলা জমতে পারে । বাসায় কার্পেট বা লোমশ ও পালকযুক্ত প্রাণী না রাখাই শ্রেয় , কারণ এসব প্রাণীর শরীরে অ্যালার্জি উদ্রেক করে এমন উপাদান থাকে । ঘরে যাতে আলো – বাতাস প্রবেশ করতে পারে সেই ব্যবস্থা করতে হবে এবং সেইসঙ্গে অবশ্যই প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে ।
খাবারদাবার…
চিকিৎসার পাশাপাশি খাওয়ার পাতেও রাখতে হবে এমন কিছু উপাদান , যা অ্যালার্জির সমস্যার বিরুদ্ধে শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলবে । এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য— গ্রিন টি , মসলা চা , দুগ্ধজাত পদার্থ , গরম মসলাযুক্ত খাবার ( দারুচিনি , এলাচ লবঙ্গ ) , বিভিন্ন রকম বাদাম , সবুজ ও লাল সবজি , সামুদ্রিক তেলযুক্ত মাছ , মৌসুমি টক ফলমূল ইত্যাদি । তা ছাড়া নানাভাবে কালিজিরা ও মধু সেবন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে খুব সাহায্য করবে ।
লেখকঃ অ্যানেসথেশিওলজিস্ট , বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় , ঢাকা । মেডিকেল অফিসার , গ্যাস্ট্রোএন্টারলজি ও হেপাটোবিলিয়ারি সার্জারি বিভাগ , বিআরবি হাসপাতাল , ঢাকা । #