রূপগঞ্জে দিনে ৪০ হাজার অটোরিকশায় ৩২০ মেগাওয়াট বিদুৎ খরচে ৭০ ভাগই চুরি
নিজাম উদ্দিন আহমেদ – রূপগঞ্জ প্রতিবেদকঃ বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে নানা সিদ্ধান্ত ও পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। কিন্তু ‘বিদ্যুৎ খেকো’ অটোরিকশা বন্ধ না হলে এসব গৃহীত পরিকল্পনার সুফল ভেস্তে যাবে বলে আশঙ্কা সাধারণ জনগণের। রূপগঞ্জে বিদ্যুৎ চুরির অন্যতম কারণ এসব নিষিদ্ধ ইজিবাইক, থ্রি হুইলার ও অটোরিকশা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রূপগঞ্জে অটোরিকশা রয়েছে অন্তত ৪o হাজার। আর সাধারণত একটি ইজিবাইকের জন্য চার থেকে পাঁচটি ১২ ভোল্টের ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়। আর প্রতি সেট ব্যাটারি চার্জের জন্য গড়ে ১ হাজার থেকে ১২শ ওয়াট হিসেবে অন্তত আট ইউনিট (দিনে বা রাতে কমপক্ষে ৮ ঘণ্টা) বিদ্যুৎ খরচ হয়।
সে হিসবে ৪০ হাজার অটোরিকশাতে প্রতিদিন অন্তত ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ খরচ হয়। মাসে খরচ হয় ৯,৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ অপচয় করছে এসকল অটোরিকশা ইজিবাইক। কিন্তু প্রায় ৭০ ভাগ গ্যারেজেই চুরি করে অবৈধভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে চার্জ করার ফলে প্রায় ৯,৬৯০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। সরেজমিনে রূপগঞ্জের বিভিন্ন অটোরিকশা গ্যারেজে ঘুরে জানা যায়, এই গাড়িগুলো যে গ্যারেজে রাখা হয় সে জায়গা থেকেই রাতভর একটি গাড়ির শুধুমাত্র চার্জের জন্য গ্যারেজ মালিককে ১শ থেকে ১৫০ টাকা করে দিচ্ছেন গাড়ি চালকরা।
এসব গ্যারেজে ব্যাটারি চার্জ দিতে গিয়ে অনেক বিদ্যুৎ বিল দিতে হয়। যে কারণে গ্যারেজ মালিকরা খরচ কমিয়ে বাড়তি টাকা আয়ের জন্য বিদ্যুৎ বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীদের ‘ম্যানেজ’ করে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে থাকে। এদিকে বিদ্যুতের এই চুরি বন্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সোচ্চার হয়েছে সাধারণ মানুষরাও। তাদের দাবি— যেখানে বিদ্যুতের ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে সেখানে এই যানগুলোতে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ ব্যবহার বিদ্যুতের অপচয় ছাড়া আর কিছুই না। বিদ্যুৎ বিভাগের উচিত স্পেশাল টাস্কফোর্সের মাধ্যমে এসব বিদ্যুৎ চুরি বন্ধ করা অথবা সরকারের বিশেষ প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে অটোরিকশার ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা। এসব যান চলাচলে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা ছিল আগেই। একইসঙ্গে ব্যাটারিচালিত এসব যানবাহন আমদানি ও কেনা-বেচার ক্ষেত্রেও রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। তবে দেশের বিদ্যুৎ সমস্যায় নতুন করে গলার কাঁটা হয়ে উঠেছে ‘বিদ্যুৎ খেকো’ যানগুলো। অনুসন্ধানে জানা যায়, এসব পরিবহনকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে এলাকাভিত্তিক সিন্ডিকেট। রুট পারমিটের নামে ভিন্ন কৌশলে চলছে ‘বিশেষ স্টিকারে’ টোকেন বাণিজ্য। রাস্তায় গাড়ি চলানোর জন্য থাকতে হয় এই স্টিকার। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, নামধারী সাংবাদিক, বিদ্যুৎ বিভাগের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ট্রাফিক পুলিশকে নিয়মিত মাসোহারা দিয়েই রাস্তায় চলছে এসকল নিষিদ্ধ অটোরিকশা ও ইজিবাইক।
সড়ক-মহাসড়কের জন্য নিরাপদ নয় বলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ ইজিবাইক নামে পরিচিত এসব থ্রি-হুইলারের লাইসেন্স দেয় না। এগুলোর আমদানিও নিষিদ্ধ। তবে যন্ত্রাংশ আমদানির সুযোগ কাজে লাগিয়ে দেশেই যন্ত্রাংশ সংযোজন করে এসকল ইজিবাইক বিক্রি হচ্ছে।
নিষিদ্ধ এলাকায় অবাধে ব্যাটারিচালিত যানচলাচলের বিষয়ে সচেতনমহল বলেন, ‘উচ্চ আদালতের নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও ব্যাটারিচালিত যানবাহনগুলো কেন বন্ধ করা হচ্ছে না তা আমাদের বোধগম্য হয় না। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য অনতিবিলম্বে এগুলো বন্ধ করা উচিত। তাহলে প্রতিদিন সারাদেশে অন্তত কয়েক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে।’
একই দাবি জানান গাউছিয়া এলাকার ব্যবসায়ী শহিদুল্লাহ। তিনি প্রশ্ন তুলেন, কার স্বার্থে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়ন হচ্ছে না? দেশের স্বার্থে এখনই ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেন তিনি।
রূপগঞ্জ এলাকার সচেতন নাগরিকদের উদ্যোগে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বন্ধে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হবে বলে জানা গেছে।
নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও সড়ক-মহাসড়কে ব্যাটারিচালিত এসব অবৈধ যানবাহন কীভাবে চলাচল করছে— এমন প্রশ্নের জবাবে ভুলতা হাইওয়ে ফাঁড়ির ইনচার্জ হাদিউল বলেন আমি নতুব জয়েন্ট করেছি। নিষিদ্ধ যানবাহন চলাচল বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি -২ এর জিএম রফিকুল ইসলাম বলেন,‘
কেউ যদি ব্যাটারি রিচার্জিং স্টেশন হিসেবে ডিক্লেয়ারেশন দিয়ে সংযোগ চায় সেক্ষেত্রে সংযোগ দেয়ার বৈধতা আছে। এক্ষেত্রে আলাদা ট্যারিফ নির্ধারণ করে বিদ্যুৎ বিল করা হয়। ২০২০ সালের ট্যারিফে সরকার ব্যাটারি রিচার্জিং স্টেশনের বৈধতা দিয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যেহেতু রাস্তায় ব্যাটারিচালিত যানবাহন চলাচল বন্ধ করা যাচ্ছে না সেহেতু রিচার্জিংয়ের বৈধতা না দিলে চুরি করে চালায় তার চেয়ে ভালো বৈধতা দিয়ে সরকার রাজস্ব পাচ্ছে। #